মৌসুমি বায়ু ঠায় দাঁড়িয়ে
শীতের হিরো পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই বর্ষার ভিলেন
যার উপস্থিতিতে ক’মাস আগে শীতের কামড় প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠেছিল, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢোকা সেই ঝঞ্ঝাই এখন দেওয়াল তুলে দিয়েছে বর্ষার সামনে! শীতের নায়ক হয়ে গিয়েছে বর্ষার খলনায়ক!
ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে তামাম উত্তর ভারত জুড়ে প্রবল শৈত্যপ্রবাহের মূলে ছিল ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। মূলত তার দৌলতেই এ বার কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে শীত দীর্ঘায়িত হয়েছে, বহু দিন পরে জমিয়ে ঠান্ডা উপভোগ করেছেন মানুষ। কিন্তু কাশ্মীর ফেরত ঝঞ্ঝাই এ বার অন্য রূপ দেখাচ্ছে। বর্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে সে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গকে। মৌসুমি বায়ুর ছন্দচ্যুতির জন্য তার দিকেই আঙুল তুলছেন আবহবিদেরা। যদিও তাঁদের আশা, ঝঞ্ঝাটি আর দু’দিনে পরাক্রম হারিয়ে বর্ষাকে পথ করে দেবে।
দিল্লির মৌসম ভবন এপ্রিলে জানিয়ে দিয়েছিল, এ বার বর্ষা ঢুকবে নির্দিষ্ট সময়ে, এবং সারা দেশে স্বাভাবিক হারে বৃষ্টি হবে। জুনের গোড়া পর্যন্ত ওই পূর্বাভাসেই অটল ছিল দিল্লি। এখন দেখা যাচ্ছে, হিসেবে গোড়াতেই কিছু ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। প্রথমত, আরব সাগরে বর্ষা এসেছে বিলম্বে। তাই কেরল পৌঁছাতে তা দেরি করে ফেলেছে। ৫ জুন কেরলে ঢোকার পরের চব্বিশ ঘণ্টায় অবশ্য দ্রুতবেগে এগিয়ে বর্ষা পৌঁছে যায় কর্নাটক-গোয়া সীমানায়। অন্য প্রান্তটি ওই দিনই উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে ডুয়ার্স ছুঁয়ে ফেলে। কিন্তু তার পরে বর্ষা যেন থম মেরে গিয়েছে। ৬ জুন সে যেখানে ছিল, রবিবার সেই অবস্থা থেকে এতটুকুও সরেনি!
অতএব, কেরল-কর্নাটক-গোয়ায় এখন ভরা বর্ষা। অঢেল বর্ষণে স্নিগ্ধ উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তরবঙ্গ। অথচ দক্ষিণবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারত প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিটাও পাচ্ছে না! শুরুতেই এ হেন অসামঞ্জস্যের দরুণ মৌসম ভবনের ‘স্বাভাবিক’ বর্ষার পূর্বাভাস নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। যদিও আবহবিদেরা তাঁদের পূর্বাভাস নিয়ে আশাবাদী। তাঁরা এই পরিস্থিতির মূল দায়টা চাপিয়েছেন পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উপরেই। কী ভাবে?
মৌসম ভবনের ব্যাখ্যা: ক’দিন আগে শক্তিশালী একটি ঝঞ্ঝা আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে ঢুকেছিল। সেটা গত সপ্তাহে কাশ্মীরে এসে পড়েছে, এবং প্রভাব ফেলেছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বায়ুপ্রবাহে। বস্তুত ওই ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে ঢোকার পরেই মৌসুমি বায়ুর স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে বলে আবহবিদদের দাবি। তবে তাঁদের আশা, কাল মঙ্গলবারের মধ্যে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাটি দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে বর্ষা ফিরবে নিজস্ব ছন্দে।
কিন্তু তার আগে পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গবাসীর নিস্তার নেই। এখানে বর্ষা কবে ঢুকবে, তার কোনও হদিসও মিলছে না। বরং মৌসম ভবন জানাচ্ছে, গঙ্গা অববাহিকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি রয়েছে। পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, উত্তর ছত্তীসগঢ়, ওড়িশার কিছু এলাকা, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও লাগোয়া গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কাল পর্যন্ত তা বজায় থাকবে। বইবে গরম হাওয়া।
আবহবিদেরা তাই মানুষকে হুঁশিয়ার থাকতে বলছেন। কলকাতা ও আশপাশে সকাল বা সন্ধ্যায় বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বিক্ষিপ্ত ঝড়-জলের পূর্বাভাসও দিয়ে রেখেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। রবিবার বিকেলে কলকাতার আকাশ কালো হয়ে এলেও শেষমেশ ঝড়-বৃষ্টি অবশ্য হয়নি। তাতে অস্বস্তি আরও বেড়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.