পর্তুগাল-১ (রোনাল্ডো)
চেক প্রজাতন্ত্র-০ |
কোনও ফুটবলারকে গ্রেট বলা হবে, তার পিছনে নানারকম তত্ত্ব আছে। ক্লাব ফুটবলের এই রমরমার যুগে স্রেফ বিশ্বকাপ জেতানো এখন আর ‘গ্রেট’ হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য আবশ্যিক শর্ত নয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সমস্যা হল, ও এমন একটা সময়ে খেলছে, যেখানে ফুটবল দুনিয়া জনৈক লিওলেন মেসিকে দেখে ফেলেছে।
মেসি বনাম রোনাল্ডো বিতর্কে আমি ঢুকছি না। ক্লাবের হয়ে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দেশের হয়ে কার কী পারফরম্যান্স, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া আধুনিক ফুটবলে চলতেই থাকে। এক জন স্ট্রাইকারের বেলা সব সময় দেখা হয়, ক্লাবে কারা সেই ফুটবলারের পাশে খেলেন, দেশের হয়ে খেলার সময় কারা। জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় রোনাল্ডোর পারফরম্যান্স নেই, এই অভিযোগ ইউরো কাপের আগে ছিল। যে অভিযোগ গত নেদারল্যান্ডস ম্যাচে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল রোনাল্ডো। বরাবর মনে করে এসেছি, খেলাধুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত কঠিন থেকে কঠিনতর হবে, তত ‘গ্রেট’-দের খেলা খুলবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত জোরালো হবে,, তত একজন গ্রেট ফুটবলার মেলে ধরবে নিজেকে। সেই কারণেই ইউরো কাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে খুব আগ্রহী ছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম রোনাল্ডো কী করে। রোনাল্ডোর নিজের মোটিভেশনেরও একটা বড় কারণ গ্যালারিতে দুই পর্তুগিজ গ্রেট-এর উপস্থিতি। পাশাপাশি বসে খেলা দেখছিলেন ইউসেবিও আর ফিগো। এঁদের সামনেই রোনাল্ডো পর্তুগালকে আবার জেতাল। |
রোনাল্ডোকে যে ম্যান মার্কিংয়ে রাখা হবে, সেটাও জানা ছিল। চেকদের রাইট ব্যাক ইথিওপিয়া জাত গেব্রেসেলাসি এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক। ওর উপরই দায়িত্ব ছিল রোনাল্ডোকে মার্কিংয়ে রাখার। অন্তত তিনবার রোনাল্ডোকে ঘুরতেই দেয়নি সেলাসি। তার মধ্যেও নিজের জাত চেনানোর জন্য যা যা করা দরকার, করছিল রোনাল্ডো। কিন্তু কোনও কোনও দিন হয় না, আপনার সব কিছু ঠিক থাকলেও আসল কাজটা আর করা হয়ে ওঠে না। এখানে আসল কাজ মানে গোল। সেটা আর আসছিল না। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুটো ডিফেন্ডারকে ঘাড়ে নিয়ে চমকপ্রদ টার্নে চেকদের গোলমুখ খুলে ফেলেছিল রোনাল্ডো। মাটি ঘেঁষা গড়ানে শটটা গোলকিপার চেককে হারিয়ে পোস্টে লাগল। দ্বিতীয়ার্ধেও রোনাল্ডোর অনবদ্য ফ্রিকিকটা পোস্টে। কিন্তু ফুটবল দেবতা শেষমেষ শূন্য হাতে ফেরাতে চাননি রোনাল্ডোকে। ৮০ মিনিটে মোতিনহোর ক্রস থেকে অনবদ্য হেডে গোল। নেদারল্যান্ডস ম্যাচ থেকেই খেলা খুলেছে রোনাল্ডোর। এ বারের ইউরো কিন্তু রোনাল্ডোর হতে পারে। ওর সামনে সেমিফাইনালে পড়বে স্পেন বা ফ্রান্স।
গোয়ায় থাকি বলে পর্তুগিজদের প্রতি আমার একটা আলাদা দুর্বলতা আছে। ইউরো চলাকালীন দেখছি, বিভিন্ন ক্লাব বা পাবে পর্তুগালের পতাকা উড়ছে। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচটায় পিছিয়ে গিয়ে টিমটা যে ভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল, তাতে পতুর্গালকে নিয়ে আলাদা একটা আগ্রহ যে তৈরি হবে, স্বাভাবিক। কিন্তু এই ইউরোয় পতুর্গালকে নিয়ে খুব বেশি উত্তেজিত হওয়ার কোনও কারণ আছে বলে আমার মনে হয়নি। কিন্তু শেষ দুটো ম্যাচ দেখে মত বদলাচ্ছি। রোনাল্ডো ছাড়া এই ইউরোয় দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে নানি। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের জন্য পস্তিগার বেরিয়ে যাওয়াটা শাপে বর হয়েছিল পর্তুগালের। বদলি আলমেইদা বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করল।
বেন্টো যেখানে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন, সেখানে চেক খেলছিল ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। সামনে স্ট্রাইকার হিসেবে শুধু মিলান বারোস। মিডফিল্ডে গোটা টিমটাকে টানে জিরাচেক। চেকদের মধ্যে যেটুকু চোখে পড়ার ও-ই পড়ল। আর গোলকিপার পের চেক। কিন্তু এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে পর্তুগালের টানা আক্রমণের মুখে দিশেহারা লাগল চেকদের। খেলা যা হল, তাতে অন্তত তিন গোলে জেতার কথা ছিল পর্তুগালের। |