|
|
|
|
পূর্বে ‘সহায়’ প্রকল্পে উপভোক্তা মাত্র ৮২৩ |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
প্রায় ৫০ লক্ষ বাসিন্দার ৪০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নীচে। তবুও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪০টি পঞ্চায়েতের মাত্র ৮২৩ জন সুবিধা পাচ্ছে ‘সহায়’ প্রকল্পের। বছর দু’য়েক আগে জেলায় এই প্রকল্প চালু হয়েছিল যখন, তখন কিন্তু উপভোক্তার তালিকাটা ছিল যথেষ্ট দীর্ঘ। পরবর্তী কালে নানা কারণে সেই তালিকা ক্রমশ ছোট হয়েছে। কোথাও উদ্যোগী হয়নি পঞ্চায়েত। কোথাও বিপিএল তালিকা নিয়ে বেধেছে সমস্যা। মাত্র ২০ টাকায় দু’বেলার খাবারের সংস্থান না হওয়ায় কোথাও আবার বন্ধই হয়ে গিয়েছে এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে জেলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘সহায়’ প্রকল্প। বিরোধী সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উদ্যোগ ও সমন্বয়ের অভাবেই এই দশা। আড়ালে সেই কথা মানতে আপত্তি নেই জেলার তৃণমূল নেতাদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পেই ব্যস্ত জনপ্রতিনিধিরা। দুঃস্থ-অসহায়দের কথা ভাবার সময় নেই তাঁদের।”
গ্রামীণ এলাকায় দুঃস্থ ও সহায়-সম্বলহীন মানুষদের খাবার, পোশাক ও বাড়ি তৈরির জন্য সহায়তা করতে ‘সহায়’ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। এই প্রকল্পে সহায়-সম্বলহীন পরিবারের সদস্যের রান্না করা খাবার দেওয়ার জন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়। প্রধানত স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের ‘সহায় বন্ধু’ হিসাবে নিয়োগ করে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দু’বার খাওয়ার জন্য মাথা পিছু ২০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। চলতি বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিভিন্ন কাজের যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, তাতে জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৫২৩টি পরিবারের মোট ৮২৩ জন সহায় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ জেলার ১৮৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুঃস্থ সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলি এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবার ওই ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি পঞ্চায়েতে মাত্র ১ জন করে এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির অধীন খারুই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে মাত্র একজন ‘সহায়’ প্রকল্পে সুবিধা পাচ্ছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বামদেব গুছাইত বলেন, “২০০৫ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তৈরি ত্রুটিপূর্ণ বিপিএল তালিকায় নাম না থাকার কারণেই এখন প্রকৃত দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন অনেক পরিবারকে এই প্রকল্পের সুবিধা দিতে পারছি না আমরা।”
আবার কোলাঘাট ব্লকের ভোগপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭ হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ১ জন সহায় প্রকল্পে সুবিধা পাচ্ছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুকুমার সাউ বলেন, “২০১০ সালের অগস্ট মাসে ওই প্রকল্পের শুরুতে আমরা ৪ জন সহায়-সম্বলহীন মানুষকে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করছিলাম। ‘সহায়’ প্রকল্পে দিনে দু’বার খাওয়ার জন্যে মাত্র ২০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ওই টাকায় ভাল মানের খাবার দেওয়া অসম্ভব। তাই লোকের আগ্রহ নেই। এখন কেবল এক জন ওই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছে।” সুকুমারবাবুর দাবি, “সহায় সম্বলহীন পরিবার খুঁজতে আমরা নানা সময় এলাকায় মাইক প্রচার করেছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।” সহায় প্রকল্পে এক জনও সুবিধা পায়নি এমন পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে রয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির বল্লুক-১ গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপ-প্রধান শরৎ মেটিয়া আবার বলেন, “সহায় প্রকল্পের আওতায় ২০ জন বাসিন্দাকে দু’মাস ধরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এলাকায় সহায়-সম্বলহীন মানুষ নেই এটা ঠিক নয়।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা এই পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়ে বলেন, “প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কিছু সংখ্যক সহায়-সম্বলহীন মানুষ আছেই। সরকারি ভাবে তাঁরা এই প্রকল্পের সাহায্য পাওয়ার যোগ্যও হয়তো। কিন্তু স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে এই প্রকল্পে তাঁদের অর্ন্তভুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে অন্য সরকারি প্রকল্পে যাতে তাঁরা সহায়তা পান সে দিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|