|
|
|
|
খড়্গপুর পুরসভা |
বরাদ্দে বৈষম্য, সরব সিপিএম ও কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
উন্নয়নের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা দলবাজি করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাদের বক্তব্য, যে সব ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ বেশি বরাদ্দ হচ্ছে। অথচ, বিরোধীদের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএম কাউন্সিলর অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “এ ভাবে উন্নয়নের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দলবাজি করা উচিত নয়। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ সমান ভাবেই বন্টন করা উচিত। পুর-কর্তৃপক্ষের কাছেও আমরা এই আবেদন রেখেছি।” একই অভিযোগ তুলে পুরসভার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস। খড়্গপুরের পুরপ্রধান জহরলাল পাল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “উন্নয়নের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দলবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ কাজ বরং আগের পুরবোর্ডই করেছে।”
খড়্গপুর পুরসভায় কংগ্রেস-তৃণমূলের টক্কর লেগেই রয়েছে। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দলবাজির অভিযোগ নিয়ে সেই টক্কর আরও গতি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এমকেডিএ) বরাদ্দ অর্থকেই হাতিয়ার করেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, এমকেডিএ বেছে বেছে তৃণমূলের দখলে থাকা কয়েকটি ওয়ার্ডের জন্যই অর্থ বরাদ্দ করেছে। এ ক্ষেত্রে কোথায় কত জনসংখ্যা, কোথায় কোন কাজটা করার জরুরি, সে সব কিছু দেখা হয়নি। জানা গিয়েছে, এমকেডিএ থেকে খড়্গপুর পুর-এলাকার জন্য ৭৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১, ২, ৫, ৬, ২৪, ২৯, ৩১, ৩৪ এই ৬টি ওয়ার্ডের জন্য ৬ লক্ষ টাকা করে মোট ৪৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অন্যদিকে, ৩৩ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য সাড়ে ১২.৫ লক্ষ করে মোট ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই ১০টি ওয়ার্ডই তৃণমূলের দখলে। এমকেডিএ’র চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি। বিরোধী দলনেতা বলেন, “বেছে বেছে নির্দিষ্ট কোনও ওয়ার্ডের জন্য অর্থ বরাদ্দ না করে এমকেডিএ’র উচিত কেন্দ্রীয় ভাবে কোনও কাজ করা। যাতে শহরবাসী উপকৃত হন। শহরের মালঞ্চ রোড থেকে নিমপুরা পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। এমকেডিএ যদি এই রাস্তাটি সংস্কার বা নতুন করে তৈরির ব্যবস্থা করত, তাহলে ভাল হত।” পুরসভা সূত্রে খবর, গত দু’বছরে শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এটি তৃণমূলের দখলে রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে এখানে সব মিলিয়ে ৬৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বিরোধী দলনেতার ওয়ার্ডে (১২ নম্বর) বরাদ্দ হয়েছে ৬০ লক্ষ ১ হাজার টাকা।
বিরোধীদের অভিযোগের পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। প্রাক্তন পুরপ্রধান, কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তৃণমূলের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলির ক্ষেত্রে উদারতা দেখানো হয়েছে। এটা উচিত নয়।” তবে দলবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে পুরপ্রধানের বক্তব্য, “শুধু অভিযোগ করার জন্যই এ সব কথা বলা হচ্ছে।” কয়েক দিন আগে, গত ১৮ জুন খড়্গপুরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি হয়েছে। এই উপলক্ষে শহর যুব-তৃণমূলের এক কর্মসূচীতে দলের ১৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ৭ জন কাউন্সিলর যোগ দেন। এরফলে তৃণমূলের অন্দরের ‘মতানৈক্য’ প্রকাশ্যে এসেছে বলেই মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। বর্ষপূর্তি ‘উৎসবে’ দলীয় কাউন্সিলরদের এই অনুপস্থিতি ঘিরে দলের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে। রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১৫টি ওয়ার্ড। কংগ্রেসের ১৪টি। সিপিএমের ৩টি। সিপিআইয়ের ৩টি। বিজেপি’র একটি। বাকি একটি আসন নির্দল প্রার্থীর দখলে রয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চেয়ে ইতিমধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন কংগ্রেস কাউন্সিলররা। শুরু হয়েছে অনাস্থা নিয়ে জল্পনা। পরিস্থিতি বুঝেই অর্থ বরাদ্দের মতো ইস্যু নিয়ে দলবাজির অভিযোগ তুলে পুরবোর্ডকে ‘চাপে’ রাখার চেষ্টা করছে বিরোধীরা বলে মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। |
|
|
|
|
|