১০৪ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙার মতো পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে কলকাতা। রেকর্ডটা গরমের। বুধবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চার ডিগ্রিরও বেশি বেড়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আর তাতেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন আবহবিদরা।
১৯০৮-এর ২৮ মে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪৩.৭ ডিগ্রিতে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের নথিতে এটাই এখনও পর্যন্ত মে মাসে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত ১০৪ বছরে কলকাতায় মে মাসের তাপমাত্রা ৪২-৪৩ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে বেশ কয়েক বার। কিন্তু কখনওই তা ওই রেকর্ডকে ছুঁতে পারেনি। ২০০২-এর ২০ মে কলকাতার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এটাই গ্রীষ্মে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এ বার রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে মনে হচ্ছে কেন? আবহবিদরা বলছেন, মঙ্গলবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন তা চার ডিগ্রি বেড়ে হয়েছে ৪০.৫ ডিগ্রি। আরও ৩.২ ডিগ্রি বাড়লেই রেকর্ড ভাঙবে। পরিমণ্ডলে বায়ুপ্রবাহের যা অবস্থা, তাতে এক দিনে তাপমাত্রা আরও ৪ ডিগ্রি বেড়ে যাওয়া অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন আবহবিদরা। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা বাড়বে বলে জানিয়েই দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। |
তাপমাত্রা এতটা বেড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি কেন হঠাৎ তৈরি হল? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা দুর্বল নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি বুধবার সকালের পরে পুরোপুরি উত্তরবঙ্গের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ ঢোকা একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই সুযোগে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম থেকে শুকনো গরম বাতাস এসে ঢুকছে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনায়। এ দিন তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে সল্টলেক, রাজারহাট, দমদমও।
আবহাওয়া দফতরের নথি বলছে, এপ্রিল-মে মাসে কলকাতার তাপমাত্রা অনেক সময়েই ৩৯-৪০ ডিগ্রিতে উঠে গেলেও ৪১ ডিগ্রির কাছাকাছি খুব কমই পৌঁছয়। তাই কলকাতায় তাপপ্রবাহ (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বেড়ে যায়) খুব একটা ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা নয়। কিন্তু আগে যে ব্যাপারটা কদাচিৎ ঘটত, সেটা এখন অনেকটাই নিয়মিত হয়ে গিয়েছে। ২০১০-এ কলকাতা তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে দু’বার। এক বার বৈশাখ আসার আগেই, ৯ এপ্রিল। আর এক দফা তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয় মে মাসের ১০ তারিখে। তবে তাপপ্রবাহের নিরিখে ২০০৯-এর তুলনা মেলা ভার। এপ্রিল মাসে টানা সাত দিন (১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল) কলকাতায় তাপপ্রবাহ জারি ছিল। কলকাতার ইতিহাসে (আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী) টানা এত দিন তাপপ্রবাহ থাকার এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।
গত বছর মে মাসে কলকাতার আবহাওয়া যা ছিল, তাতে তাপপ্রবাহ তৈরি হতে পারেনি। আবহবিদদের ব্যাখ্যা, গত বছর শুধু মে মাসেই ১১টি কালবৈশাখী পেয়েছিল কলকাতা। তার ফলে ১৪ দিন বৃষ্টি পেয়েছিল মহানগরী। আকাশে টানা মেঘ থাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ছুঁতে পারেনি এক দিনের জন্যও। গত বছর মার্চ-এপ্রিলে কলকাতা একটা কালবৈশাখী পেয়েছিল। কিন্তু এপ্রিলে এক দিনের জন্যও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি হয়নি।
এ বছর এপ্রিলে ৫টি কালবৈশাখীর ফলে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছোঁয়নি। মে-র প্রথম থেকেই নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্ত শহরে পাঠাচ্ছিল মেঘ। মেঘের জন্য তাপমাত্রা বাড়ছিল না। কিন্তু এ দিন সকালে উত্তর শহরতলির কিছু এলাকায় বৃষ্টির পরই পরিস্থিতি বদলেছে বলে দাবি আবহবিদদের। জলীয় বাষ্প উধাও। ফলে ঘাম কমে আগুনে হলকা টের পাচ্ছেন শহরবাসী। |
মঙ্গলবার পর্যন্ত যে জলীয় বাষ্প কলকাতার বাতাসে ছিল, তা গেল কোথায়? আবহবিদরা বলছেন, এ দিন সকালে উত্তর শহরতলির কিছু অংশে বৃষ্টি হয়েছে। তাতেই জলীয় বাষ্প শেষ। এর পরেই পশ্চিমের জেলাগুলি থেকে গরম-শুকনো বাতাস ঢুকে পড়েছে কলকাতায়। বেলা ১০টা থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে উত্তর ভারতের মতো ‘লু’ উপলব্ধি করা গিয়েছে মহানগরীর রাস্তায়। এই দহন থেকে মুক্তি মিলবে কবে? গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, আজ, বৃহস্পতিবার রাতেই মালদহ ও দুই দিনাজপুরে ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। কলকাতার আবহাওয়া বদলাবে শুক্রবার থেকে। তখন বৃষ্টি পেতে পারে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা। |