বিয়ে রুখতে ছাদনাতলায় ‘স্ত্রী’, লকআপে স্বামী
ঠিক সিনেমায় যেমন হয়!
বিয়ের মণ্ডপে অবিকল সেই অমোঘ সংলাপ, “ঠেহরো! ইয়ে শাদি নেহি হো সকতি!”
বুধবার রাত সাড়ে আটটায় সত্যিকার সিনেমারই সাক্ষী থেকে গেল স্বভূমি-র ছাদনাতলা। বিয়ের আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম তখন সবে শেষ হয়েছে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন নবদম্পতি। হঠাৎ বিবাহবাসরে হাজির দুই মহিলা। তাদের মধ্যে কমবয়সী যিনি, তাঁকে সামনে এগিয়ে দিয়ে বয়স্কা কণ্ঠ বলে উঠল, “এ বিয়ে হতে পারে না। এই মেয়েটির সঙ্গে আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে ছেলের।” পরে পাত্র ও পাত্রের বাবাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
কমবয়সী এই মেয়েটির নাম পূজা কৌর, বয়স্কা মহিলা মানবাধিকার কর্মী কবিতা গুপ্ত। পূজার অভিযোগ, বরবেশী রাজেশ গিরি নামে ওই যুবকের সঙ্গে ২০১০ সালে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে তাঁর। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করছেন রাজেশ। পূজার আরও দাবি, তিনি তিন-তিনটি থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে সাহায্য করেনি। এ দিন সকালে পূজা মানবাধিকার কর্মী কবিতার সঙ্গে লালবাজারে ‘উইমেন্স গ্রিভান্স সেল’-এও গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সন্ধেবেলা তাঁরা দু’জনে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সোজা বিবাহবাসরে হাজির হন।
রাজেশের ‘দ্বিতীয় বিয়ে’। বুধবার স্বভূমিতে।
স্বভূমিতে তখন বিয়েবাড়ির জমজমাট আবহ। রীতিমতো ক্রেনওয়ালা ক্যামেরায় নবদম্পতির ছবি উঠছে, উড়ছে রঙিন কাগজের ফুলঝুরি। জোর ভল্যুমে গান বাজছে, খাওয়াদাওয়া চলছে। তার মধ্যেই সাদা সালোয়ার-কামিজ পরা পূজার হাত ধরে কবিতার প্রবেশ। হাঁক দিয়ে রাজেশকে মঞ্চ থেকে নেমে আসতে বলেন তিনি। আচমকা এমন হট্টগোলে হকচকিয়ে যান রাজেশের পরিবার ও নিমন্ত্রিতরা। “ক্যায়া হুয়া, ক্যায়া হুয়া” বলতে বলতে কনেকে নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান রাজেশ। পূজাকে নিয়ে তখন সেই মঞ্চের উপরেই উঠে পড়েন কবিতা। পূজা-রাজেশের বিয়ের প্রমাণপত্রের ফটোকপি তুলে ধরে দেখাতে থাকেন অভ্যাগতদের। বরের আত্মীয়দের একাংশ রে রে করে তেড়ে যান দুই মহিলার দিকে। মঞ্চ থেকে টেনে নামিয়ে মারধর করে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়। চিত্রসাংবাদিকরাও নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। ডিসি (ইএসডি) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজেশ, তাঁর বাবা ও তাঁদের তিন সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফুলবাগান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
বিয়েবাড়ি তত ক্ষণে ভেঙে ছত্রখান। অভ্যাগতরা ফিরে গিয়েছেন। স্বভূমিতে মোতায়েন হয়েছে পুলিশ। রাজেশের সদ্যবিবাহিত স্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের লোকজন এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত। মেয়ের ঠাকুর্দা সাধন গিরি জানান, দু’মাস আগে পুরোহিতের মাধ্যমে বিয়েটা ঠিক হয়েছিল। রাজেশ বিয়ের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়ো করছিলেন বলেও তাঁর দাবি। এ দিনের সন্ধের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই থতিয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। সাধনবাবু বলেন, “ছেলের বিরুদ্ধে আমরাও পুলিশে যাব কি না, সেটা মেয়ের বাবাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
রাজেশের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ পূজার? পাঁচ বছর ধরে মেলামেশার পরে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল রাজেশের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। “উত্তর কলকাতার এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজেশ বাড়িতে এই বিয়ের কথা জানাননি।” পূজার বাড়ি গিরিশ পার্ক এলাকায়। রাজেশ গিরির বাড়ি চিৎপুর থানা এলাকার কাশীপুর রোডে। রাজেশদের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। বিয়ের পরে তাঁরা একসঙ্গে কিছু দিন নৈনিতালে কাটিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন পূজা।
পূজা জানান, নৈনিতাল থেকে কলকাতায় ফিরে তাঁরা দু’জনে নিজেদের বাড়িতে চলে যান। তবে ফোনে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। পূজার অভিযোগ, এর পর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ের কথা বললে রাজেশ বেঁকে বসেন। বাড়ির লোকেরা তাঁর বিয়ে অন্যত্র ঠিক করেছেন বলে পূজাকে জানান রাজেশ। পূজার দাবি, তিনি রাজেশকে ওই বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি জানতে পারেন, বুধবার স্বভূমিতে রাজেশ বিয়ে করবেন। এর পরে তিনি আর রাজেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে পূজার দাবি।
আসরে হাজির ‘স্ত্রী’ পূজা ও মানবাধিকার কর্মী কবিতা গুপ্ত।
পূজা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি তাঁর পরিবারের লোকেদের নিয়ে রাজেশের বাড়িতে যান। সেখানে তাঁকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হয় বলে তাঁর অভিযোগ। এই ঘটনার পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন পূজা। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার রাতেই আমি চিৎপুর থানায় (রাজেশের বাড়ি যে এলাকায়) যাই। সেখানে রাজেশ ও তাঁর বাবাকে ডাকা হয়। আমি আমাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখাই।” পূজার অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তার পরে তিনি যান আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা (ওই এলাকায় তাঁদের রেজিস্ট্রি হয়েছিল) এবং গিরিশ পার্ক থানায়। পূজার অভিযোগ, সেখানেও তাঁদের সাহায্য করা হয়নি। পুলিশের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, থানায় নিজের বিয়ের সার্টিফিকেট দাখিল করেননি পূজা।
পূজা কিন্তু হাল ছাড়েননি। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মানবাধিকার কর্মী কবিতা গুপ্তকে নিয়ে তিনি লালবাজারে ‘উইমেন্স গ্রিভান্স সেল’-এ যান। সেখান থেকে তাঁদের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন)-এর সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। কিন্তু যুগ্ম কমিশনারের দেখা পেতে বিকেল গড়িয়ে যায়। যুগ্ম কমিশনার পল্লবকান্তি ঘোষ পরে বলেন, “অভিযোগকারিণী ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন। তাঁকে বধূ-নির্যাতনের মামলা রুজু করতে বলা হয়েছে।” তিন তিনটি থানায় যাওয়ার পর কেন পূজাকে লালবাজারে ছুটে আসতে হল? পল্লববাবু বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে ওই মহিলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ এ দিন পূজার সঙ্গে স্বভূমিতে গেল না কেন? পুলিশের কর্তারা বলছেন, বিয়ের সার্টিফিকেট আসল কি না যাচাই না করে বিয়েবাড়িতে হানা দেওয়ার ঝুঁকি নেননি তাঁরা।

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.