সেই উদ্ধতবক্ষ, নিবিড়শ্রোণী লাস্যময়ী, যিনি শরীরে হিল্লোল তুলিয়া নিখাদ যৌবনস্পর্ধায় গাহিয়াছিলেন, ‘পাপা, ডোন্ট প্রিচ’, তিনিই কি না ভয় পাইয়াছেন! ভয় বলিয়া ভয়! ভীতা হরিণীর ন্যায় ত্রস্ত তিনি, অর্থাৎ পপ-কিংবদন্তি ম্যাডোনা। অনুষ্ঠানের পূর্বে ও পরে নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দল সাজঘর, মঞ্চ ইত্যাদি পরীক্ষা করিতেছে। যদি তাঁহার ‘ডি এন এ’ চুরি হয়! ভক্তেরা কী না করিতে পারে! অনুরাগ প্রায়শই অন্ধ হয়, ফলে ভক্তকুলের ক্রিয়াকলাপও বিচিত্রগতি। তৎসহ, মাইকেল ক্রিকটন এবং স্পিলবার্গ-এর সৌজন্যে জানা গিয়াছে, মশার রক্তে নিহিত ‘ডি এন এ’ হইতে ডাইনোসরের দল দিব্য ধরাধামে ফিরিয়া আসিতে পারে। বিজ্ঞানীরা নাসিকাকুঞ্চন করিয়াছেন, করুন, তাহাতে কী? সভ্যতার সংকট তো গোচরে আসিল! সুতরাং, কে বলিবে, ম্যাডোনা-র আতঙ্ক নিতান্ত অমূলক! আবার, সর্বদা যে সংকটই হয়, এমন নহে। এই যে কিছুকাল পূর্বে মাধুরী দীক্ষিতের কিছু গভীর অনুরাগী অরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জের আস্ত একখানি তারকাকে নায়িকার নামাঙ্কিত করিলেন, সেই মর্মে তাঁহাকে রীতিমতো শংসাপত্রও প্রদান করা হইল, তাহার বেলা? এই প্রীতি তো আক্ষরিকই অ-পার্থিব। রসবোধসিক্তও বটে! তারকার নামে তারকার নামকরণ! ভক্তের আকর্ষণের কে কবে তল পাইয়াছে? শাহিদ কপূরের ছবি মুক্তির পরে অজস্র অনুরাগিণী চিঠি পাঠাইলেন, কয়েক জন তাঁহাকে ফোনই করিয়া ফেলিলেন। দাবিটি সরল, ছবিতে নায়িকার সহিত অত ঘনিষ্ঠ হইবার দরকার কী? অন্তরঙ্গ দৃশ্যও খুবই প্রয়োজন? বড় পর্দায় কী করিয়া দেখিব, প্রাণেশ্বর অন্য নারীর বাহুলগ্ন, এমনকী শয্যা-শায়ী! |
অনুরাগ নাকি মানসিক রোগ! হায়, পিরিতি পরমনিধি শেষে রোগের সহিত তুলনীয় হইল? বিশেষজ্ঞেরা জানাইয়াছেন, ‘অবসেসিভ লাভ’-এর চারিটি দশা। আকর্ষণ, উদ্বেগ, অত্যনুরাগ (অবসেশন) এবং ধ্বংস। মার্কিনদেশের এক যুবকের প্রীতির কেন্দ্র ছিল কল্পবিজ্ঞান-কাহিনি ‘স্টার ওয়র্স’। সেই জনপ্রিয় কাহিনিমালার কিছু চরিত্রের আদলে নির্মিত পুতুল ছিল তাঁহার প্রাণাধিক প্রিয়। একদা দাম্পত্যকলহের পরে স্ত্রী সেই খেলনা ভাঙিয়াছিলেন। উন্মত্ত যুবক পত্নীকে খুনই করিয়া বসিলেন! কিন্তু, ইহাই শেষ সত্য? শুধুই ধ্বংসাত্মক বলিয়া ইহাকে খারিজ করা হইবে? তাহা হইলে প্রেমমাধুরীর কী হইবে? ‘যাঁহা যাঁহা নেত্র পড়ে, তাঁহা কৃষ্ণ স্ফুরে’, ইহা নিছকই মানসিক রোগ? মার্কিন মুলুকের খবর, প্রেম আর কিছু নহে, মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিকের খেলা! ইহাও শুনিতে হইল? হৃদমাঝারে নহে, মগজে তাহার আসন পাতা! তাহা হইলে, মন কোথায় গেল? কে লইল? প্রশ্ন আছে, (সুনির্দিষ্ট) উত্তর মিলে না। সকলেই যে যাহার মতো করিয়া প্রেমের ছাঁচ গড়িতে ব্যস্ত। সেই কলরবের ভিতর মনে পড়ে এক তরুণীর কথা। তিনি শান্ত ভাবে প্রণয়ী-প্রদত্ত অঙ্গুরীয়টি ফিরাইয়া দিয়াছিলেন। বলিয়াছিলেন, আমাদের প্রেম থাক নিরঞ্জন, বাহিরের ছায়া তাহাতে পড়িবে না। কোথায় বাস করে এই নিরঞ্জন প্রেম? হৃদয়ে, না মস্তিষ্কে? অমিত রায় জানিতে চাহেন নাই। লাবণ্যও স্বল্পবাক। বুঝ মন যে জান সন্ধান। |