বাজারে প্রাণ ফেরাল স্টেট ব্যাঙ্ক
যে ঘন মেঘ জমেছিল দালাল স্ট্রিটের আকাশে, তার চার পাশে রুপোলি রেখা এঁকে দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের ফলাফল। বহু প্রতিকূলতার মধ্যে অপ্রত্যাশিত ফলাফল প্রকাশ করে হঠাৎই বাজারে এক ঝলক প্রাণ ফিরিয়ে আনে দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক।
এই ফলাফল মৃতসঞ্জীবনীর কাজ করে অন্যান্য ব্যাঙ্ক শেয়ারেও। আগের বছরের শেষ তিন মাসের মাত্র ২১ কোটি টাকা মুনাফার জায়গায় ২০১১-’১২ অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে স্টেট ব্যাঙ্ক ঘরে তুলেছে ৪০৫০ কোটি টাকার নিট লাভ। গোটা বছরে লাভ পৌঁছেছে ১১,৭০৭ কোটি টাকায়। বৃদ্ধি ৪২%। শুধু তা-ই নয়, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি সত্ত্বেও কমেছে ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ বা এন পি এ। এটি একটি বড় আশার দিক। ব্যাঙ্কের শেয়ার পিছু আয় ১৮৪.৩১ টাকা। প্রতিটি শেয়ারের বুক ভ্যালু এখন ১২১৫ টাকা। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম ২৫০০ টাকা হওয়া উচিত বলে দাবি করেন উচ্ছ্বসিত চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী। শুক্রবার ৫.৮২% বেড়ে এস বি আই শেয়ার বন্ধ হয়েছে ১৯৫৬ টাকায় (ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ)। ১০ টাকার শেয়ার পিছু ব্যাঙ্ক এ বার ডিভিডেন্ড দেবে ৩৫ টাকা অর্থাৎ ৩৫০%। এই চিত্তাকর্ষক ফলাফল প্রকাশের পর স্টেট ব্যাঙ্ক রেটিং বাড়ানোর জন্য মুডিজ-এর কাছে আবেদন করবে।
সব ফলাফল অবশ্য স্টেট ব্যাঙ্কের মতো আশাব্যঞ্জক হয়নি। শেষ তিন মাসে টাটা স্টিলের নিট মুনাফা ১৭০৮ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৫৬০ কোটি টাকা। গোটা বছরের লাভ ৪০% কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩৯০ কোটি টাকায়। শেয়ার পিছু ১২ টাকা ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে কোম্পানির পরিচালন পর্ষদ। শুক্রবার শেষ বেলায় সংস্থার শেয়ার দর নেমে এসে থিতু হয় ৪০০ টাকায়। ২০১২-’১৩ সালে ব্যবসায় উন্নতি হতে পারে বলে সংস্থার তরফে আশা প্রকাশ করা হয়। শেষ তিন মাসে মুনাফা কমলেও গোটা বছরে কোল ইন্ডিয়ার লাভ আগের বছরের ৪৬৯৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০৬৫ কোটি টাকা।
স্টেট ব্যাঙ্ক আশার আলো দেখালেও মোটের উপর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আদৌ উৎসাহব্যঞ্জক নয়। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল অনুকূল ও প্রতিকূল শর্তের তুল্যমূল্য বিচার।
অর্থনীতি একনজরে
অনুকূল শর্ত প্রতিকূল শর্ত
(১) বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমা
(২) এপ্রিলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর সংগ্রহ বৃদ্ধি
(৩) স্টেট ব্যাঙ্কের খুব ভাল ফলাফল
(৪) স্বাভাবিক বর্ষার সম্ভাবনা
(১) ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি
(২) শিল্পোৎপাদন হ্রাস, রফতানি বৃদ্ধি মাত্র ৩.২%
(৩) বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি হ্রাস
(৪) খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ১০.৩২%
