চাকা খসা বিমান নির্বিঘ্নে নামালেন মহিলা পাইলট
বিমানসেবিকার ঘোষণা শুনে যাত্রীদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। ধরে নিয়েছিলেন, আর বুঝি বাড়ি ফেরা হল না!
আশঙ্কাটা অমূলকও ছিল না। কারণ, বিমানের সামনের একটা চাকা খসে পড়েছে। এ অবস্থায় ওড়া গেলেও নিরাপদে অবতরণ অত্যন্ত কঠিন!
সেই কঠিন পরীক্ষাতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে আরোহীদের কার্যত নতুন জীবন দিলেন অ্যালায়েন্স এয়ারের মহিলা পাইলট, ক্যাপ্টেন ঊর্মিলা।
ক্যাপ্টেন ঊর্মিলা
রবিবার সকালে শিলচর থেকে গুয়াহাটি উড়ান যে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল, সে জন্য কর্তৃপক্ষ সিংহভাগ কৃতিত্ব দিচ্ছেন ঊর্মিলাকে। তাঁর দক্ষ পরিচালনাতেই যাত্রী-কর্মী সমেত ৫১ জন আরোহী নিয়ে ‘প্রতিবন্ধী’ বিমানটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে নিরাপদে নেমেছে বলে অ্যালায়েন্স সূত্রে মন্তব্য করা হয়েছে। এ দিন সকালে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে শিলচরের মাটি ছাড়ার পরই বিমানটির সামনের জোড়া চাকার একটি মাটিতে খসে পড়ে। যাত্রীদের তখন কিছু জানানো হয়নি। বিপদ জেনেও পাইলটরা বিমানটি সওয়া ঘণ্টা উড়িয়ে নিয়ে আসেন গুয়াহাটি বিমানবন্দরের উপরে।
চাকা খসে গেলে বিপদটা কী? বিমানবন্দর সূত্রে খবর, অবতরণের পরে সামনের একটামাত্র চাকায় ভর করে ছুটতে গেলেই বিমান রানওয়েতে মুখ থুবড়ে পড়ত। আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল পুরোমাত্রায়। তা হলে বিমান কী ভাবে নিরাপদে নামল? এখানেই ক্যাপ্টেন ঊর্মিলার কৃতিত্ব।
অ্যালায়েন্স-কর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কিছুটা বাড়তি সময় ধরে আকাশে চক্কর কাটছিলেন ঊর্মিলা। যাতে ট্যাঙ্কের জ্বালানি কমে গিয়ে বিমান হালকা হয়ে যায়। এর পরে অবতরণের পালা। প্রথমে পিছনের চাকা মাটি ছোঁয়। তার পরে সামনের চাকা রানওয়ে স্পর্শ করামাত্র পাইলট দু’টো ইঞ্জিন বন্ধ করে আচমকা ব্রেক কষে রানওয়েতে একেবারে দাঁড় করিয়ে দেন বিমানটিকে। সেখানেই যাত্রীদের নামিয়ে আনা হয়।
অবতরণের পরে। রবিবার গুয়াহাটি বিমানবন্দরে।
কুড়ি বছর ধরে বিমান চালাচ্ছেন দিল্লির মেয়ে ঊর্মিলা। বয়স মধ্য চল্লিশ ছাড়িয়েছে। তবে কম্যান্ডারের পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন সবেমাত্র দু’-তিন মাস আগে। সহচালক থেকে চালক পদে তাঁর চূড়ান্ত অনুমোদন-পত্রে সই না করেই বেসরকারি বিমান সংস্থায় চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন ঊর্মিলার ‘বস’। ঊর্মিলা রীতিমতো জোর করে তাঁর কাছ
বিমানের ক্ষতিগ্রস্ত চাকা
থেকে সই আদায় করে তবে ছাড়েন। এই জেদটাই এ দিন তিনি কাজে লাগালেন বিপদের মুহূর্তে।
বিমানসংস্থা-সূত্রের খবর: ঊর্মিলা তাঁর রিপোর্টে লিখেছেন, এ দিন শিলচর ছেড়ে ওঠার পরেই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) জানায়, বিমান থেকে চাকা খসে পড়েছে। দেখা যায়, সামনের বাঁ দিকের চাকাটি পড়ে গিয়েছে। এটি খুব বড় যান্ত্রিক ত্রুটি। ওই অবস্থায় তাঁর শিলচরেই ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি জানতেন, নামতে সমস্যা হবে। তাই শেষ মুহূর্তে যাত্রীদের হুঁশিয়ার করা হয়।
পাইলট-জীবনে এই প্রথম এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন ঊর্মিলা। কিন্তু একটুও না ঘাবড়ে প্রশিক্ষণের সময়ে নকল ককপিটে যে ভাবে জরুরি অবতরণ অভ্যাস করতেন, ঠিক সেই রকম ঠান্ডা মেজাজে বিমানটিকে মাটিতে নামিয়ে সময়ের নিখুঁত হিসেবে ব্রেক কষেন তিনি।
গোড়ায় যাত্রীরা ঘুণাক্ষরেও আঁচ পাননি যে, কত বড় বিপদের মধ্যে তাঁরা পড়েছেন। গুয়াহাটির আকাশে চক্কর কাটার সময়ে বিমানসেবিকারা যাত্রীদের মালপত্র পিছনের দিকে সরাতে শুরু করেন। যাত্রীদের সতর্ক করে ঘোষণা হয়, ‘জরুরি পরিস্থিতি’ দেখা দিয়েছে। আতঙ্ক ছড়ায় সেই শেষ প্রহরে। যাত্রী অভিজিৎ সাহার কথায়, “ওঠার পরে এয়ার হোস্টেসরা ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং নিয়ে নিয়মমাফিক যা যা বলেন, এ দিনও তা বলা হয়েছিল। কিন্তু নামার মিনিট কুড়ি আগে ফের সেই ঘোষণা হওয়ায় বুঝলাম, গোলমাল হয়েছে।” যাত্রীরা জানিয়েছেন, নির্দেশ মতো তাঁরা সকলে সামনের আসনের নীচে মাথা গুঁজে দিয়েছিলেন, ‘সঙ্কট কালে’ যেমনটা করতে হয়।
গুয়াহাটি এটিসি’র কর্তা মলয় দত্ত জানান, অ্যালায়েন্সের বিমান যে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নামতে চলেছে, তা জানার পরে গুয়াহাটি বিমানবন্দরেও তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। গুয়াহাটির আকাশে তখন আরও তিনটি বিমান চলে এসেছিল। সেগুলোকে নামিয়ে আনার পরে ক্যাপ্টেন ঊর্মিলাকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়। “জানাই ছিল, অ্যালায়েন্স নামার পরে রানওয়ে কিছু ক্ষণের জন্য আটকে যাবে,” বলেন গুয়াহাটি বিমানবন্দরের এক কর্তা।

ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত ও পিটিআই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.