|
|
|
|
অশ্রুর ভাষায় সেতু বেঁধে জেল ছাড়লেন চিনের লি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জীবনে জীবন যোগ করার বড় মাধ্যম ভাষা। সেই ভাষার সেতু বাঁধা যাচ্ছিল না বলেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তে হয়েছিল চিনের বাসিন্দা জি পিং লি-কে। অবশেষে শুক্রবার মুক্তি পেলেন তিনি। বছর দুই আগে ‘বন্ধুহীন’ লি মুক্তি পাওয়ার জন্য জেলে কান্নাকাটি করতেন। আর এ দিন মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় আলিপুর মহিলা জেলের অন্য বন্দিদের জন্য চোখের জল ফেললেন তিনি। ভাষাগত ব্যবধান সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত যাঁদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুতার সেতুবন্ধন আটকায়নি।
২০১০ সালের জুলাইয়ে খড়িবাড়ি থেকে গ্রেফতার হন লি। নেপাল থেকে খড়িবাড়ি, শিলিগুড়ি হয়ে গ্যাংটক
|
আলিপুর মহিলা জেল
থেকে বেরিয়ে আসছেন লি।
-নিজস্ব চিত্র |
যাচ্ছিলেন। খড়িবাড়িতে বাসে তল্লাশি চালানোর সময় লি-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভিসার মেয়াদ ফুরোনোর পরেও তিনি ভারতে রয়েছেন, এই অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে চিনের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগও ওঠে। এর পরে শিলিগুড়ির এক আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতে পাঠায়। তাঁকে পাঠানো হয় শিলিগুড়ির বিশেষ সংশোধনাগারে।
সমস্যার শুরু তখন থেকেই। জেলে লি-র কথা কেউই বুঝতে পারছিলেন না। চিনের মান্দারিন ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা না-জানায় লি-ও কিছু বোঝাতে পারছিলেন না। লি কী বলছেন, তা বোঝার জন্য স্থানীয় কয়েক জনকে নিয়ে আসা হয় জেলে। কিন্তু তাঁরাও লি-র ভাষা বুঝতে পারেননি। এর ফলে মনমরা হয়ে জেলের এক কোণে বসে কান্নাকাটি করতেন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করতেন না। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ির ওই আদালত লি-কে দু’বছরের কারাদণ্ড দেয়।২০১০ সালের অক্টোবরে শিলিগুড়ি জেলে একটি সমীক্ষার কাজে গিয়েছিলেন দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অমিতকুমার সরকার। লি-র অবস্থা দেখে কলকাতায় চিনা দূতাবাসে যোগাযোগ করেন তিনি। তার পরেই চিনা দূতাবাসের এক দল প্রতিনিধি শিলিগুড়ি গিয়ে লি-র সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তাঁরাও সে-ভাবে লি-র কথা বুঝতে পারেননি। ইতিমধ্যে লি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে আনা হয়। তার পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুরের মহিলা জেলে। সেখানে অন্য মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকতে থাকতে খানিকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন লি। এ দেশের খাবারের সঙ্গেও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। এমনকী বাঙালিদের মতো মাছের ভক্তও হয়ে ওঠেন তিনি। ইতিমধ্যে চিনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে লি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর বাড়ি ও আত্মীয়স্বজন সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। জানা যায়, ৪৭ বছরের লি-র বাড়ি চিনের সিচুয়ান প্রদেশে। তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এক বোন রয়েছেন দেশে।
এর পরে চিনা দূতাবাস এবং রাজ্য সরকারের তরফে লি-কে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাজ্য সরকার লি-কে প্রত্যর্পণের জন্য চিনা দূতাবাস এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। শেষ পর্যন্ত আলিপুর আদালত ১ মে লি-কে মুক্তি দেওয়ার এবং প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ১ মে-র মধ্যে কাগজপত্র তৈরি না-হওয়ায় তাঁকে ছাড়া যায়নি। কলকাতায় চিনা দূতাবাসের প্রশাসনিক অফিসার কৌশিক রায়চৌধুরী জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ মুক্তি দেওয়া হয় লি-কে। রাতেই কলকাতা থেকে বিমানে তাঁকে কুনমিংয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে লি-কে নিতে আসবেন তাঁর বোন। |
|
|
|
|
|