রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটাভুটি যে অনিবার্য হয়ে উঠছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। আগামিকাল ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ শুরু হতে চলেছে সেই লড়াই।
এক দিকে, ইউপিএ-র প্রার্থী হিসেবে কাল মনোনয়নপত্র জমা দেবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। আবার এনডিএ-সমর্থিত বিজেডি-এডিএমকে-র প্রার্থী পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমাও মনোনয়ন জমা দেবেন। সংসদ ভবনে মনোনয়নপত্র পেশের সেই পর্ব ঘিরে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে দুই শিবিরে।
দুই শিবিরই জোর চেষ্টা চালাচ্ছে, মনোনয়ন পেশের সময়ে প্রথম সারির যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক নেতাকে হাজির করাতে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রণববাবুর মনোনয়ন পেশের সময়ে সনিয়া গাঁধী, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি ছাড়াও টি আর বালু, শরদ পওয়ার, ফারুক আবদুল্লা, ই আহমেদের মতো সব শরিক নেতাই উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন লালু প্রসাদ, মুলায়ম সিংহ, রামবিলাস পাসোয়ান এবং বসপা নেতা সতীশ মিশ্রের মতো ইউপিএ-র সমর্থক দলের নেতারা। এমনকী জেডিইউ নেতা শরদ যাদবকেও কাল উপস্থিত করানোর চেষ্টা হচ্ছে (রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবুকে সমর্থনের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল এনডিএ-র দুই শরিক জেডিইউ এবং শিবসেনা)। একমাত্র তৃণমূলেরই কেউই থাকবেন না ওই সময়। |
এনডিএ শিবিরেও জোর তৎপরতা। বিজেপি সূত্র বলছে, কাল সাংমার মনোনয়ন পেশের সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ীরা তো থাকবেনই, এর পাশাপাশি এই মুহূর্তে দিল্লিতে থাকা বিজেপির প্রথম সারির সমস্ত নেতাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। থাকবেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, অন্যতম প্রস্তাবক নবীন পট্টনায়ক। অসুস্থ জয়ললিতা থাকতে না পারলেও তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা থাকবেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলকে আনার চেষ্টা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর আসা নিয়ে যদিও সংশয় রয়েছে। সাংমা যে হেতু আদিবাসী খ্রিস্টান নেতা, তাই এই বিষয়টির উপরে প্রচারে যথেষ্ট জোর দিতে চাইছে বিজেপি। চেষ্টা হচ্ছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়ের বেশ কিছু আদিবাসী নেতাকে হাজির করার। বস্তুত, জেডিইউ-শিবসেনা প্রণববাবুকে সমর্থনের পথে হাঁটায় বিজেপি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের এখনও আশা, রাষ্ট্রপতি ভোট মিটে গেলে শরিকরা তাদের পাশেই থাকবে।
প্রণববাবু নিজে অবশ্য আজ সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণস্বামীকে নিয়ে জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের বাড়ি গিয়েছিলেন। প্রণববাবুর প্রস্তাবক হিসাবে মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর করে শরদ যাদব বলেছেন, “এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমি গর্বিত।”
আজ মুলায়ম সিংহের সঙ্গেও দেখা করেন প্রণববাবু। প্রস্তাবক হিসাবে স্বাক্ষর করেছেন তিনিও। তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, শিবসেনা পাশে থাকলেও তাদের কোনও নেতাকে প্রস্তাবক হিসাবে সই করাতে চায়নি কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় প্রস্তাবক ও প্রস্তাবের সমর্থক হিসেবে অন্তত ৫০ জন করে সাংসদ বা বিধায়কের স্বাক্ষর প্রয়োজন। প্রণববাবুর ক্ষেত্রে সংখ্যাটা পঞ্চাশ ছাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের নেতারাও ওই তালিকায় রয়েছেন। মনোনয়ন পত্রের চারটি সেট তৈরি করা হয়েছে। লড়াই শুরুর আগে থেকেই প্রণববাবুর অঙ্কের হিসেবে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও কংগ্রেস কোনও ঢিলেমি করতে নারাজ। বরং তাদের লক্ষ্য, জয়ের ব্যবধান যথাসম্ভব বাড়ানো। এ ব্যাপারে প্রণববাবু নিজেও সক্রিয়। আজও তিনি আহমেদ পটেল, জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেসের ওয়ার রুমে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ৩০ জুন চেন্নাই থেকে তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু। প্রচারের জন্য ১২ জন নেতাকে নিয়ে একটি কমিটিও গড়েছে কংগ্রেস।
বিজেপির তরফে গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে সুষমা স্বরাজের দফতর। সাংমা বিজেপির নিজের প্রার্থী না হলেও দল একটি প্রচার কমিটি তৈরি করছে। সামনের সপ্তাহে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ও পদাধিকারীদের বৈঠক ডেকে প্রচারের কৌশল চূড়ান্ত করা হবে। মূল লক্ষ্য অবশ্যই সাংমাকে তুলে ধরে প্রচারের মাধ্যমে লোকসভার মহড়া দেওয়া। সাংমার পাশে দাঁড়ালে আদিবাসীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের মন জয়ের পথেও এগোনো যাবে বলে মনে করছে বিজেপি। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর-পূর্বের বহু অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সাংমাকেই সমর্থন করতে পারেন। বস্তুত, মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা অরবিন্দ নেতাম সাংমাকে সমর্থনের কথা বলেছেন। কাজেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আদিবাসী-তাস বিজেপির বড় অস্ত্র হতে চলেছে। এক দিকে আদিবাসী তথা পাহাড়ি আবেগ জয়, অন্য দিকে নবীন-জয়ললিতার সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা সাংমার পাশে দাঁড়িয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে বিজেপি। আর তাই সাংমার মনোনয়ন ঘিরে আগামিকাল এক নতুন অক্ষের প্রতিফলন ঘটাতে চায় তারা। |