গত ২৪ জুন শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সন্ধ্যা। আয়োজক ‘অর্গানাইজেশন অফ ইউনিভার্সাল মিউজিক’ সংক্ষেপে ‘ওইম’। ভারতীয় সনাতন সঙ্গীতের প্রচার এবং জনমানসে ওই ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নবগঠিত সংস্থাটি কাজ করে চলেছে। শৈশব না কাটলেও সংস্থার সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফসল দীনবন্ধু মঞ্চের অনুষ্ঠান। এ দিনের অনুষ্ঠানের সূচনায় সংস্থার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে শ্রোতাদের অবহিত করা হয়। এর পরে সম্ভাবনাময় শিল্পী পল্লবী রুদ্র পরিবেশন করেন রাগ বেহাগ। শিল্পী তাঁর নিজের মিষ্টি স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুললিত কণ্ঠে ফুটিয়ে তোলেন বেহাগের বিরহিনী রূপ। পরিবেশন করেন দাদরা ও ভজন। তাঁকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন পিন্টু গোস্বামী এবং তবলায় সুবীর অধিকারী। রাগ সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ শিল্পীর ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও বর্ণময় করে তুলবে এমনটাই আশা ব্যক্ত করেন মুগ্ধ শ্রোতারা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় শিল্পী ছিলেন কলকাতার অনিন্দ্যকুমার ভট্টাচার্য। পন্ডিত শ্রীকান্ত বাক্রের ওই শিষ্য আমীরখানী ঘরানায় পরিবেশন করেন খেয়াল। রাগ ইমন ঘরানায় বিস্তার। জটিল অথচ মন ছুঁয়ে যাওয়া সরগম তানের বিহারে ইমন বুঝি মেলে দেয় আঁচল, সুরের নির্ঝরে। ঝাঁপ তালে নিবন্ধ বন্দিশের পরে দ্রুত একতালে শেষ করলেন রাগের পরিক্রমা। এর পরে পরিবেশন করেন ‘পটদীপ’ রাগে আদ্ধা ও ত্রিতালে নিবন্ধ বন্দিশ। শেষে ওই রাগে দ্রুত একতালে তারানা। সন্ধ্যা প্রদীপ হাতে পটদীপ পায় তার রূপ। শিল্পীর চিন্তনে ও রেওয়াজি কন্ঠের দক্ষতায় অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। শিল্পীকে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন মালবিকা চক্রবর্তী, তানপুরায় রূপলেখা চট্টোপাধ্যায়, তবলায় সুবীর অধিকারী। অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী ছিলেন সেতারে দেবপ্রতিম রায়। শহরের পরিচিত ওই শিল্পী বর্ষা রাগের ডালি নিয়ে হাজির ছিলেন। প্রথমে তিনি পরিবেশন করেন ‘মিয়াঁ কী মল্লার’ রাগে আলাপ। উভয় নিষাদের সুনিপুণ প্রয়োগ এবং সারা ও কানাড়ার আবেশময় মেলবন্ধনে ক্ষণিকের মধ্যে শোনা গেল কবিগুরুর ‘ঝর ঝর বরিষে বারিধারা’। পরবর্তী নিবেদন ছিল রূপক ও ত্রিতালে নিবন্ধ রাগ ‘মেঘ’। রকমারি ছন্দ, লয় এবং তেহাইয়ের প্রাচুর্যে ভরপুর ছিল ওই পর্ব। শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেন সুবীর ঠাকুর। এর পরে ছোট দুটি রচনা ‘মিশ্র মান্ড’ এবং মিশ্র খাম্বাজ’ পরিবেশিত হয়। মান্ডের বিস্তারের সঙ্গে ভেসে আসে ‘এ শুধু গানের দিন/এ লগন গান শোনাবার’। মিশ্র খাম্বাজের বন্দিশটি কবিগুরুর ‘মনে রবে কিনা রবে আমারে’ গান আশ্রয় করে তৈরি। খাম্বাজের সঙ্গে পীলুর চকিত মিলন বিরহের সূচনা করে। বৃষ্টি স্নাত রাত এগিয়ে চলে। তবু শ্রোতাদের অনুরোধের শেষ নেই। শিল্পীকে শোনাতে হয় রাগ ‘জয়জয়ন্তী’।জনপ্রিয় গানের সুরের প্রয়োগে শ্রোতাদের মনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দূরত্ব কমানো ছিল চেষ্টা ওউমের এ দিনের অনুষ্ঠান। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মুক্তি চন্দ এবং অমিতাভ ঘোষ।
|
