কানু বন্দ্যোপাধ্যায়
স্মরণ
থের পাঁচালী’তে কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯০৫-’৮৩) যে দিন প্রথম শুটিং ছিল, সেদিন তিনি এমন পরিপাটি চুল ছেঁটে এসেছিলেন যে সত্যজিৎ শুটিং বন্ধ করে দিলেন, আর্থিক ক্ষতি সত্ত্বেও। বললেন যে যতদিন-না হরিহরের চরিত্রের মানানসই চুল গজাবে, ততদিন অপেক্ষা করবেন। ক্ষুণ্ণ হওয়া দূরে থাক, কলকাতায় ফিরে কানুবাবু জনে-জনে জানালেন এই এতদিনে তিনি এক জাত-পরিচালকের দেখা পেয়েছেন, যিনি নিখুঁত চরিত্রায়ণের জন্যে সব কিছু করতে পারেন! পরে বলেওছেন সত্যজিতের ছবি সম্পর্কে: ‘‘শুধু চরিত্র নয়, সব কিছুরই যতটা সম্ভব বাস্তব চেহারা। বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম ‘পথের পাঁচালী’ আর ‘অপরাজিত’ এই দুটি ছবিতে কাজ করে।” আর সত্যজিৎ তাঁর অপুর পাঁচালী-তে (আনন্দ) জানিয়েছেন, ‘বাবার ভূমিকায় আমরা কানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেব বলে মনস্থ করি। ইনি পেশাদার অভিনেতা। ...হরিহরের চরিত্রে এঁকে চমৎকার মানাবে।’
সন্দীপ রায় জানাচ্ছেন, ’৭১-এ সত্যজিৎ বুদ্ধদেব বসুর ‘একটি জীবন’ নিয়ে চিত্রনাট্য লেখার সময় গুরুদাস ভট্টাচার্যের চরিত্রে কানুবাবুকেই ভেবেছিলেন, মেকআপ-এর জন্যে স্কেচও করে ফেলেছিলেন তাঁর, যদিও ছবিটি হয়নি শেষ পর্যন্ত। ১৯২৮-এ নির্বাক ‘দুর্গেশনন্দিনী’ দিয়ে ছবিতে অভিনয় শুরু, আশির দশকের গোড়া অবধি অভিনয় করেছেন, অভিনীত একটি বিশিষ্ট হিন্দি ছবি বিপ্লব রায়চৌধুরীর ‘শোধ’। তিরিশ থেকে সত্তর অবধি দাপটে অভিনয় করে গিয়েছেন মঞ্চে, এমনকী বেতার-নাটকেও। ‘সাধক হিসেবে অভিনয়-কর্মকে নিয়েছিলেন বলেই সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করেছেন এবং অসাধারণ দক্ষতায় প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষের জীবন।’ জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ২০ জুন ১০৮তম জন্মদিনে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় টালা চক্ররেল স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় (বনমালী চ্যাটার্জি স্ট্রিটে) তাঁর আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন সন্দীপ রায়। তাঁর শিল্পীজীবন নিয়ে বলবেন সৌম্যেন্দু রায় সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় অনুপ মতিলাল। উদ্যোগে সুতানুটি বইমেলা কমিটি ও কানু বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ সমিতি।

শতবর্ষে
মেঠো সুরে সাধনা করে সার্থক শিল্পী হয়েছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। জন্ম ১৪ ডিসেম্বর ১৯১২। যুক্তিবাদী মন নিয়ে কোনও দিনই মেনে নিতে পারেননি কুসংস্কার, মানুষের ওপর অত্যাচারকে। প্রত্যয়ী মানবিক বোধ থেকেই গান লিখে সুর বাঁধতেন। আঠারো বছর বয়সে আইন অমান্যে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হন। কিন্তু গাঁধীবাদী রাজনীতিতে আস্থা হারিয়ে রচনা করেন ‘কাস্তেটারে দিয়ো জোরে শান’। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রধান সংগঠক হেমাঙ্গের ভরসা জাগানো গান ‘ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়া’। ১৯৮৭-র ২২ নভেম্বর আমরা এই শিল্পীকে হারাই। এ বছর তাঁর জন্ম শতবর্ষ। ‘ফ্রেন্ডস অব ডেমোক্রেসি’র উদ্যোগে সম্প্রতি তাঁর স্মরণে শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ‘উজান গাং বাইয়া’। স্মৃতিচারণ করেন বিভাস চক্রবর্তী, রতন বসু মজুমদার এবং শিল্পীপুত্র মৈনাক বিশ্বাস। সঙ্গে ছিল হেমাঙ্গ বিশ্বাসের বিভিন্ন সময়ে তোলা স্থিরচিত্র নিয়ে একটি প্রদর্শনী।

