উত্তেজিত ‘অগ্নিনক্ষত্রম’: ফাইনালে কলকাতার সামনে চেন্নাই
কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখেই পড়লেন গম্ভীররা
চেন্নাই আর কলকাতার মধ্যে এই মে মাসের শেষাশেষি ‘কমন’ কী? বাচ্চাদের ক্যুইজেও কেউ অন্তত এই প্রশ্নটা করবে না। সবাই জানে এর উত্তর। গরম!
কলকাতায় যেমন বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকা, করমণ্ডল উপকূলের শহরেও তা-ই। বরং আরও এক কাঠি সরেস। পারদের ইচ্ছেমতো চল্লিশ পেরোনোটা নয়, সেটা তিনের ঘরে নামলেই বরং ‘ব্রেকিং নিউজ’। মে-র মাঝামাঝি থেকে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ চেন্নাই শহরটা সেই আদ্যিকাল থেকেই সূর্যদেবের শাসানিতে এমন অভ্যস্ত যে, স্থানীয় পরিভাষায় এই সময়টার নামই হয়ে গিয়েছে ‘অগ্নিনক্ষত্রম’। গ্রহ-তারা-নক্ষত্র লাগাতার আগুন ঝরায় যে!
প্রকৃতির প্রকোপের সঙ্গে আইপিএল ফাইনালের আঁচ যুক্ত হয়ে চেন্নাই যেন এ বার আরও বেশি ফুটছে। সেই ফুটন্ত চেহারাটা মালুম হচ্ছে শহরে চক্কর দিলেই। ইডলি-ধোসাকে পিছনে ফেলে রাতারাতি শহরে ‘মেনু’র দখল নিয়েছে পরশুর মেগা ম্যাচ। পরপর তিন বার ফাইনাল খেলতে চলা চেন্নাই বনাম প্রথম বার ফাইনালে ওঠা কেকেআর! খোদ রজনীকান্তের জনপ্রিয়তাকেও তাঁরই শহরে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে রবিবারের ক্রিকেট দ্বৈরথ। আগে ব্যাট করে চেন্নাই ২২২ তোলার পরেই মোটামুটি ঠিক হয়ে যায় ফাইনালে কেকেআর-এর প্রতিদ্বন্দ্বী কে। শক্ত ঠাঁই। নিজেদের ডেরায় কখনও ফাইনালে হারেনি সুপার কিংস।
চেন্নাইয়ের হোটেলে কেকেআর অধিনায়ক। ছবি: উৎপল সরকার
এত দিন মামলার কারণে ১২ হাজার দর্শকাসন ফাঁকা রেখে চলছিল চেন্নাইয়ের হোম ম্যাচ। গত কালই মামলা মিটেছে এবং আজ সকাল থেকে শুরু টিকিট বিক্রিও। লম্বা লাইন, হু হু করে উড়ে যাচ্ছে সাতশো আর বারোশো টাকার টিকিট। বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনের শহরে তাঁর টিমের সামনে ‘হ্যাটট্রিক হিস্টিরিয়া’-র হাতছানি। সন্ধে নাগাদ চেন্নাই বনাম দিল্লি ম্যাচ শুরুর মুখে গ্যালারিতে হলুদ জার্সির ভিড় দেখলে মনে হত, সর্ষেখেতের সমুদ্রে বসে আছেন। আইপিএলের সব ম্যাচে চিয়ারগার্লরা নাচেন, জানা কথা। চিপকে বাড়তি সংযোজন ‘চিয়ারবয়েজ’। প্রতিটা চার-ছয়ের পর যাঁরা বাজাচ্ছেন ড্রাম। বৈদ্যুতিন তুবড়ির আলোয় ভেসে যাচ্ছে স্টেডিয়াম। মুরলী বিজয়ের ‘খুনখারাপি’ ব্যাটিং এবং ধোনির ট্রেডমার্ক হেলিকপ্টার শট একটু একটু করে দাঁড়ি দিয়ে দিচ্ছিল দিল্লির ‘ডেয়ারডেভিলস’ হয়ে ওঠার স্বপ্নে। স্লোগান উঠছিল ‘হুইসল পোডু!’
ও দিকে যাঁদের কেন্দ্র করে কলকাতার এই প্রথম দেশে টি-টোয়েন্টিতে সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখা, সেই শাহরুখের নাইটরা সন্ধে নাগাদ শহরে পা রাখলেন ফের বিতর্ক সঙ্গী করে। পুণে থেকে টিম বাসে মুম্বই এসে চেন্নাইয়ের উড়ান ধরার কথা ছিল কেকেআর-এর। নিয়ম অনুযায়ী সব সময়ই পাইলট কার থাকার কথা টিম বাসের আগে। পুণে-মুম্বইয়ে যত ক্ষণ পর্যন্ত মহারাষ্ট্র পুলিশের আওতায় ছিল বাস, তত ক্ষণ ছিল পাইলট কার। মুম্বই শহরতলিতে পৌঁছনোর পরে টিম বাসের আগে আশ্চর্যজনক ভাবে পাইলট কার হাওয়া। ফলে প্রায়ই যানজটে পড়তে হল। মুম্বই পুলিশের গাফিলতিতেই নাকি এই বিপত্তি। নিরাপত্তার ফাঁস এ ভাবে আলগা হল কী ভাবে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেকেআর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ। বিতর্ক ধামাচাপা দিয়ে ফাইনালকে করা হচ্ছে পাখির চোখ। সুইমিং পুল সেশন ছেড়ে টিম বসেছিল টিভিতে দিল্লি-চেন্নাই ম্যাচ দেখতে। ম্যাচ দেখতে দেখতেই রাতে লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছিলেন, “কী খারাপ বোলিং করছে দিল্লি! হাসতে হাসতে ম্যাচ নিয়ে যাচ্ছে চেন্নাই! লিখে নিন, ধোনিরাই ফাইনালে।” সত্যি, হাসতে হাসতেই ফাইনালে ধোনিরা। হেলায় এবং অনায়াসে রবিবার নাইটদের প্রতিদ্বন্দ্বী।
শুরুতে রজনীকান্তের কথা লিখেছি। ধোনিরা ফাইনালে চলে যাওয়ার পরে পরশুর ম্যাচ ঘিরে এমনই ‘হিস্টিরিয়া’ শুরু হয়েছে যে, সেই বিখ্যাত ‘রজনীকান্ত-জোক’টা মনে পড়ে যেতে বাধ্য। চেন্নাইয়ের রাজপথে বসে দু’টো ভূত ভয়ে কাঁপছে। তুলনায় একটু বেশি সাহসী তৃতীয় ভূত প্রথম দু’জনকে ভরসা জোগাচ্ছে, “ওরে বোকা, শোন শোন, এত ভয় পাস না। ভয়ের কিছু নেই, আসলে রজনীকান্ত বলে কিছু হয় না!” এই নির্দোষ মজার সঙ্গে বাস্তবেরও কিঞ্চিৎ মিল আছে। শহর এখন পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমনই ক্রিকেটময় যে অন্তত আগামী ৪৮ ঘণ্টা নিজের ডেরায় রজনীকান্তও অস্তিত্বের সঙ্কটে। ক্রিকেটের হাজারো ‘ভূত’ জাঁকিয়ে বসেছে শহরের ঘাড়ে।
এই ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এও বক্স অফিস মাত!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.