দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দু’টি পা। বাঁ হাতও প্রায় অকেজো। চার বছর আগে দুর্ঘটনার পর থেকে জীবনটা প্রায় থমকে গিয়েছিল মুরারই থানার মুকলিশপুরের আপেল শেখের। শুক্রবার তাঁর জীবন নতুন মোড় নিল।
ঘর থেকে তাঁর বের হওয়াটাও কষ্টের। শুনেছিলেন, সিউড়ির এক নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা পড়শি মহসিন চাচার রক্তের প্রয়োজন। চাচার ছেলে আসাবুল শেখ পরিচিতদের অনেকর কাছেই রক্ত চেয়েছেন। কিন্তু রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। ২৮ বছর বয়সী আপেলের কানে সে কথা পৌঁছতেই, তিনি আসাবুলদের জানিয়ে দেন, তাঁর রক্ত চাচার সঙ্গে মিলবে। তিনি রক্ত দেবেন। যেমন কথা, তেমন কাজ। যে লোকটাকে পাড়ার লোকেরা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য বাড়ির বাইরে বড় একটা বের হতে দেখেন না, শুক্রবার সকালে সেই আপেল শেখ নিজের হাত সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে মুকলিশপুরের বাসস্ট্যান্ডে রওনা দেন। সেখান থেকে ভ্যানে চেপে মুরারই। মুরারই থেকে কোনওরকমে চেপে বসেন সিউড়ির বাসে। |
সিউড়ি সদর হাসপাতালে আপেল শেখ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
রক্ত দেওয়ার পর উৎফুল্ল আপেল বলেন, “ট্রাক চালক ছিলাম। বছর চারেক আগে একটা দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’টি পা বাদ যায়। বাঁ হাতের আঙুলগুলোও প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। মেয়ে ও স্ত্রী’র সঙ্গে বাড়িতেই কোনও ভাবে দিন কাটছিল। তাই চাচার রক্তের প্রয়োজন শুনে আর ঘরে থাকতে পারিনি। মন বলল, একটা ভাল কাজ করার সুযোগ এসেছে। তাই চলে এলাম। এখন মনে হচ্ছে, আমিও লোকের কাজে লাগতে পারি।”
রক্তের প্রয়োজনীয়তা কী, আপেল শেখ দুর্ঘটনার পরে টের পেয়েছিলেন। তিনি জানান, কলকাতায় তাঁর চিকিৎসা হয়। তখন পরিচিতদের কাছে রক্ত চেয়েও পাননি। শেষে অনেক কষ্টে রক্ত যোগাড় করে কিনতে হয়েছিল। আসাবুল নিজেও রক্ত দিলেন। তিনি বলেন, “বাবাকে বাঁচাতে অনেককেই রক্ত দিতে বলেছিলাম। কেউ রাজি হননি। নিকট আত্মীয় না হয়েও আপেল ভাই যা করলেন, তাঁর ঋণ শোধ করব কী করে?” নতুন করে জীবনটাকে উপলব্ধি করার খুশিতে আপেল বলেন, “এখন আমার একটাই প্রার্থনা, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে চাচা বাড়ি ফিরুক।” |