|
|
|
|
|
|
|
অন্ধকার থেকে আলোয় |
বিনোদবিহারীর সৃষ্টি |
স্মৃতি ধূসর আলোতে নিজের শৈশবকে দেখেছি’। সেই ধূসর স্মৃতিকে নানা ভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪-১৯৮০)। আশৈশব লড়াই নষ্ট হতে থাকা চোখের সঙ্গে। চোখ যত দৃশ্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়, ততই একদৃষ্টে চেয়ে থাকা বস্তুর দিকে আর ছবির মতো গেঁথে নেওয়া চলে মনের আয়নায়। বিনোদবিহারীর এই সত্তাকে একমাত্র তুলনা করা যায় বেঠোফেনের সুর সৃষ্টির সঙ্গে। সেই অনন্য কীর্তি শিল্পীর প্রদর্শনী এ বার কলকাতায়। প্রদর্শনীটির সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হল বিনোদবাবু যখন কলাভবনের ছাত্র, সেই সময়কার কিছু কাজ যা মূলত পোস্টকার্ডে অঙ্কিত (সঙ্গে তারই একটি, ১৯২২), চিঠির সঙ্গে। |
|
এই কাজগুলো এক অন্য বিনোদবিহারীর পরিচয় তুলে ধরে। ‘বিশ্বভারতী’ পত্রিকার মূল প্রচ্ছদ বা অবনীন্দ্রনাথের পথে বিপথে গ্রন্থের প্রচ্ছদ, রবীন্দ্রসংগীত (‘বীণা বাজাও মম অন্তরে’) তাঁর দুরন্ত ক্যালিগ্রাফির ছবি হয়ে ওঠাকে ব্যক্ত করে। কার্ড স্কেচে করা খোয়াই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম, তাল গাছ, মুসৌরি, এই সবের ভেতরই আছে পরিবেশ ও পরিস্থিতির গন্ধ। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে থাকবে শিল্পীর দৃষ্টিহীন পর্বের কিছু বিস্ময়কর কোলাজ, লিথোগ্রাফ এবং কালি-তুলির বড় কাজ। কলকাতার রাস্তাঘাটকে অনেক ভাবে দেখেছেন এবং এঁকেছেন তিনি। তা-ও দেখা যাবে প্রদর্শনীতে। থাকবে তাঁর ছাপাই ছবির অনেক নিদর্শনও। সব মিলিয়ে একেবারে অন্ধকারে থাকা তাঁর ছবির বড় অংশ উন্মোচিত হতে চলেছে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন ১৪ জুন ‘আকার প্রকার আর্ট গ্যালারি’তে। চলবে এক মাস। ১৬ জুন সাড়ে ৫টায় দেখানো হবে সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্র ‘ইনার আই’। সমগ্র পরিকল্পনাটি শিল্পকলা-ইতিহাসের গবেষক দেবদত্ত গুপ্তের। দীর্ঘ দিন ধরেই আড়ালে থাকা শিল্পীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। নন্দলালের সফল প্রদর্শনীর পর এ বার তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য বিনোদবিহারী। শান্তিনিকেতনের নানা পরিবার ও বিশিষ্টজন তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সহযোগিতা করেছেন অনাথনাথ দাস, উমা মিত্র, মল্লিকা মিত্র, শিবাদিত্য সেন, শিল্পী মনোজ দত্ত, কলাভবনের কিউরেটর সুশোভন অধিকারী প্রমুখ।
|
ফকিরি |
লালন শাহ-র ঐতিহ্য আজও বহন করছেন নদিয়া-গোরভাঙ্গার মনসুর ফকির। বারো বছর বয়সে বাবা প্রবাদপ্রতিম আজহার ফকিরের হাত ধরে তাঁর সাধনা তথা গানের শুরু। যাত্রাপথে ধর্মীয় মৌলবাদীদের নানান বঞ্চনা ও অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার। চার দশক ধরে ফকিরি গানের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য প্রবক্তা রূপে দুই বাংলার সহজিয়া গানের আঙিনায় সমাদৃত হয়েছে তাঁর গানের আর্তি। সারা জীবনে তিনি অনেক সম্মান পেয়েছেন। ৫-৮ জুন সল্টলেক পূর্বশ্রী সভাগৃহে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত একটি ফকিরি