অ্যাডভান্টেজ ভূপতি। ম্যাচ পয়েন্টও। জুলাই মাসের শেষাশেষি তিনি সার্ভ করবেন গেম, সেট ও ম্যাচ নিয়ে নেওয়ার জন্য।
টেনিস কোর্ট হলে এটাই দেখাত লিয়েন্ডার পেজ বনাম মহেশ ভূপতি মহাবিতর্কিত যুদ্ধের স্কোরলাইন।
লিয়েন্ডার পেজ, কোর্টে বরাবর হার মানতে না চাওয়া তিনিও সহজেই অদৃশ্য স্কোরলাইন দেখতে পাচ্ছেন। বুঝেই গিয়েছেন, বিপক্ষের সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ ঠেকানোর পক্ষে তাঁর টেনিস র্যাকেট যথেষ্ট নয়। আর তাই ভবিষ্যৎ বিপদ আন্দাজ করে তিনি নাম তুলে নিচ্ছেন অলিম্পিক থেকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সময়সীমা মেনে এআইটিএ তাঁর নাম অলিম্পিক কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিলেও লিয়েন্ডার ফোনে এআইটিএ প্রধানকে বলেছেন, তিনি অলিম্পিক খেলবেন না। ছেলের মুখপাত্র হিসেবে বাবা ভেস পেজ আনন্দবাজারকে জানালেন, একমাত্র বিবেচনা হতে পারে যদি সানিয়া এবং এআইটিএ লিখিত গ্যারান্টি দেন যে মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডারের সঙ্গী হবেন সানিয়াই। তা হলেই লিয়েন্ডারের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে।
সাংবাদিক বৈঠকে এআইটিএ প্রেসিডেন্ট অনিল খন্না এমন একটা বিবৃতি পড়া শুরু করেন যা অভূতপূর্ব শুধু নয়, কোনও ক্রীড়াসংস্থা প্রধানের সরকারি ভাবে এমন অসহায়তা প্রকাশ স্মরণকালে ভারতীয় ক্রীড়াজগতে ঘটেনি। খন্না সাফ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে অন্যায় হলেও পরিস্থিতির চাপে তাঁরা দু’টো দল বাছছেন। এ-ও বলেন, তাঁদের আজীবন সভাপতি, তথা বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর আবেগও এই নির্বাচনে ধরা পড়ছে। বলেন, অলিম্পিকের পরে কোড অফ কন্ডাক্ট এবং শৃঙ্খলা নিয়ে কথা হবে। এখনকার মতো দু’টো দলই অলিম্পিকে যাচ্ছে। মহেশ-বোপান্না, পেজ-বিষ্ণু বর্ধন। মিক্সড ডাবলসে সানিয়া ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে গেলে সানিয়া-লিয়েন্ডার। |
দ্রুত টেনিসমহলে আলোচনা শুরু হয়, কী অসহায় আত্মসমর্পণই না করলেন টেনিস-প্রধান! তাঁর বাবা আর কে খন্নার সঙ্গে বিজয় অমৃতরাজের ঝগড়ার কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু অমিত ক্ষমতাশালী বিজয়ও পারেননি খন্নাকে এমন অসহায় করে দিতে। রটে যায়, ভূপতির মাধ্যমে আনা প্রবল রাজনৈতিক চাপই লিয়েন্ডারের বিরুদ্ধে ডাউন দ্য লাইন ফোরহ্যান্ড মেরে দিল।
লিয়েন্ডার-সমর্থকেরা আবার বলতে থাকেন, ম্যাচটা মোটেই মহেশ জেতেনি। ১-১ হয়েছে মাত্র। এঁরা বলতে থাকেন লিয়েন্ডার যেমন ডাবলসে পছন্দের সঙ্গী পেল না, ওকে বাধ্য করা হল র্যাঙ্কিংয়ে (২০৭) অনেক জুনিয়র নিয়ে খেলতে, তেমনই ও আসল পদক জেতার সুযোগটাই পেয়ে গেল। ভূপতি যদি জেদ বজায় রেখে ডাবলসে ১-০ এগিয়ে যায়, টেনিস কর্তারা লিয়েন্ডারের হয়ে সেটা মিক্সড ডাবলসে শোধ করে দিলেন ১-১। লিয়েন্ডার-সানিয়া দু’জনেই ডান কোর্টের প্লেয়ার জেনেও। মাত্র কিছু দিন আগে মহেশ-সানিয়া ফরাসি ওপেন জিতেছেন জেনেও। তাঁরা