সম্পাদকীয় ২...
জেদ বড়, না আস্থা?
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) তৈয়ারি সংক্রান্ত রাজ্যের আইনটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাতিল করিয়া দিল। এ ধরনের কোনও স্বতন্ত্র আর্থিক অঞ্চলের ব্যবস্থা যে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ নয়, সে কথা রাজ্যবাসী ইতিপূর্বেই জানিয়াছে। তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস কলিকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাটে এ ধরনের একটি প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব দিলে মুখ্যমন্ত্রী তাহা পত্রপাঠ খারিজ করিয়া দেন। কেননা এস ই জেড-এর তিনি বিরোধী এবং তাঁহার দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও সেই বিরোধিতার কথা উল্লিখিত রহিয়াছে। তবে আর কথা কী? ইনফোসিসের মতো একটি স্বনামধন্য ও সুবৃহৎ তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা ইহার ফলে এই রাজ্যে নূতন বিনিয়োগ হইতে পিছাইয়া গিয়াছে। ফলে প্রস্তাবিত এস ই জেড-এ যে বিপুল অর্থ লগ্নি হইতে পারিত এবং যে বহুসংখ্যক স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদের কর্মসংস্থান হইতে পারিত, তাহার সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। তাহাতে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ কিছু যায় আসে নাই। উপরন্তু তিনি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্রান্ত রাজ্যের আইনটিই রদ করিয়া দিয়াছেন। অস্যার্থ, ভবিষ্যতেও কোনও এস ই জেড পশ্চিমবঙ্গে আর নির্মিত হইবে না।
ইহা যে রাজ্যের আর্থিক উজ্জীবনের সম্ভাবনা গুরুতর রূপে নস্যাৎ করিবে, তাহা উপলব্ধি করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা, কোনওটিই বোধ করি বর্তমান শাসকদের নাই। যে নেতিবাচক সিঙ্গুর-আন্দোলনের মধ্য দিয়া এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক উত্থান, নন্দীগ্রামে রাসায়নিক প্রকল্প নির্মাণের বিরোধিতায় কৃষি-জমি রক্ষার আন্দোলন দিয়া তাহার পরিপুষ্টি। টাটা কোম্পানির মতো বৃহৎ বিনিয়োগকারীর অসম্মানজনক বিদায়ের মধ্য দিয়া যে-বার্তা এই রাজ্যের বর্তমান শাসকরা দেশবিদেশের লগ্নিকারীদের কাছে পৌঁছাইয়া দেন, সেটা ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিনিয়োগবান্ধব প্রদেশ নয়, এখানে লগ্নি ঝুঁকির বিষয়। শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান কর্তব্যই ছিল, ওই নেতিবাচক বার্তার ফলে পলাতক পুঁজির রাজ্যকে বিনিয়োগের অনুকূল বলিয়া তুলিয়া ধরা, যাহাতে শিল্পের মরুভূমিতে পরিণত এই রাজ্য আবার উৎপাদনে, বাণিজ্যে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতে পারে। কিন্তু শাসক দলের কল্পনাশক্তিরহিত নেতৃত্ব সে পথে না গিয়া নেত্রীর জেদ ও অহমিকার কাছে রাজ্যের স্বার্থকে বন্ধক রাখিতে ব্যগ্র হইয়া পড়িয়াছে। যখন কোনও শিল্পই এ রাজ্যে লগ্নিতে উৎসুক নয়, তখন এস ই জেড-এর দরজা দিয়া যদি তথ্য-প্রযুক্তি বা অন্য কোনও শিল্প পশ্চিমবঙ্গে শাখা বিস্তার করিতে চায়, তবে বিভিন্ন ছাড় ও লোভনীয় প্রস্তাব দিয়া তাহাদের সাদরে বরণ করা উচিত ছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেদ অনমনীয়।
অতঃপর পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর জেদ থাকিবে, বিনিয়োগ নহে। দেশ জুড়িয়া প্রায় সকল রাজ্যই বিনিয়োগকারীদের সাদরে বরণ করিয়া লইতে উদগ্রীব। বিনিয়োগ সেই রাজ্যগুলিতে যাইবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নেত্রী বার্তা দিয়াছেন, শিল্প তাঁহার নিকট অগ্রাধিকার পাইবে না। এই রাজ্যে বিনিয়োগ করিবার পর অপর কোনও স্বার্থগোষ্ঠীর (যেমন কৃষি, সিন্ডিকেট ইত্যাদি) সহিত শিল্পের সংঘাত ঘটিলে মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনের পক্ষপাত কোন দিকে থাকিবে, বিনিয়োগকারীরা অনুমান করিতেছেন। সেই অনুমান তাঁহাদের রাজ্যে বিনিয়োগ করিতে অনুপ্রাণিত করিবে না। রাজ্যের প্রশাসনের সদিচ্ছার উপর, পরিবেশের উপর যে আস্থা না থাকিলে বিনিয়োগ আসে না, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি সেই আস্থা পূর্বেই ছিল না। এখন সেইটুকুও থাকিল না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.