গানের কর্মশালা পরিচালনা করবেন তিনি। সহযোগিতায় লোকগানের দল সহজিয়া। ৮ জুন সন্ধে ৬টায় মনসুর ফকির ও সহজিয়া-র যৌথ অনুষ্ঠান। এ দিকে প্রয়াত সতীর্থ শিল্পী চট্টগ্রামের মারুফ রব্বান কাদেরীর স্মৃতিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা তৈরি করেছেন ‘মরমি’। উদ্দেশ্য দুই বাংলা ও অসমের মধ্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটানো। ৮ জুন, সন্ধ্যায় শিশির মঞ্চে সূচনা হবে ‘মরমি’র। অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হবে যাত্রাশিল্পী শান্তিগোপালকে।
|
|
মহড়া চলছে |
‘এটা নাটক নয়, কিন্তু চলনে বলনে সমস্ত কিছু যেহেতু নাটক থেকে নেওয়া, তাই নাটক-ই বলছি। এটা আসলে পুরনো বাংলা থিয়েটারের গান নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে আড্ডা।’ আশির দশকে আলোকশিল্পী তাপস সেনের স্ত্রী গীতা সেন পুরনো থিয়েটারের গান নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। তা নিয়েই গান ও নাচের অনুষ্ঠান। প্রথমে একক ভাবে, পরে ‘অনুুরণন’ নামে দল গড়ে। তাঁর মৃত্যুর পর নিয়মিত অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। থেকে যায় সেই সব গান নিয়ে তাঁর বই অতীতের সুরে। এটিকেই মঞ্চে ফেরাতে উদ্যোগী ‘ঐহিক’। ‘মহড়া চলছে’ নামের এই নাটকে থাকবে চৈতন্যলীলা (সঙ্গের ছবি), বিল্বমঙ্গল, আবু হোসেন, আলিবাবা, চিরকুমার সভা’র মতো নাটকের অংশ-- গল্প, নাচ এবং অভিনয়। পরিকল্পনায় অরিন্দম রায়। ৬ জুন অ্যাকাডেমিতে এটি দেখা যাবে।
|
|
প্রতিভার সম্মান |
এক কালে কলকাতার একটা মস্ত সুনাম ছিল এই শহর প্রতিভাবান গাইয়ে-বাজিয়েদের যোগ্য সম্মান দিত। কালেদিনে সেই সুনাম অনেকখানি ক্ষয়ে গিয়েছে। শহরে এখনও শাস্ত্রীয় সংগীতের আসর বসে, কিন্তু একেবারে নবীনদের পক্ষে সেখানে গাওয়ার সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ‘আনন্দী’ সংস্থা এ বার এ দিকেই উদ্যোগী। বংশগৌরবহীন, কিন্তু প্রতিভাবান গায়কদের খুঁজে বের করে, তাঁদের যথাযোগ্য সাম্মানিক দিয়ে আসরে গাওয়ার সুযোগ করে দিতে তৈরি হল কলকাতা মিউজিক ফোরাম। সম্প্রতি ফোরামের শাস্ত্রীয় সংগীতের আসর হয়ে গেল কলকাতার বিড়লা আকাডেমি সভাঘরে।
|
|
মুক্তবেড়ি |
সুজিত দলুই, স্বপন বারুই, বা গিরিধারী কুমার। ওদের ঠিকানা বহরমপুর, মেদিনীপুর বা দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। ওরা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ওদের অন্য পরিচয় ওরা লোকগানের দল ‘মুক্তবেড়ি’র সদস্য। আগে এরা কেউ কীর্তন গাইত, কারও শুধু গানের গলা ছিল। সংশোধনাগারের এই রকম আট জন আবাসিককে নিয়ে দল গড়েছেন লোকসঙ্গীত শিল্পী তপন রায়। বছর দুয়েকের প্রস্তুতি। সঙ্গে বাজনার তালিম। বন্দি জীবনে একটু ভাললাগা আনার চেষ্টা। অবশেষে সারেগামা থেকে বেরোচ্ছে এদের গানের ক্যাসেট। এর আগে তপনবাবু তৈরি করেছিলেন মেয়েদের লোকগানের দল ‘মা-দল’। ৬ জুন রবীন্দ্রসদনে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘মুক্তবেড়ি’ ও ‘মা-দল’-এর অনুষ্ঠান। সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংশোধন প্রশাসন বিভাগ।
|
|
উত্তরসূরি |