লিয়েন্ডারকে এটা পাইয়ে দিলেন। মিক্সড ডাবলসে মাত্র ষোলোটা টিম খেলে। সেখানে দু’টো ম্যাচ জিতলেই পদকের সম্ভাবনা। আর অলিম্পিক ডাবলসে ফেডেরার, নাদাল, জকোভিচরা থাকলেও মিক্সড ডাবলসে ওঁরা কেউ খেলছেন না। সুতরাং লিয়েন্ডারের পদক জেতা অনেক সহজ হবে। ফোনে তখন কৃষ্ণ ভূপতি বলছেন, “খুব জঘন্য আপস হল। মহেশকে কোন যুক্তিতে মিক্সড ডাবলস থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে?” লন্ডন থেকে অন্যতম নির্বাচক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমি এ বার মুখ খুলতে বাধ্য হচ্ছি। মিক্সড ডাবলসে মহেশ-সানিয়াকে খেলানো উচিত।”
এতে আরও নিশ্চিত হওয়া
গেল যে, স্কোরলাইন ১-১। বৃহস্পতিবারের আনন্দবাজারে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
কিছু পরেই জানা গেল আসলে তা নয়। এই বার ম্যাচে এসে পড়েছেন তৃতীয় পক্ষ। তাঁর নাম সানিয়া মির্জা। শোনা যায়, অস্ট্রেলীয় ওপেনের সময় তাঁর ডাবলস পার্টনার এলিনা ভেসনিনাকে লিয়েন্ডার পরামর্শ দেন, সানিয়ার সঙ্গে খেলছ কেন? ও মোটা হয়ে গিয়েছে। এ কথা জেনে সানিয়া প্রচণ্ড খেপে যান। সেই রাগ আজও ভোলেননি। মির্জা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে টেনিসমহলের কেউ কেউ জেনে যান যে, ২৮ জুলাই অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ড পেলেই বিদ্রোহীদের দলে যোগ দেবেন সানিয়াও। জানিয়ে দেবেন, তিনিও লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে চান না। অলিম্পিকের নিয়ম অনুযায়ী, মিক্সড ডাবলস টিম এখন দেওয়ার নিয়ম নেই। দল জানাতে হয় অনেক পরে। সে ক্ষেত্রে সানিয়ার দেরিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও থাকে। লন্ডনে বসা লিয়েন্ডারও জানতে পারেন, সানিয়া এ রকম কিছু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর দু’কুলই গেল। দ্রুত তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, টেনিস কর্তাদের জানিয়ে দেবেন অলিম্পিক খেলবেন না।
টেনিস কর্তারা আবেগের দিক দিয়ে লিয়েন্ডারের সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের কিছু করণীয় নেই যেহেতু সকালে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী তাঁদের সমঝে দিয়েছেন। সকালে অপ্রত্যাশিত ভাবে এস এম কৃষ্ণর বাড়িতে দেখা করতে যান মাকেন। সেখানে এআইটিএ-র কর্তাদের দেখে সোজা বলেন, আপনারা আমাকে ভুল বুঝিয়েছেন। মহেশ-বোপান্নাও যোগ্যতা অর্জন করেছে ডাবলস খেলার। তা হলে ওদের খেলাবেন না কেন? কৃষ্ণও একমত হয়ে যান। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড মাকেনের নানান চাপকে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু টেনিসকর্তারা সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।
রাতে দুঃখের সঙ্গে ভেস পেজ বললেন, “লোকে কাল সকালে উঠে দেশের হয়ে লিয়েন্ডারের না খেলার কথাই বলবে। কেউ বোধহয় বুঝতেও চাইবে না ও কেমন যত্নের সঙ্গে অলিম্পিকের জন্য তৈরি হচ্ছিল। আর কী অপরিসীম রাজনৈতিক চাপের শিকার হয়ে গেল।” |