অভিনেত্রী
পঞ্চাশের দশক। জোড়াসাঁকোর রক্ষণশীল বসু পরিবারে আনাগোনা ছিল এক চিত্রগ্রাহকের। বাড়ির আপত্তি সত্ত্বেও তাঁর উদ্যোগেই সেই বাড়ির মেয়ে প্রতিমা বেরিয়ে পড়েছিলেন অভিনয় করতে। স্ক্রিন টেস্ট-এ উতরে প্রথম ছবি নিউ থিয়েটার্সের মহাপ্রস্থানের পথে। সেই শুরু। অভিনয় করেছেন একশোর বেশি ছবিতে। দেখা গিয়েছে চিরকুমার সভা, উত্তর মেঘ, সাগরিকা, শাপমোচন, বাবা তারকনাথ, ধন্যি মেয়ে, তপন সিংহের কালামাটি-তে। চুপিচুপি আসে, ডেলি প্যাসেঞ্জার, জয় মা কালী বোর্ডিং-এ নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ঝকমারি ছবিতে অভিনয়ের সময় পরিচালক কালীপদবাবু নাম বদলে করে দিলেন তপতী। ব্যক্তিগত জীবনও ছিল সিনেমার মতো রঙিন। পুরীতে বেড়াতে গিয়ে আলাপ ফুটবলার বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বালুকাবেলায় মন দেওয়া নেওয়া এবং পরে বিয়ে। সত্তরের মাঝামাঝি অভিনয় থেকে সরে আসেন। নিউ আলিপুরের বাড়িতে নাতনি সিন্ডারেলার সঙ্গে কেটেছে শেষ দিনগুলো। গত ২২ মে একাশি বছর বয়সে চলে গেলেন এই অভিনেত্রী।

কথাবার্তা
গল্প লেখায় হাত পাকাচ্ছেন, তখনও ডাকসাইটে ঔপন্যাসিক হয়ে ওঠেননি অমলেন্দু চক্রবর্তী পঞ্চাশের দশক। ‘নতুন সাহিত্য’ (সম্পা: অনিলকুমার সিংহ) পত্রিকায় সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিখ্যাত সাহিত্যিকদের, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারটি দিলেন তাঁকে। ‘অজাতশত্রু’ নামে অমলেন্দুর নেওয়া এমন আটটি সাক্ষাৎকার সংবলিত বইটি, কথাবার্তা: অমলেন্দু চক্রবর্তী (সূত্রধর) বেরবে ১৫ জুন, তাঁর তৃতীয় প্রয়াণবার্ষিকীতে। প্রয়াণের আগে অমলেন্দুর নিজের শেষ সাক্ষাৎকারটিও আছে এ-বইতে। সে দিন সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ছাতুবাবু-লাটুবাবু’র বাড়িতে (৬৭ই বিডন স্ট্রিট) তাঁকে নিয়ে আলাপচারিতা। থাকবেন অলোক রায় সৌরীন ভট্টাচার্য স্বপ্নময় চক্রবর্তী ও বইটির সম্পাদক রুশতী সেন।

বৌমাষ্টমী
পুরুষ মাত্রেই সোনার আংটি। তাই, তাদের ঘিরেই সংসারে যাবতীয় আদর-আহ্লাদ আর মঙ্গলকামনা। কিন্তু চাকা উল্টো দিকেও তো ঘোরে! তাই, জামাইষষ্ঠীর পরের পরের দিনই কোনও এক অভিজাত রেস্তোরাঁকক্ষ ঘন-ঘন উলুধ্বনি ও মেয়েদের কলকাকলিতে মুখরিত হল। অঙ্গনা লেডিজ ক্লাব (দক্ষিণ কলকাতা)-এর মহিলারা বৌমাষ্টমী পালন করলেন সে দিন! মেয়েরা নিজেরাই ‘আদিখ্যেতা’ করলেন নিজেদের নিয়ে, মাথায় কুলো চাপিয়ে, উপহার আদান-প্রদান করে, ভাল-মন্দ খেয়েদেয়ে। এই দগদগে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নাকের ডগায় বসে, আজ নয়, দীর্ঘ সাত/আট বছর ধরেই যেমন বৌমাষ্টমী পালন করছেন এঁরা, তেমনই ভাইফোঁটার পরদিন দিচ্ছেন বোনফোঁটা-ও।