বয়স তিরাশি। দেহ সুঠাম। আর মনে তরুণের উৎসাহ। দিন নেই রাত নেই দৌড়চ্ছেন গ্রামে গঞ্জে। ইস্কুলে কলেজে কিংবা কোনও খেলার মাঠে। কাঁধে টেলিস্কোপ বা প্রজেক্টর। দুরবিনে চোখ রেখে আকাশ। অথবা প্রজেক্টর থেকে পর্দায় তার ছবি। অনন্ত অসীম ব্রহ্মাণ্ড। গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সি। তাদের কত রং আর রূপ। হ্যাঁ, ছেলে মেয়ে বুড়ো বুড়িদের এই বয়সেও এ ভাবেই মহাবিশ্ব চেনাচ্ছেন অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। মুছে দিতে চাইছেন অনেকের ভ্রান্তিবিলাস। তারস্বরে বোঝানোর চেষ্টা করছেন জ্যোতিষ কেন বুজরুকদের জ্যোতির্বিজ্ঞান। পজিশনাল অ্যাস্ট্রনমি সেন্টারের প্রাক্তন অধিকর্তা অমলেন্দু বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিল ‘জগত্তারিণী পদক’। মায়ের স্মৃতিতে যা ১৯২০-তে চালু করেন স্যর আশুতোষ। প্রথম পুরস্কৃত রবীন্দ্রনাথ। শরৎচন্দ্র, নজরুল, বিভূতিভূষণ, তারাশংকর, আশাপূর্ণা রয়েছেন তালিকায়। তাঁদের উত্তরসূরি হলেন অমলেন্দু। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে লেখা পাঁচটি বই এবং হাজারেরও বেশি প্রবন্ধের জন্য।
|
|
যাওয়া তো নয়... |
‘মা তুমি সত্যি সত্যি চলে যাবে?’ মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে ছেলের মুখে এই প্রশ্ন শুনে রবীন্দ্র-রচনাবলির দিকে হাত তুলে দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘ওই যে পনেরো ভল্যুম আছে, পড়লে বুঝবি এই যাওয়াটা আসলে কিছু না।’ হাসপাতালে যখন মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছেন, হাতের কাছেই থাকত কাগজকলম। ভেন্টিলেশনে থেকেও লিখতেন ছড়া, মনের কথা কিংবা চিঠি। ২৪ মে চলে গেলেন কলকাতা পাঠভবন স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষয়িত্রী ভামতী সেনগুপ্ত। সাহিত্যিক কিরণকুমার রায়ের এই কন্যার জন্ম কলকাতায় ১৯৩৫-এ। সিমলা-দিল্লি-কলকাতায় পড়াশোনা। বিষয় গণিত এবং ইংরেজি। কাজ করেছেন শহরের নানা স্কুলে। ১৯৬৫-তে সহকর্মীদের সঙ্গে সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে বেরিয়ে উমা সেহানবীশের নেতৃত্বে অন্যদের সঙ্গে গড়ে তোলেন কলকাতা পাঠভবন। ১৯৮৫-তে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে পড়াশোনা করেন জাপানি ভাষা নিয়ে। কিছু দিন কলকাতার জাপানি দূতাবাসে জাপানি ভাষার শিক্ষকতা করেন। বিদগ্ধ-নম্র মানুষটি ভালবাসতেন সাহিত্য, গান, আড্ডা, রান্নাবান্না, আর ছড়া লিখতে। সংস্কার মুক্ত ভামতীর অনুরোধ ছিল পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের বদলে যেন তাঁর প্রিয়জনদের নিয়ে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। ১০ জুন মধূসুদন মঞ্চে সকাল দশটায় সেই স্মরণসভার আয়োজন করেছেন কাছের জনেরা।
|
|
সিলেট-কন্যা |
