|
|
|
|
‘অর্থমন্ত্রী’ মনমোহন |
হাল ফেরাতে সাহসী হওয়ার বার্তা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আবার ‘অর্থমন্ত্রী’ মনমোহন সিংহ। এবং এমন একটা সময়ে তিনি দায়িত্ব নিলেন, যখন দেশের অর্থনীতির হাল সেই ১৯৯১ সালের মতোই নড়বড়ে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় তিনি যে ফের সেঞ্চুরি হাঁকাতে চাইছেন, প্রথম দিনেই সেটা বুঝিয়ে দিলেন মনমোহন। অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই নর্থ ব্লকের আমলা ও উপদেষ্টাদের স্পষ্ট বার্তা দিলেন, হতাশার পরিবেশ কাটিয়ে অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করে তুলতে হবে। তাঁর ভাষায়, দেশের অর্থনীতির ‘আগ্রাসী মনোভাব’ ফের জাগিয়ে তুলতে হবে। সকলের আগে নজর দিতে হবে দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরানোর দিকে।
এ বারের এই ‘কঠিন’ পরিস্থিতি কী ভাবে মোকাবিলা করবেন মনমোহন?
প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের কথা থেকেই স্পষ্ট, তিনি কিছু ক্ষেত্রে ‘সাহসী’ পদক্ষেপ করতে চাইছেন। সে জন্য ‘অভ্যন্তরীণ’ সমস্যা মোকাবিলাতেও তিনি প্রস্তুত। মনমোহন বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সমস্যার মতো আমাদের সামনে কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যাও রয়েছে। দ্রুত সেই সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে হবে।” অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে ‘কিছু করে দেখাতে’ হলে মনমোহনের হাতে সময় কম। কারণ, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে আগামী বছর কেন্দ্রকে জনমুখী বাজেটের পথে হাঁটতে হবে। তার আগে দ্রুত সাহসী
|
সম্ভাব্য অর্থসচিব
সুমিত বসু |
|
অর্থ মন্ত্রকের
কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে |
সিদ্ধান্তগুলি নিতে চান তিনি। যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো, টাকার অবমূল্যায়ন রোখা, আমদানি-রফতানি ফারাক কমানো এবং সর্বোপরি আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানো সম্ভব হয়। এই কাজে নিজের মতো করে দল গঠনও করতে চান তিনি। সেই দলে যেমন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হবেন সি রঙ্গরাজন এবং মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া, তেমনই আর এক বাঙালি সুমিত বসুর অর্থসচিব হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল।
এ দিনের বৈঠকে ব্যয়সচিব সুমিত বসু হাজির ছিলেন। তেমনই ছিলেন অর্থ মন্ত্রকের আরও চার দফতরের সচিবরা। ছিলেন অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তাব্যক্তিরাও। এর আগে ২০০৮ সালে সামান্য সময়ের জন্য পুরনো মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মনমোহন। আজ আবার সেখানকার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাঁদের সাহায্যই চাইলেন তিনি। বললেন, “খুঁটিনাটি বিষয়গুলি থেকে আমি অনেক দিন দূরে রয়েছি। তাই আপনাদের সকলের উপরেই আমি ভরসা করছি। শুধু অর্থ মন্ত্রক নয়, সরকার ও অর্থনীতির যে কোনও বিষয়েই আপনারা আমাকে পরামর্শ দিতে পারেন।”
কেমন দল গড়তে চান মনমোহন?
