সম্পাদকীয় ১...
অহঙ্কারের ফল
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়া দলনেতা হিসাবে আচরণ করিয়াছিলেন, তাহার চড়া মাসুল গনিয়াছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া সনিয়া গাঁধী যে বিড়ম্বনায় পড়িয়াছেন, তাহার পিছনেও রহিয়াছে এই একই ব্যাধি। তিনি একাধারে কংগ্রেসের নেত্রী এবং সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউ পি এ) কর্ণধার। সর্ব অর্থেই দ্বিতীয় পরিচয়টি বৃহত্তর। সেই পরিচয়কে প্রাপ্য গুরুত্ব দিলে তিনি রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করিবার আগে শরিক দলগুলির সহিত যথাযথ ভাবে আলাপ আলোচনা করিতেন, তাহাদের মতামত শুনিতেন এবং তাহার পরে প্রস্তাব স্থির করিতেন। তাহাই প্রকৃত জোটধর্মের শর্তও বটে। ভারতীয় শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন কী, তাহা আদৌ স্পষ্ট নয়, কিন্তু পদটি যে অবধি বহাল রহিয়াছে, সেই অবধি তাহার গুরুত্ব লইয়া কোনও প্রশ্ন থাকিতে পারে না। সেই কারণেই, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব হইতে শুরু করিয়া সমগ্র প্রক্রিয়াটিই যথাযথ মর্যাদা সহকারে সম্পাদন করা জরুরি। গণতান্ত্রিকতার শর্ত পূরণ না করিলে সেই মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় না। রাষ্ট্রপতি যেহেতু দলের ঊর্ধ্বে, সুতরাং তাঁহার নির্বাচন প্রক্রিয়াটি দল বা গোষ্ঠী-ভিত্তিক নির্বাচনের প্রচলিত ছকের বাহিরে, কার্যত সর্বসম্মতির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়াই সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু তাহা যদি সম্ভব না-ও হয়, অন্তত কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন জোটের শরিকদের মধ্যে মতৈক্যের পথেই তাহার প্রার্থীর নাম স্থির হইবে, ইহা গণতান্ত্রিক শোভনতার ন্যূনতম শর্ত।
অথচ কংগ্রেস নেতৃত্ব দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা দূরে থাকুক, বিচিত্র আত্মসর্বস্বতা অনুসরণ করিয়া চলিয়াছে, শরিকদের সহিত যেটুকু কথা বলিয়াছে, তাহাও দৃশ্যত কৌশল হিসাবে, তাহার পিছনে অন্যের মতকে সম্মান করিবার উদারতা বিশেষ দেখা যায় নাই। ইহা যেন দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নয়, কংগ্রেসের ‘রাষ্ট্রপতি’ নির্বাচন। বস্তুত, রাষ্ট্রপতি পদে কী ধরনের ব্যক্তির অধিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়, সেই বিষয়েও কংগ্রেস নেতৃত্বের ধারণা স্পষ্ট নহে। রাজনীতিক হউন বা অ-রাজনীতিক, নির্ধারিত ব্যক্তি যথার্থ বড় মাপের কৃতী কি না, তাহাই এ ক্ষেত্রে মুখ্য প্রশ্ন। সনিয়া গাঁধী বা তাঁহার দলের চিন্তায় সেই মাপকাঠির স্বীকৃতি অতীতেও দেখা যায় নাই, এখনও নয়। তাহার ফলে সমগ্র প্রক্রিয়াটি দলের মত চাপাইয়া দেওয়ার চেষ্টা বলিয়া প্রতিভাত হইয়াছে এবং জোট তথা মিত্রদের ভিতর হইতেই প্রতিবাদ উঠিয়াছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন লইয়া ইউ পি এ বনাম এন ডি এ লড়াই, অবাঞ্ছনীয় হইলেও, অস্বাভাবিক ছিল না। এখন লড়াই কার্যত ইউ পি এ বনাম ইউ পি এ! এই বিষম সঙ্কট কংগ্রেসের নিজেরই তৈয়ারি। স্বখাতসলিল।
ইহার মূলে, আক্ষরিক অর্থে, অহঙ্কার। অন্যের মত না লইয়া, নিজের পছন্দ অন্যদের উপর চাপাইয়া দেওয়ার এই মানসিকতা হয়তো বা কংগ্রেস নেতৃত্বের মজ্জাগত। বিভিন্ন প্রশ্নে এই ব্যাধির উৎকট প্রকাশ ঘটিতেছে। কখনও শরিক দলের প্রতি অবজ্ঞা, কখনও বিরোধীদের প্রতি, কখনও রাজ্যের প্রতি। তিস্তা চুক্তি হইতে সন্ত্রাস প্রতিরোধের নূতন বাহিনী, সব আই আই টি’র জন্য একই পরীক্ষার বিধান হইতে বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের বরাদ্দ ছাঁটাই ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা উত্তরোত্তর বাড়িয়া চলিয়াছে। তাহাতে কেবল সরকার সমস্যায় পড়িতেছে না, গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হইতেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন লইয়া এই দুর্ভাগ্যজনক কুনাট্য সেই গভীর ব্যাধির পরিণাম। গণতন্ত্রে ‘অন্য’দের সঙ্গে লইয়া চলিতে হয়, এমনকী সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকিলেও। কথাটি জওহরলাল নেহরু জানিতেন। কিন্তু শ্রীমতী গাঁধী সম্ভবত অন্য ঘরানায় নাড়া বাঁধিয়াছেন। হইতেই পারে, নেহরু এবং তাঁহার কন্যার ঘরানা তো এক ছিল না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.