বানতলায় পরিকাঠামোগত অভাবের কারণে জমি বিক্রি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। এ বিষয়ে কোনও সংস্থা মুখ খুলতে না-চাইলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কেনা দামে জমি ছেড়ে দিতে রাজি তারা।
রাজ্যের ডাকে সাড়া দিয়ে বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রথম সারির তিনটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। দূষণ সমস্যা ও পরিকাঠামোর অভাব সামলে দেরিতে হলেও কগনিজ্যান্ট চালু করেছে ক্যাম্পাস। কিন্তু জমি কেনার পরে কাজ শুরু করতে না-পারায় বাকি দুই সংস্থা টেক মহীন্দ্রা ও আইগেট-এর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থেকেই বাদ পড়েছে বানতলা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আগ্রহী ক্রেতা পেলে জমি ছেড়ে দিতে আপত্তি করবে না সংস্থা দু’টি। |
কগনিজ্যান্টের ক্যাম্পাস। কিন্তু মিলছে না প্রতিবেশী। ফাইল চিত্র |
সেক্টর ফাইভ ও রাজারহাটে জমি দেওয়া নিয়ে জেরবার রাজ্যকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছিল বানতলার কলকাতা আই টি পার্ক। ১২০ একর জমির উপরে তৈরি এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে ১৮টি সংস্থা জমি নিয়েছিল। বাজার দরেই জমি কিনেছিল টেক মহীন্দ্রা ও পাটনি কম্পিউটার্স। পরে পাটনিকে কিনে নেয় আইগেট। একর প্রতি ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি কিনেছে সংস্থা দু’টি। তবে দূষণের তাড়নায় প্রাথমিক বিনিয়োগ করেও এখানে ব্যবসা শুরু করতে পারেনি তারা। বছর খানেক আগে দূষণ সমস্যা মিটেছে। কিন্তু তত দিনে বদলে গিয়েছে বিনিয়োগকারীর পরিকল্পনা।
সংস্থা দু’টির বর্তমান পরিকল্পনায় বানতলার স্থান নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ এতটাই তলানিতে এসে ঠেকেছে যে, নিজেদের জমি বিক্রি করে দিতেও অরাজি নয় তারা। ১২ একর জমিতে ২০০৯ সালেই ক্যাম্পাস শুরু করে দেওয়ার কথা ছিল টেক মহীন্দ্রার। প্রায় ৩,০০০ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করার কথা ছিল। নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু দূষণের ফলে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, নির্মাণ কাজ মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচও হয়ে গিয়েছে।
এর পরে সত্যম কম্পিউটারকে হাতে নেওয়ায় টেক মহীন্দ্রার নজর অন্য দিকে ঘুরে যায়। চলতি বছরের মার্চে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সংস্থার প্রেসিডেন্ট এল রবিচন্দ্রন জানান, বানতলা নিয়ে আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই। সংস্থা সূত্রে ইঙ্গিত, দূষণ সমস্যা তৈরি না-হলে প্রকল্প শুরু হত আগেই। এখন সমস্যা মিটলেও প্রকল্প নিয়ে আর ভাবনা-চিন্তা করছে না সংস্থা।
একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আইগেট-এর ক্ষেত্রেও। ২০১১-এ পাটনিকে কেনে আইগেট। প্রায় ৭৮ কোটি ডলারের সংস্থার ব্যবসায়িক মানচিত্রে এখন বেঙ্গালুরু, পুণে ও নয়া মুম্বইয়ের গুরুত্ব বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সংস্থার সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় আপাতত ঠাঁই নেই কলকাতার। ১৪ একর জমি কিনেছিল তারা। এখনও পর্যন্ত সেই জমিতে কোনও কাজ হয়নি।
সম্প্রতি বাসন্তী হাইওয়েতে কগনিজ্যান্টের বাস দুর্ঘটনায় ফের উঠে এসেছে বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের পরিকাঠামোগত অভাবের প্রসঙ্গ। আর সেই অভাব যে লগ্নিকেও থমকে দিচ্ছে, তা টেক মহীন্দ্রা ও আইগেট-এর উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট। |