গানের জন্য চিহ্নিত করে দেওয়া একটা দিন। নাম ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’ বা ‘বিশ্ব সঙ্গীত দিবস’। বিশ্বায়নের এই যুগে বছরের বেশির ভাগ দিনই ‘বিশেষ’। ‘বিশ্ব সঙ্গীত দিবস’টাও কি সে রকমই নিছক হুজুগ? গানবাজনার ছুতোয় ‘সেলিব্রেট’ করার আর একটা দিন?
তবলাবাদক তন্ময় বসুর কথায়, “সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য প্রতি দিনই সঙ্গীতের দিন। একটা দিনকে সঙ্গীত দিবস বলে চিহ্নিত করা পাশ্চাত্য ধারণা। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালন করলে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দিবসও পালন করা উচিত।”
শুধু গানের জন্য একটা দিন উদ্যাপন শুরু হয় বছর তিরিশ আগে ফ্রান্সে। পারির রাস্তায় বহু শিল্পী মিলে রূপ দেন ‘ফেৎ দো লা মিউজিক’-এর ভাবনায়। তার পরে অনেকটা পথ পেরিয়ে ২১ জুন আজ ‘বিশ্ব সঙ্গীত দিবস’। অন্য বছরের মতো এ বারও কলকাতায় ‘সঙ্গীত দিবস’ পালিত হবে। কোথাও ‘লাইভ শো’ করবে ফ্রান্স থেকে উড়ে আসা জ্যাজ ব্যান্ড, কোথাও প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মেলবন্ধন, কোথাও মোৎজার্টের ভাবনার অনুসরণে ‘চেম্বার অর্কেস্ট্রা’। |
এই পিয়ানোতেই সঙ্গীত-শিক্ষার পাঠ নিতেন রানি ভিক্টোরিয়া। আজ, বিশ্ব সঙ্গীত দিবস
থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পিয়ানোটি দেখতে পাবেন সাধারণ দর্শকেরা। —নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু সে তো যে কোনও দিনই হতে পারে! এই দিনটার তাৎপর্য কোথায়? বরং বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের কথা মাথায় রেখে এমন কোনও সুর-সৃষ্টি কি হতে পারে, যা দিয়ে গাঁথা পড়বে গোটা বিশ্ব? “বিশ্ব সঙ্গীতকে কোনও নির্দিষ্ট ‘টিউনে’ বেঁধে ফেললে একটা সংকীর্ণতা এসে যাবে, কোনও এক বছর একটা ‘সিগনেচার টিউন’ হতে পারে,” বললেন সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র। তাঁর কথায়, “কলকাতায় বসে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালনকে যদি হুজুগ বলে ধরেও নিই, তবু এই হুজুগটা ভাল। কারণ এই দিনটা আমাদের আরও এক বার মনে করায়, সুরের দুনিয়ায় কোনও বৈষম্য নেই। সঙ্গীতই সবার আগে দেশ-কালের গণ্ডি পেরোয়। তাই তো লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের আগেই সেখানকার সঙ্গীত আমাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। যে সঙ্গীত মানুষকে স্পর্শ করে, যে সুর কানে গেলে ভুলে যাই ভৌগোলিক সীমানার কথা, সেই সঙ্গীতই বিশ্ব সঙ্গীত।” এ শহরের বাতাসেও তাই একই সঙ্গে ঘুরে ফেরে কীর্তন আর সুফির সুর।
আর এখানেই বাঙালির সঙ্গীত দিবস পালন মিলেছে বিশ্ব সঙ্গীতে। তন্ময় বসুও জানান, পাশ্চাত্য সঙ্গীতের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় এবং দক্ষিণ আমেরিকান সঙ্গীত অথবা অন্য কোনও সঙ্গীতের মেলবন্ধনে যে ‘থার্ড এলিমেন্ট’ তৈরি হবে, তাকেই বলা যেতে পারে বিশ্ব সঙ্গীত। সেই ‘ফিউশন’-এ বাঙালি এখন অভ্যস্ত। ভায়োলিন ব্রাদার্সের জ্যোতিশঙ্কর বিশ্ব সঙ্গীত দিবস পালনের পক্ষে। তাঁর মতে, বিভিন্ন প্রদেশের লোকসঙ্গীত, পপ, জ্যাজ সব কিছুকে এক থালায় সাজিয়ে পরিবেশন করার স্বাধীনতা দিয়ে দেয় এই দিনটা।
তাই গানবাজনার ছুতোই হোক্ বা অজানার খোঁজ, বিশ্ব সঙ্গীত দিবস আসলে সঙ্গীতের মাধ্যমে বিশ্বকে এক করে। এখানে সেই সমন্বয়েরই রূপকথা। |