১৯ মে জলপাইগুড়ি বাবুপাড়া পাঠাগার দ্বিতলে ‘তিস্তা নন্দিনীর’ তরফে ১৯৬১ সালের ভাষা শহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান হয়। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বরাক তীরের শিলচর স্টেশনে একাদশ শহিদের স্মৃতিতে ১১টি মোম জ্বালিয়ে শ্বেত ও লাল রঙের পুষ্পস্তবক দেন বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানে সীমা চৌধুরী উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, আল মাহমুদ, শামসুর রহমানের কবিতা পাঠ করেন অনীতা কর্মকার, মহুয়া চক্রবর্তী প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন শুভ্রজিৎ পোদ্দার, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ‘কত মানুষের স্বপ্নে গড়া দেশ’ গানে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। ২৬ মে জলপাইগুড়ি সুভাষ ভবনে অনুষ্ঠিত হল ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠান। আয়োজক আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ‘নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের’ জলপাইগুড়ি শাখা ‘তিস্তা নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র’। কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে এ দিন বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হয় সংস্থার সদস্যদের ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জ্যোৎস্নেন্দু চক্রবর্তী। প্রধান অতিথি ছিলেন উমেশ শর্মা। এ দিন ‘তিস্তা নন্দিনী’ সাহিত্য পত্রের দশম সংখ্যা ‘কবি প্রণামের’ মোড়ক উন্মোচন হয়। সেই সঙ্গে সংস্থার সহ সভাপতি কবিতা পালের গদ্য সংগ্রহ ‘আমার কথা আমার লেখা’ গ্রন্থ ও সম্পাদক তনুশ্রী পালের ছোট গল্প সংকলনের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ফুলেশ্বরী নন্দিনীর সম্পাদক ও সদস্যরা। নন্দিনী পরিবারের রীতি মেনে সাহিত্যচর্চা ও সাংগঠনিক কাজে নিষ্ঠার জন্য এ বছর ‘শ্রেষ্ঠ নন্দিনী পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে তিন জনকে। সামাজিক কাজে বিশেষ অবদানের জন্য এক জনকে নন্দিনী সম্মান প্রদান করা হয়। সার্ক সভাপতি বিশিষ্ট কবি ও পরিবেশবিদ সরোজ চৌধুরীকে সংবর্ধনা জানানো হয়।
|
জলপাইগুড়ি ‘কলাকুশলী’র উদ্যোগে রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত হল স্কুল ভিত্তিক নাট্যোৎসব-২০১২। গত ৭ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ওই উৎসব চলে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ১৪টি স্কুলের পড়ুয়ারা অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে। অরবিন্দ মাধ্যমিকের ‘তোতা কাহিনি’, জলপাইগুড়ি সেন্ট পলস স্কুলের ইংরেজি নাটক ‘স্যাকরিফাইস’, মুন্নাস হ্যাপি হোমের ‘শত্রু কে’, সেন্ট্রাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ‘জয় বাবা হনুনাথ’, জলপাইগুড়ি হাইস্কুলের ‘রাজা ও রাজদ্রোহী’ দর্শকদের মন জয় করে। রেখাপাত করেছে কামাখ্যাগুড়ি জুনিয়র হাই স্কুলের ‘বীরাঙ্গনা’, কুমদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ‘তিলোত্তমা’, কোচবিহার সদর গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ‘অথঃ চোর নামা’, জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ‘রাজদর্প’, আশালতা বসু বিদ্যালয়ের ‘আদাব’। উৎসবের উদ্বোধন করেন ইন্দিরা সেনগুপ্ত এবং শেখর মজুমদার। কলাকুশলীর এই নাট্যোৎসব ১৪ বছর ধরে চলছে। |