একেই বলে ‘রাবড়ি’ পাক!
ভোটে দাঁড়িয়েছেন গিন্নি। কিন্তু তাঁর পিছনে কর্তার ল-ম্বা ছায়া।
এ বার ভোটে সব ওয়ার্ড মিলিয়ে মহিলা প্রার্থী ৫৭ জন। এর মধ্যে অন্তত চার জন ‘স্বামী-গরবে গরবিনী’।
গিন্নি নম্বর ১: দুর্গাপুর ৩ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় নিজে ভোটে দাঁড়াননি। কিন্তু ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড় করানো হয়েছে তাঁর স্ত্রী শেফালিকে। প্রখর গরম উপেক্ষা করে গিন্নির হয়ে প্রচারে দৌড়ে বেড়িয়েছেন কর্তা। রেলমন্ত্রী মুকুল রায় সভা করে গিয়েছেন ওই কেন্দ্রে। শেফালিদেবী সরাসরিই বলছেন, “উনি আছেন মাথার উপরে ছাতা হয়ে।” |
ছাতায় অবশ্য ফুটো আছে! এপিএল কার্ড থাকা সত্ত্বেও বিপিএল তালিকায় সুনীলবাবুর পরিবারের নাম উঠেছে বলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল সিপিএম। পর দিন সকালেই অবশ্য তিনি মহকুমাশাসকের কাছে নাম বাদ দেওয়ার আর্জি নিয়ে দৌড়ন। পরে দাবি করেন, তাঁদের হাতে বিপিএল কার্ড নেই। ফলে, অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না!
গিন্নি নম্বর ২: এমএএমসি এলাকায় তৃণমূলের দাপুটে নেতা শঙ্করলাল চট্টোপাধ্যায়েরও কাজকর্ম ও চালচলন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীরা তো বটেই, ঠারেঠোরে মন্দ বলেন তাঁর দলের কিছু লোকজনও। তাঁকে দাঁড় করানো হয়নি। তিনি যে ওয়ার্ডে থাকেন, সেই ২৩ নম্বর এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সেখানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর স্ত্রী শিখাকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর পূর্বে দলীয় প্রার্থী, বর্তমানে বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে খুব খেটেছিলেন শঙ্করবাবু। লোকে বলছে, তারই পুরস্কার মিলেছে এ ভাবে।
শিখাদেবী অবশ্য একেবারে হেলাফেলা নন। তিনি নিজে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগও দেন। তাই শঙ্করবাবু গলা উঁচিয়ে দাবি করছেন, তিনি সাহায্য করছেন ঠিকই, তবে তাঁর গিন্নিও কম যান না। নিন্দুকেরা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) অবশ্য বলছেন, ‘শিখাদি জিতলে পুরো ‘রাবড়ি কেস’ হবে!” |
গিন্নি নম্বর ৩: স্বামী যদি মেয়র হন, স্ত্রী থাকবেন কাছেই। গানের জন্য শহরে খ্যাতি আছে অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে শান্তিনিকেতন থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন এক সময়ে। বাড়িতে যত কাজই থাকুক, নিয়ম করে সঙ্গীত চর্চা করেন। কিন্তু তাঁর আর এক পরিচয়, তিনি দুর্গাপুর পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী।
অনিন্দিতাদেবী এখন অনেকটা ঝাড়া হাত-পা। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে বেঙ্গালুরুতে পড়াশোনা করছে। অপূর্ববাবু সারা দিন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু গিন্নিকে জড়াননি। মাঝে-মধ্যে টুকটাক সভায় যেতেন, এই পর্যন্ত। কিন্তু সেই ‘শান্তি’ গিয়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়ানো ইস্তক চষে বেড়াতে হয়েছে এ-পাড়া ও-পাড়া। জিতলে কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না বলেই অবশ্য তিনি আশা করছেন। অপূর্ববাবুর সার্টিফিকেট, “ও তো এমনিতেই বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে যুক্ত!” তিনি নিজেও প্রার্থী। কর্তা-গিন্নি দু’জনে জিতলে তো আর কথাই নেই। হাত বাড়ালেই বন্ধু!
গিন্নি নম্বর ৪: শাশ্বতী কর্মকার অবশ্য যাকে বলে ‘পুরনো পাপী’। ইতিমধ্যেই পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে, কাউন্সিলরের জামা গায়ে চড়াচ্ছেন। গত বারই নিজের ওয়ার্ড ২৬ নম্বরে তাঁকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে এনেছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বংশীবদন কর্মকার। অতএব কুর্সিতে বসা তাঁর অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। |
গত বারই নিজে ২৭ নম্বরে সরে গিয়েছিলেন বংশীবাবু, জিতেওছিলেন। সেই ‘উইনিং কম্বিনেশন’ এ বার আর বদলাননি। নিজের ওয়ার্ডে প্রচারের ফাঁকে-ফাঁকে স্ত্রীর ওয়ার্ডেও প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। শাশ্বতীদেবীর মতে, “আগের বারের মতো এ বার হয়তো উনি এই ওয়ার্ডে প্রচারে সে ভাবে সময় দিতে পারেননি। তবু যা করেছেন সেটাই যথেষ্ট। আশা করি, বাসিন্দারা দু’জনকেই নির্বাচিত করবেন।” আর বংশীবাবু মৃদু হেসে বলছেন, “দেখা যাক।”
বিহারে রাবড়ি দেবীকে দাঁড় করিয়ে যখন জিতিয়ে এনেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব, লোকে বলেছিল ‘জায়া তো নয়, ছায়া!’
দুর্গাপুরের গিন্নিরা কতটা জায়া আর কতটা ছায়া, তা অবশ্য ভোটারই ভাল জানেন!
|
শেষ বেলার প্রচারে পথে নামল সব পক্ষই।
শুক্রবার দুর্গাপুরের নানা এলাকায় ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান। |