 

বিবেক চেতনা

রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সহযোগিতায় বিবেকানন্দ হলে উপযুক্ত মর্যাদায় স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবার্ষিকী পালন করল ‘বিবেক চেতনা’। প্রথমে স্তোত্র পাঠ করে রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের ছাত্রীবৃন্দ। সভানেত্রীর আসনে ছিলেন রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ও সারদা মঠের সাধারণ সম্পাদিকা প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণা মাতাজি। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের ত্যাগ ও সেবার আদর্শের কথা বলেন। সভায় প্রব্রাজিকা ভাস্বরপ্রাণাজি স্বামীজির ব্যক্তিজীবন ও বিশ্বজীবন নিয়ে আলোচনা করেন। এই সভায় সুচিন্তিত ভাষণ দেন প্রব্রাজিকা প্রদীপ্তপ্রাণাজি, প্রব্রাজিকা অশেষপ্রাণাজি, স্বরাজ মজুমদার, গীতশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাগত ভাষণ দেন বিবেক চেতনার সভানেত্রী কৃষ্ণা বসু।

আদানপ্রদান
শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদানপ্রদান ভীষণ জরুরি। এ ভাবনা থেকেই আই সি সি আর-এর উদ্যোগে আজ থেকে দার্জিলিঙে শুরু হচ্ছে আট দিনের ইন্দো-আশিয়ান শিল্পী শিবির। কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপিনস, সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস এবং ব্রুনেই সহ ভারতের খ্যাতকীর্তি শিল্পী-ভাস্কররা যোগ দিচ্ছেন। এ দেশের পাঁচ জন আমন্ত্রিতের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার ভাস্কর তাপস সরকার। মূর্তি গড়া ও ছবি আঁকার পাশাপাশি থাকছে বিষয়ভিত্তিক আলোচনাচক্র। এই শিবিরের কাজ নিয়ে প্রথম প্রদর্শনী ১৯ জুলাই হবে পটনাতে, পরে দিল্লিতে।

ফেলে আসা দিন
‘মুছে দেওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই ফেলে আসা দিনের দুষ্প্রাপ্য ছবি, চিঠি, পুরনো রেকর্ডের মলাট নিয়ে ১৫ জুন বিকেল পাঁচটায় নন্দন-৪’এ শুরু হচ্ছে এক প্রদর্শনী। উপলক্ষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ৯২তম জন্মদিন। নন্দন-এর সহযোগিতায় আয়োজনে ‘শতাব্দী ব্যালে ট্রুপ’। এদেরই উদ্যোগে ১৬ জুন জন্মদিনে রবীন্দ্রসদনে বিশেষ অনুষ্ঠানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করবেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, এবং হেমন্ত পুত্র জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। থাকছেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীরা। প্রদর্শনী চলবে ১৭ জুন অবধি।

ঝরাপাতা
‘বাইরে গোটা চলমান পৃথিবী। আমার মাথার কাছে বড় একটা জানলা। সে আলোর দিকে তাকাতেও কষ্ট হয়। শরীর জুড়ে শুধু তীব্র যন্ত্রণা, মাথায় তীব্র জ্বালা, দেহের প্রতিটি কোষে বিষ জ্বলছে। আর চোখের সামনে ঘটে চলছে অহরহ কত যে নাটক!’ প্রায় দুই দশক সঙ্গী বিছানা। তবু মুখে মুখেই সৃষ্টি। এই ভাবেই প্রকাশ পেয়েছে কাব্যগ্রন্থ ভেলা, স্রোত, ফরিয়াদ, কি স্মৃতিকথা আমার কথা। তিনি কবি জেবুন্নেসা হক। ছোট থেকেই মেধাবী। মন সাহিত্য পাঠে। বারো বছরে ছাপা হয় প্রথম কবিতা ‘মাঝি’। কবি শেখ হাবিবুল হকের সঙ্গে বিয়ের পরও সাংসারিক প্রতিকূলতায় পিছিয়ে যাননি। মাসিক মোহাম্মদী, পয়গাম-এ লিখেছেন। নব্বইয়ের দশকে রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিসে আক্রান্ত হন। কিন্তু আঁকড়ে রাখেন সাহিত্যচর্চা। কবি দম্পতির যৌথ কাব্যগ্রন্থ ঝরাপাতা প্রকাশিত হয় ২০০৭-এ। সম্প্রতি ঊনসত্তরেই চলে গেলেন জেবুন্নেসা। প্রকাশের অপেক্ষায় শেষ কাব্যগ্রন্থ মুসাফির।

