আজ থেকে দেড়শো বছর আগে, ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বহরমপুর শহরের ঐতিহ্যমণ্ডিত বিদ্যালয় মহাকালী পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ৪০ বছরের ইতিহাস কালের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবর্ষ ব্যতীত অন্য কোনও তথ্যই জানা যায় না। ১৯০১ সালের পর থেকে মোটামুটি ভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস জানা যায়। ওই বছরেই শহরের বিশিষ্ট কয়েকজনের আমন্ত্রণে বহরমপুরে আসেন কলকাতার আদি মহাকালী মহাকালী পাঠশালার প্রতিষ্ঠা করেন গঙ্গাবাঈ মাতাজী। তাঁর অনুপ্রেরণায় বহরমপুরের ওই বিদ্যালয়ে তৎকালীন মহিলাদের উপযোগী পুরাণ, স্তব, ভাষা, গণিত, সূচিশিল্প, রন্ধন ইত্যাদি শিক্ষাপ্রদান করা শুরু হয়। ভদ্রকালীর স্তবপাঠ ও নিত্যশিবপূজা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবশ্যিক কর্তব্য ছিল। বর্তমানেও বিদ্যালয়ে উপবিষ্টা চতুর্ভুজা সরস্বতীমূর্তি নিত্যবিরাজিত। নতুন ভাবে ওই বিদ্যালয়ের অগ্রগমনে সাহায্য করেছিলেন কাশিমবাজারের দানবীর মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী। নানা উপলক্ষ্যে ওই বিদ্যালয়ে তিনি একাধিকবার এসেছেন। বিদ্যালয় ভবনটি সম্ভবত তাঁরই দান করা। অনেকের অনুমান যে এই স্থানটির একদা মালিক ছিলেন জিয়াগঞ্জের অধিবাসী তথা লালবাগের কাঠগোলা বাগানের অন্যতম মালিক লছমীপত সিং। যাই হোক, দূরদর্শী মহারাজা ওই বিদ্যালয়ে মহিলাদের গার্হস্থ শিক্ষার পাশাপাশি যুগোপযোগী ইংরাজি শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তা গৃহীত হয়নি বিদ্যালয়ের নবযাত্রাপথে আরও একজন বিখ্যাত মণীষী যুক্ত ছিলেন। তিনি হলেন ‘ধর্মব্যাখ্যা’ গ্রন্থখ্যাত শশধর তর্কচূড়ামণি। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর প্রতি গুণমুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “তোমাকে আগে জানতাম তুমি একজন ভুয়োপণ্ডিত, কিন্তু এখন দেখছি তুমি একজন সাধক।” এ হেন মণীষীকে শহরের এই বিদ্যালয় পেয়েছে উৎসাহ ও পরামর্শদাতারূপে। বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী ওই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একাধিক সংগীতানুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী গৌরীচরণ ভট্টাচার্য কিছুদিন এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন। এক সময় ছাত্রীদের মিষ্টি তৈরির শিক্ষাদানের জন্য ভায়ারাম মিশ্র নামে একজন শিক্ষক নিযুক্ত ছিলেন। এই বিদ্যালয়ে প্রস্তুত মিষ্টান্নদ্রব্যের শহরে বেশ সুখ্যাতি ছিল। যাই হোক, ১৯৪১ সালে বিদ্যালয়টি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হয়। ১৯৪৭ সালে বিদ্যালয়ের চারজন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৯ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চবিদ্যালয় রূপে অনুমোদন লাভ করে। উচ্চবিদ্যালয়পর্বে প্রথম প্রধানশিক্ষক ছিলেন কানাইলাল বরাট। তবে বিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নতি ও ভবিষ্যৎ রূপ প্রকাশ লাভ করে প্রধানশিক্ষিকা গৌরী চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর (১৯৬০-৯৪) তিনি ওই বিদ্যালয়ের কাণ্ডারী ছিলেন। সার্ধশতবর্ষে উপনীত ঐতিহ্যমণ্ডিত ওই বিদ্যালয়ের অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক, সেই শুভেচ্ছা রইল।
সায়ন্তন মজুমদার, বহরমপুর
|
পলাশির যুদ্ধের পর গর্ভনর রজার ড্রেকের মনে পড়ল কাশিমবাজার কুঠির কথা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রযুক্তিবিদ জন ব্রোহিয়ার কাশিমবাজার কুঠি পরিদর্শনে এলেন। তখন ওই কুঠি আর ব্যবহার যোগ্য ছিল না। ব্রোহিয়ারের পরিকল্পনা মতো মুর্শিদাবাদের নিকবর্তী ব্রহ্মপুর এলাকায় ৫৯৪ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে উঠল বহরমপুর ব্রিটিশ শাসকদের উচ্চারণ বিকৃতিতে যা হয়ে দাঁড়াল BERHAMP0RE. বহরমপুর আর ব্রহ্মপুরে ফিরবে না জানি, কিন্তু ইংরেজদের উচ্চারণ বিকৃতি আর কত কাল সে বহন করবে? CALCUTTA তো KOLKATA হয়ে গেল, কিন্তু PLASSEY এখনও PALASI হল না, BERHAMP0RE-ও ব্রিটিশ মুগ্ধতা কাটিয়ে এখনও BAHARAMPUR হয়ে উঠল না!
সাধন দাস, ভৈরবটোলা-লবনচোয়া
|
সম্প্রতি রাজ্য সরকার বিভিন্ন ক্লাবকে দু’ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। কিন্তু ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ধুলিয়ানের ‘শহীদ নলিনী ভ্রাতৃ সঙ্ঘ’ নামের ক্লাবটি কোন অজ্ঞাত কারণে ওই অনুদান থেকে বঞ্চিত হল না বুঝতে পারছি না। সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ওই ক্লাবটি প্রতি বঠর ১৬ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে। ১৯৭০ সালে বন্যাত্রাণের ওই ক্লাবটির ভূমিকার প্রশংসা করছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল ত্রিভুবন নারায়ণ সিংহ ও ১৯৯৮ সালে প্রাক্তন জেলাশাসক হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ১৯৯৬ সালে ওই ক্লাব আয়োজিত ‘শহীদ নলিনী বাগচী জন্মশতবর্ষ’ অনুষ্ঠানে ছালেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। এ রকম একটি ক্লাবকে কেন সরকারি অনুদনের টাকা থেকে বঞ্চিত হতে হল সেই ব্যাপারে মুখমন্ত্রীর ও রাজ্য সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রভাত কুণ্ডু, ধুলিয়ান |