প্রায় আশি বছর বয়স হল সেই সিলেট-কন্যার। গানের ভুবনে কিঞ্চিৎ আড়ালেই থাকা সেই কন্যা, বিজয়া চৌধুরী খবরে এলেন আবার। সম্প্রতি উইভার্স স্টুডিয়োয় প্রকাশিত হল তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি ‘দি ইনকম্পেয়ারেবল বিজয়া চৌধুরী: সংস অব টেগোর’-এর (বিহান মিউজিক)। সুচিত্রা মিত্র ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমকালীন এই শিল্পী নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদের গান এবং হিন্দি ভজনেও স্মরণীয়। ১৯২৫-এ সিলেটে জন্ম, তাঁর আত্মজীবনীও সিলেট কন্যার আত্মকথা। তাঁর পুত্র লেখক অমিত চৌধুরী বলছেন, ‘আমার মা আর সুবিনয় রায় নির্লিপ্ত এক ভঙ্গিতে, ব্যক্তিগত আবেগ দিয়ে ভরিয়ে না তুলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। সেই ধারা ব্যতিক্রমী, সন্দেহ নেই।’
|
|
দেবলীনা |
|
‘এখন সব শিল্প ও প্রায় সব কর্মের দ্বারই মেয়েদের পক্ষে অবারিত। নতুন যুগের নতুন পথে তোমাদের জয় হোক্ এই আশীর্বাদ।’ ইন্দিরা দেবী চিঠিতে লিখেছিলেন দেবলীনাকে, তিনি ইন্দিরা দেবী আর প্রমথ চৌধুরীর জীবন-সায়াহ্নে যে ছবিটি তুলেছিলেন সেই প্রেক্ষিতে। দেবলীনা ও তাঁর যমজ বোন মনোবীণাকে (চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের স্ত্রী) ছেলেবেলা থেকেই ছবি তুলতে শিখিয়েছিলেন তাঁদের পিতা বিনোদবিহারী সেনরায়। ১৯৩৭-এ দু’বোনেরই নামে ‘সচিত্র ভারত’-এ পাতাজোড়া ফোটোগ্রাফ বেরয়। দু’বোনেরই ১৯৪০-এ ফোটোগ্রাফিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া-র পোস্টাল পোর্টফোলিও মুভমেন্ট-এ সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দেবলীনা শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের ছবিও যেমন তুলেছেন (সঙ্গে তারই একটি), তেমনই তুলেছেন জওহরলাল-ইন্দিরারও বেশ কিছু দুর্লভ মুহূর্তের ছবি। ইলাস্ট্রেটেড উইকলি-সহ বিশিষ্ট পত্রপত্রিকায় ছবি বেরত তাঁর, ফোটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল-এর প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি। সেতারে তালিম নিয়েছিলেন, শখ ছিল বই পড়া আর বাগান করায়। পরে ছবি তোলা কমে গেলেও ফোটোগ্রাফির আধুনিক চর্চা নিয়ে রীতিমত ওয়াকিবহাল থাকতেন। জন্ম ঢাকায় ১৯১৯-এ, বিয়ে কলকাতায় ’৪৬-এ নীতীশচন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে, সম্প্রতি প্রয়াত হলেন এক পুত্র, দুই কন্যাকে রেখে।
|
|
জাপানি বধূ |
১৯৪১-এর ডিসেম্বরে নেতাজি-র অনুরোধে টোকিয়ো থেকে নিয়মিত আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর পক্ষে রেডিয়ো মারফত প্রচার চালাতেন হরিপ্রভা। কারও কি মনে আছে হরিপ্রভা মল্লিককে, ঢাকার ব্রাহ্ম পরিবারের সেই শিক্ষিতা সুন্দরী বুদ্ধিমতী মহিলাকে? ১৯০৭-এ তিনি ঢাকা-নিবাসী জাপানি ওয়েমন তাকেদাকে বিয়ে করে ১৯১২-য় চলে যান জাপানে। লিখেছিলেন বঙ্গমহিলার জাপানযাত্রা, (১৯১৫)। বইটিতে জাপানের সাধারণ মানুষের গার্হস্থ্য জীবনের অনুপুঙ্খ লিপিবদ্ধ করেছিলেন হরিপ্রভা মল্লিক-তাকেদা (১৮৯০-১৯৭২)। মঞ্জুশ্রী সিংহ এটি সহ হরিপ্রভার অন্যান্য রচনা সংকলন করেন কয়েক বছর আগেই (ডি এম লাইব্রেরি)। এ বার তাঁকে নিয়ে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল তৈরি করেছেন তথ্যচিত্র ‘জাপানী বধূ’। আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের উদ্যোগে দেখা যাবে গোর্কিসদনে ৫ জুন সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।
|
|
সেই আমি |