ইস্টার্ন ব্লুজ
টাকাকড়ি, ঋণ, সুদ-আসলের বৃত্তে ওঁরা ব্যস্ত। তবু কাজের অবসরে আনমনে সুর ঢেউ তোলে ওঁদের মনে। শেষমেশ নিজেদের কথায়-সুরে গান বেঁধে অফিসের বড়কর্তাদের ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছিলেন এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখার আট পেশাদার। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেরাই গিটার, ড্রামস, কি-বোর্ডে মার্গসঙ্গীত, রকের মিশেলে একের পর এক গান বেঁধেছেন আট-গানওলা শৌর্যেন্দু, প্রীতম, মুকুন্দ, অতনু, সায়ন্তন, দেবরাজ, শুভব্রত ও মিত্রাক্ষর। তাঁদের গানের ব্যান্ড ‘দি ইস্টার্ন ব্লুজ’ কলকাতা পেরিয়ে মুম্বইয়ের ব্যাঙ্ক-কর্পোরেট মহলকেও তাক লাগিয়েছে! সকলেই ভেবেছিলেন, তাঁরা আসলে পেশাদার গাইয়ে। ব্যাঙ্কের কাজ সামলে সকলকে গান শোনানোর নেশায় মাতোয়ারা ‘ইস্টার্ন ব্লুজ’ এ বার ব্যাঙ্ক ও কর্পোরেট চৌহদ্দির বাইরের আম-শ্রোতার কাছেও পৌঁছতে চায়। গানের ভুবনে নিজেদের চেনাতে ব্যাঙ্ককর্মীদের নতুন ব্যান্ড তৈরি করে ফেলেছে গানভর্তি সিডি ‘বন্ধু হাত বাড়াও’। এই জুন থেকে সেই সিডির ঠিকানা এ শহরের নামী সব গান-বিপণি।

রেঘুর টেরাকোটা
জি রেঘু। ভাস্কর। ১৯৫৯-এ কেরলে জন্ম, সেখানেই ভাস্কর্যের কাজ শেখা। ’৮৮ থেকে তাঁর কাজের একক প্রদর্শনী শুরু। সম্মান স্বীকৃতি তো পেয়েইছেন, তাঁর ভাস্কর্যের সংগ্রহ রয়েছে দিল্লি ভোপালের নানা গ্যালারিতে। ‘টেরাকোটার কাজেই নিজেকে নিত্যনতুন অনুসন্ধান বা আবিষ্কার করি আমি।’ জানিয়েছেন রেঘু। এখন তাঁর একক প্রদর্শনী (তারই একটি ভাস্কর্যের ছবি সঙ্গে) চলছে সিগাল ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস-এ (৩৬সি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড) প্রতিদিন ১১-৮টা। চলবে ১৬ জুন অবধি।

আশিতে ত্রুফো
‘ত্রুফো মহৎ শিল্পী বলেই বিষয়বস্তু-নিরপেক্ষভাবে ভাষার কোন কারসাজি দেখান না। আসলে ত্রুফোর প্রত্যেকটি ছবিতেই বক্তব্য ও প্রকাশভঙ্গীর আশ্চর্য সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।’ ফরাসি পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোকে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের এ হেন মূল্যায়ন ফের ফিল্মরসিকদের মনে করানোর জন্যে তাঁর আশি বছরের জন্মদিন উপলক্ষে একগুচ্ছ ছবি দেখানোর আয়োজন নন্দন-এ, ১৬-১৭ জুন, তাঁকে নিয়ে বলবেন অশোক বিশ্বনাথন, সূচনার দিন বিকেলে।