এই পরিস্থিতিতে বাজারে বড় কোনও উত্থান আশা করা যায় না। বহু শেয়ারের দাম আকর্ষণীয় জায়গায় নেমে এলেও বাজারের প্রতি আস্থার অভাবে ক্রেতার ভিড় নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে লগ্নি করতে হলে শুধু মাত্র বড় মাপের অর্থাৎ লার্জ ক্যাপ শেয়ারে লগ্নি করাই বাঞ্ছনীয়। উত্থান পর্বে আগে উঠবে বড় শেয়ারগুলি। মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতে হলে নজর দিতে হবে সুবিন্যস্ত লার্জ ক্যাপ ফান্ডের প্রতি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে নিফটি ফান্ড, টপ ১০০, টপ ২০০ ফান্ডগুলি মন্দ নয়।
বর্তমান বাজারে লগ্নি শুরু করা যায় এস আই পি পদ্ধতিতে। সাবধানীরা বেছে নিতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ড। কর সাশ্রয়ের জন্য লগ্নির কথা ভাবতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডের ইএলএসএস প্রকল্পে। যাঁরা করমুক্ত আয়ের সন্ধান করছেন, তাঁরা মাস ছয়েক অপেক্ষা করতে পারেন করমুক্ত পরিকাঠামো বন্ডের জন্য। এ বারের বাজেটে এই ধরনের ৬০,০০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ করমুক্ত বন্ড বাজারে আসবে বলে আশা করা যায়। তত দিন পর্যন্ত টাকা আকর্ষণীয় সুদে ৬ মাসের মেয়াদে ব্যাঙ্কে রাখা যেতে পারে।
ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় শেয়ার কিনতে হলে এড়িয়ে চলতে হবে আমদানি নির্ভর কোম্পানি। নজর দিতে হবে রফতানি প্রধান কোম্পানির দিকে। ভাল রকম পড়েছে ব্যাঙ্ক শেয়ার। এই সুযোগে বাছাই করে তুলে নেওয়া যেতে পারে ভাল ব্যাঙ্ক শেয়ার। সরকারি নীতির উপর নির্ভরশীল শেয়ারও বর্তমানে এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল। যেমন জ্বালানি তেল এবং পরিকাঠামো সংস্থার শেয়ার। এল অ্যান্ড টি ভাল ফল উপহার দিলেও অন্য মূলধনী পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির অবস্থা তেমন ভাল নয়। চাহিদা কমেছে গাড়ি শিল্পে। অর্থাৎ সস্তার বাজারেও শেয়ার কিনতে হবে অনেক বাছবিচার করে। অতি দুর্বল বাজারেও আইপিও এনে সাফল্য পেয়েছে স্পেশালিটি রেস্টোর্যান্টস। ‘মেনল্যান্ড চায়না’ ‘ও ক্যালকাটা’ ইত্যাদি রেস্তোরাঁর মালিক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের এই সংস্থার ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছে ২.৫ গুণ।

বিশ্ব অর্থনীতির হাল ফেরাতে উদ্যোগী জি-৮
বিশ্ব অর্থনীতি চাঙ্গা করতে দৃঢ় অঙ্গীকার করল জি-৮ গোষ্ঠী। দু’দিনের শীর্ষ বৈঠক শেষে রবিবার শিল্পোন্নত দুনিয়ার এই জোট উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের উপরেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। আমেরিকা, জাপান, ব্রিটেন, জার্মানি, ফান্স, ইতালি, কানাডা ও রাশিয়াকে নিয়ে গড়া এই সংগঠনের মঞ্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, উন্নয়নের প্রশ্নে সবক’টি দেশ একমত।” সমস্যায় জেরবার গ্রিসকে ইউরোপে রেখেই বিশ্ব অর্থনীতির হাল ফেরাতে চায় জি-৮। ইরানকেও তার পরমাণু কর্মসূচি সংশোধন করে তেলের জোগান নিশ্চিত করতে বলেছে জি-৮।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.