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর, মন্টেক যে বড় দায়িত্ব পেতে চলেছেন, সেটা ভোডাফোন পর্বে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া থেকেই স্পষ্ট। সচিবালয় সূত্র বলছে, বিদেশি লগ্নিকারীরা যে ভারতের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন, তার অন্যতম কারণ ভোডাফোন মামলা। অথচ টাকার পতন রুখতে আরও বেশি বিদেশি লগ্নির প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এমন কোনও সিদ্ধান্ত তিনি চান না যাতে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা যায়। ভোডাফোন ও হাচিসনের মধ্যে চুক্তি যে হেতু বিদেশের মাটিতে হয়েছে, তাই এ দেশের সরকারকে কর মেটাতে রাজি হয়নি ভোডাফোন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যায় সরকার। কিন্তু কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তার পরে অর্থ মন্ত্রক কড়া অবস্থান নিয়ে অতীতের লেনদেনের জন্য কর নিতে নতুন আইন তৈরির কথা বলে। চাপের মুখে সেই আইন বলবৎ অবশ্য আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গিয়েছে। লগ্নিকারীদের দুশ্চিন্তার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী, তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি এ দিন বলেছেন, “করের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা আছে যা আমাদের মেটাতে হবে।” এ বার মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে ভোডাফোনের সঙ্গে আলোচনায় বসে কর সংক্রান্ত বিষয়টি মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, আগামিকালই ভোডাফোনের চেয়ারম্যান অনলজিৎ সিংহের সঙ্গে মন্টেক বৈঠক করতে পারেন।
ভোডাফোনের ব্যাপারে কড়া নেওয়ায় বর্তমান অর্থসচিব আর এস গুজরালকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনা চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় মনে করছে, ভোডাফোন-হাচিসন মামলায় অর্থসচিব হিসেবে গুজরাল যে রকম আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাতে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে। তাই তাঁকে সরিয়ে সুমিতবাবুকে অর্থসচিবের পদে বসানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্টেকের পাশাপাশি রঙ্গরাজনকেও অর্থ মন্ত্রকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান। মন্টেক ও রঙ্গরাজনের উপরেই এখন সব থেকে বেশি ভরসা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন সকালেই এই দু’জনের সঙ্গেই বৈঠকে বসেন তিনি। এ ছাড়া শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রঘুরাম রাজনকে অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টার পদে নিয়ে আসা হতে পারে। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। অর্থ মন্ত্রকের বর্তমান মুখ্য উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মেয়াদ অগস্টে শেষ হচ্ছে। তিনি ফের অধ্যাপনার কাজেই ফিরে যেতে চাইছেন। তাঁর জায়গায় রাজনকে চাইছেন মনমোহন।
মনমোহন নিজের হাতে অর্থ মন্ত্রক নেওয়ার পরে সংস্কার নিয়ে লগ্নিকারীদের মধ্যে যে সামান্য হলেও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, আজ শেয়ার বাজারই তার ইঙ্গিত দিয়েছে। কিছুটা উঠেছে সূচক। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, শিল্পমহলকে চাঙ্গা করতে খুব শীঘ্রই বেশ কিছু ‘স্টিমুলাস’ ঘোষণা করা হতে পারে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, বিনিয়োগের ছবিটা মোটেই সুখকর নয়। বলেছেন, আমদানির খরচ রফতানির তুলনায় বেড়ে চলায় ব্যালান্স অফ পেমেন্ট উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছচ্ছে। পাশাপাশি খুচরো ব্যবসা ও বিমান ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়ার মতো সংস্কারের পথে এগোতে চান মনমোহন। ডিজেলের মূল্য আংশিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত করারও চেষ্টা করতে চান। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, বিমা ক্ষেত্রে যে ভাবে শ্লথতা দেখা দিয়েছে, সেটাও যথেষ্ট চিন্তার।
তবে কংগ্রেসের একাংশ আবার মনে করছে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে অন্য কাউকে সামনে রেখে কাজ চালানো উচিত প্রধানমন্ত্রীর। সে ক্ষেত্রে এই সব কড়া দাওয়াই দেওয়ার পরেও যদি অর্থনীতি পুরোপুরি চাঙ্গা না হয়, তা হলে তার দায় সরাসরি মনমোহনের ঘাড়ে এসে পড়বে না। সেটা এখনই না হলেও আপাতত মন্ত্রকের রোজকার কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য আরও এক জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হতে পারে।
|
মনমোহনী দাওয়াই |
• দেশের অর্থনীতির
আগ্রাসী মনোভাব ফিরিয়ে আনতে হবে। |
• যে নিরাশা তৈরি হয়েছে, তা পাল্টাতে হবে। |
• আগে দেশি-বিদেশি
সব লগ্নিকারীর আস্থা ফেরাতে হবে। |
|
|
|
|
|
|