শোনো, আমি একটা কথা বলি। রেকর্ডিং কোম্পানির লোক আমার এখানে আসবে। ওই ড্রেন পেরিয়ে কিন্তু এখানে আসতে হবে ওদেরকে। তবেই আমি রেকর্ড করব।’ পাইকপাড়া এলাকার সেই ছোট্ট বাড়িটায় ছেলেকে বলেছিলেন তিনি। আর ঘটেছিলও তাই। ৫৭ বছর বয়সে তাঁর প্রথম ক্যাসেট হয়েছিল সে ভাবেই। ১৯৭৩-এ যে পীযূষকান্তি সরকারের (১৯৩৭-২০০১) দুটো আধুনিক গানের রেকর্ড বেরিয়েছিল তাঁকে কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু নব্বই দশকের সেই ঝড়-তোলা রবীন্দ্রসঙ্গীতের মঞ্চগুলি একাই দাপিয়ে বেড়াতেন যিনি, রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্যও হাউসফুল হওয়ার বিরল ঘটনাগুলি ঘটে গিয়েছে যাঁর জন্য, সেই পীযূষকান্তিকেও কি কেউ মনে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথের এই সার্ধশতজন্মবর্ষে? গান-পথের সব বাধা ইতিমধ্যে ঝরে পড়েছে, তথাকথিত নিরীক্ষা-য় মেতেছেন অনেকেই, তবু পীযূষকান্তি যেন এখনও বিস্মৃত। এ বছর তাঁর জন্মের পঁচাত্তর বছর। সেই উপলক্ষে তাঁর লাইভ রেকর্ডিং থেকে অপ্রকাশিত গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করল সারেগামা, ‘সেই আমি’। চেনা গানের পাশাপাশি সেখানে ঠাঁই পেয়েছে ‘হে আকাশবিহারী নীরদবাহন জল’-এর মতো স্বল্পচেনা রবীন্দ্রসঙ্গীতও। |
|
|
|
ব্যতিক্রমী |
তাঁর সহযাত্রীদের প্রত্যেকেই যখন চুটিয়ে কাজ করছেন তখন তিনিই শুধু বেকার। ১৯৫৭ থেকে ১৯৮৭ তিন দশকে সিনেমা করেছেন মাত্র ৭টি অন্তরীক্ষ, গঙ্গা,অগ্নিশিখা, জীবনকাহিনী, আকাশছোঁয়া, পালঙ্ক আর নগপাশ। কিন্তু এক ‘গঙ্গা’ আর ‘পালঙ্ক’ ছাড়া তাঁর বেশির ভাগ ছবিই আজ জনতার বিস্মৃতির অতলে। তবু, বাংলা ছবির সেই নতুন সময়ে, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, তপন সিংহের পাশে আজও উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। সে কেবল তাঁর পরিচালনার জন্যই নয় বোধহয়, তার চেয়ে বেশি তাঁর বিচিত্র বিষয় নিয়ে ছবি করার জন্য। সমরেশ বসুর কলম থেকে মাছমারাদের জীবন, আত্মহত্যা-প্রবণ এক বৃদ্ধকে জীবনে টেনে আনার গল্প কিংবা একটি পালঙ্ককে ঘিরে টানাপড়েন। অথচ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রাজেন তরফদার সে ভাবে আলোচিতও হননি। ১৯১৭-র ১৭ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম। ১৯৪০-এ গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে কর্মজীবন শুরু করেন ডে ওয়াল্টার টমসন-এ। বিজ্ঞাপন-জগৎ থেকেই সিনেমার জগতে আসা, ১৯৫৭-য়। তখন থেকেই সর্বক্ষণের চলচ্চিত্রকার-জীবন শুরু। শুধু পরিচালনাই নয়, অভিনয়ও করেছেন মৃণাল সেনের ‘আকালের সন্ধানে’ ও ‘খণ্ডহর’, শ্যাম বেনেগালের ‘আরোহণ’ আর শেখর চট্টোপাধ্যায়ের ‘বসুন্ধরা’য়। তাঁকে নিয়ে বিশেষ একটি সংকলন করল ‘বৈশাখী’ পত্রিকা। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাতী তরফদার, সাধন চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের স্মৃতিচারণ, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, শতদ্রু চাকী প্রমুখের মূল্যায়ন, রাজেন তরফদারের নিজের লেখা, সহকর্মীদের স্মৃতিচারণ, পুরনো পত্রিকা থেকে চলচ্চিত্র সমালোচনা, চিত্রনাট্যের সঙ্গে আছে কয়েকটি আলোকচিত্রও। |
|
|
|
|
|
|
|