মেজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাইয়ে চাষের দফারফা
য়েক মাস ধরে মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘ছাই পুকুর’ থেকে উপচে পড়া ছাইয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দারা। সেচের জন্য গড়া জামগাড়ি জোড়বাঁধ জলাধারে যেমন ওই ছাই মিশছে, তেমনই নষ্ট হয়েছে বেশ কিছু কৃষিজমি। বাতাসে ওড়া ছাইয়ের দূষণের দাপটে লটিয়াবনি, নিত্যানন্দপুর অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামে বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সমস্যার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের বিডিও বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমাকে রিপোর্ট দিয়েছেন। আমি নিজে গিয়ে সরেজমিনে সব খতিয়ে দেখে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।”
ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র। তিনি বলেন, “আকস্মিক এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এ জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এসেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
ছাইয়ের তলায় সেচের জোড়বাঁধ। ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে লটিয়াবনির রাধাকৃষ্ণপুর গ্রাম লাগোয়া জামগাড়ি জোড়বাঁধে ডিভিসি-র ছাই উড়ে পড়ে। ছাই গ্রাস করে নেয় পাশের কয়েকশো বিঘা চাষজমিও। রাতারাতি জমিহারা হন বহু কৃষক। ওই জোড়বাঁধের জল নিয়ে চাষ করতেন রাধাকৃষ্ণপুর, বাঁকদহ, নিত্যানন্দপুরের মতো বহু গ্রামের চাষি। ওই জল দূষিত ও চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ায় মাথায় হাত পড়েছে তাঁদেরও। ওই জোড়বাঁধের জল বয়ে গিয়ে বাঁকদহ কালভার্টে ছাইয়ের স্তূপ সৃষ্টি করেছে। ভাসিয়ে দিয়েছে নিত্যানন্দপুর-বাঁকদহ রাস্তাকেও। সমস্যায় পড়ছেন বহু মানুষ। ছাই-মিশ্রিত জল দূষিত করছে নিত্যানন্দপুর জলাধারকেও।
রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা নিমাই কুণ্ডু, খাঁদুরাম মণ্ডলেরা বলেন, “গ্রামের প্রায় সকলেই কৃষিজীবী। অধিকাংশের জমি ডিভিসি-র ছাইয়ে চাপা পড়ে গিয়েছে। ওই জমিতে আর চাষ হবে না। এখন কী ভাবে বাঁচব আমরা?” বাঁকদহ গ্রামের তারাপদ পরামানিক বলেন, “জামগাড়ি জোড়বাঁধের জলে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। একদিন দেখি গোটা বাঁধ ছাইয়ের তলায়। এখন দিনমজুরি করছি।” নিত্যানন্দপুরের অসীম বাজপেয়ী বলেন, “ছাইয়ের দূষণে টেকা দায় হয়েছে। গ্রামের মাঠ-ঘাট ছাইয়ের গুঁড়োয় দূষিত হচ্ছে। মাঠের দূষিত ঘাস খেয়ে গবাদি পশুগুলির নানা রোগ হচ্ছে।”
বাতাসে ওড়া গুঁড়ো ছাইয়ের দাপটে নিঃশ্বাস নেওয়া দায় হয়ে উঠেছে ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, ঝড় উঠলে ছাইয়ের গুঁড়ো গ্রামের আকাশ ছেয়ে ফেলে। গ্রামের বাড়িগুলির দেওয়ালে সেই দূষণের ছাপ পড়ছে।
কেন এই অবস্থা?
ডিভিসি-র এক আধিকারিক জানান, ১৯৯৬ সালে যখন ডিভিসি-র তিনটি ইউনিট ছিল তখন প্রায় ৭০০ একর জমির উপর ১৩ মিটার গভীরতার দু’টি ‘ছাই পুকুর’ বানানো হয়। বর্তমানে ডিভিসি-র মোট ৮টি ইউনিট চলছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। ফলে, ছাইয়ের পরিমাণ বাড়লেও ‘ছাই পুকুর’-এর সংখ্যা বাড়েনি। ওই দু’টি ‘ছাই পুকুর’ পুরোপুরি ভর্তি হয়ে যাওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে। নতুন করে ‘ছাই পুকুর’ না বানানো পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না। ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, ‘ছাই পুকুর’ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.