দৃশ্য থেকে দৃশ্যে
বিজ্ঞানে স্নাতক, কিন্তু মাথার মধ্যে সিনেমা! সুতরাং, এফ টি আই আই, পুণে। তিনি জানেন, সিনেমার ভিতরে কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়। সেই সব দৃশ্য, অনুভূতিমালা তিনি ধরে রাখতে চান নির্মিত দৃশ্যকল্পে। জানেন, কোথাও দর্শক ঠিক খুঁজে নেবেন দৃশ্যে নিহিত ইশারা। ‘মায়াবাজার’ ছবির জন্ম তেমনই এক স্বপ্ন থেকে, এক প্রত্যয় থেকে। সেই প্রত্যয়ে ভর রাখেন বলেই জয়দীপ ঘোষ বিষণ্ণ হয়ে খেয়াল করেন, সিনেমা ক্রমেই নাটকের ফিল্মি রূপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ‘অথচ তা কেন হবে? সিনেমার নিজস্ব ভাষা আছে, তাকে আমরা কেন খুঁড়ে দেখব না?’ প্রশ্ন জয়দীপের। তাঁর আক্ষেপ এই যে বাংলা ছবির দর্শক কিন্তু এখনও বুদ্ধিদীপ্ত ছবির জন্য অপেক্ষা করে আছেন। ‘সেই প্রতীক্ষা যাতে দ্রুত শেষ হয়, সে জন্য প্রস্তুত হওয়া দরকার।’ অপু-ত্রয়ী, গু-গা-বা-বা, সুবর্ণরেখা, যদুবংশ প্রিয় বাংলা ছবি। প্রিয় পরিচালকের তালিকায় ঋত্বিক, সত্যজিৎ, আদুর, অরবিন্দনের পাশাপাশি পার্থপ্রতিম চৌধুরী (‘সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন’)! ভালবাসেন তারকভস্কি, সুবিয়েলা, কার্লোস সাউরা, বার্গম্যান-এর ছবি। আপাতত কলকাতার প্রান্তিক সমাজের এক বিচিত্র লেখককে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করবেন। অতঃপর শুরু হবে একটি হিন্দি ছবির কাজ। জয়দীপ ঘোষ ভেসে চলেছেন দৃশ্য থেকে দৃশ্যে।
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

নিষ্ঠা
ভিখারি, ভবঘুরে, পাগল এই সব চরিত্রই বেশি জুটত রোগাপাতলা মানুষটির। ছোট্ট বা অকিঞ্চিৎকর চরিত্র, কিন্তু নিষ্ঠা অপরিসীম। গৌতম ঘোষের পার-এ করেছিলেন ভবঘুরের চরিত্র। স্ত্রী মৌলি মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ছবিতে ব্যবহৃত পোশাকটি মেঝেতে ফেলে রাখতেন। যাতে ধুলোময়লা জমে সেটি সত্যিকারের ভবঘুরের পোশাক হয়ে ওঠে। পাগলের চরিত্র নিখুঁত করে তুলতে সারা দিনই বিড়বিড় করতে দেখা যেত মানুষটিকে। এমনই ছিলেন চরিত্রাভিনেতা সুনীল মুখোপাধ্যায়। জন্ম যশোরে। ছোটবেলায় মা মারা যান। যৌথ পরিবারের বন্ধন তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। বেরিয়ে পড়েছিলেন। ঠাঁই মিলেছিল ঢাকুরিয়ার চৌধুরী পরিবারে। সেখানেই বড় হওয়া। স্টার থিয়েটারে কলকাতার হ্যামলেট নাটকটিতে অভিনয় করার সময় নজরে আসেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। প্রথম ছবি নিম অন্নপূর্ণা। দেখা গিয়েছে গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেন, শ্যাম বেনেগালের মতো পরিচালকের ছবিতে। উল্লেখযোগ্য ছবি গৃহযুদ্ধ, ফেরা, তাহাদের কথা, কালপুরুষ, পার, পদ্মা নদীর মাঝি, আবার অরণ্যে, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার, সিটি অব জয়, বোস দ্য হিরো। নিম অন্নপূর্ণা-র জন্য সেরা অভিনেতা এবং ফেরা ও গৃহযুদ্ধ-য় সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। সিরিয়াল ও টেলিফিল্মেও পরিচিত মুখ ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন স্পষ্টবক্তা। পছন্দ না হলে সরাসরি বলে দিতেন। গত ২৪ মে আটষট্টি বছর বয়সে চলে গেলেন এই অভিনেতা। রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে। আগামী ১৪ জুন চিত্রধ্বনি ও নন্দন-এর উদ্যোগে নন্দন-৩ প্রেক্ষাগৃহে সন্ধে ছটায় সুনীল মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভা আয়োজিত হবে। দেখানো হবে তাঁর অভিনীত তালনবমী ছবিটি। সঙ্গের ছবিটি তারই একটি দৃশ্য থেকে।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.