|
|
|
|
তদন্তে সিআইডি |
জিপে পিষে মৃত্যু, তোলা তুলতে দেহ ‘লুকোল’ পুলিশই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
লরির কাছ থেকে তোলা নেওয়ার জন্য ধাওয়া করছিল পুলিশের জিপ। সেই সময়েই উল্টো দিক থেকে সাইকেলে আসছিলেন যতীন মণ্ডল। তখন রাত ৯টা। যতীনকে পিষে দিল পুলিশের জিপ। তড়িঘড়ি তাঁর মৃতদেহ জিপে তুলে নিয়ে পুলিশ ফের ধাওয়া করল লরিটিকে। তোলা যে না-তুললেই নয়!
স্বামীর এই মর্মান্তিক মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ নিয়ে পুলিশের এই অর্থলোলুপতার কাহিনি কলকাতা হাইকোর্টে জানালেন যতীনের স্ত্রী নমিতা মণ্ডল। বিচার চাইলেন উচ্চ আদালতে। ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের হাত থেকে এই তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে সিআইডি-কে দেন। সেই সঙ্গেই জানিয়ে দেন, সব ধরনের প্রভাবমুক্ত তদন্ত আশা করেন তিনি।
ঠিক কী ঘটেছিল? ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল রাতে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন যতীন। আবেদনকারিণীর আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল হাইকোর্টে বলেন, পুলিশ কত নৃশংস হতে পারে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। ঘটনাস্থলের ৫০০ মিটারের মধ্যে ছিল চন্দ্রকোনা হাসপাতাল। তখনই যদি যতীনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তাঁর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু যতীন বেঁচে যান, পুলিশ তা চায়নি। তা হলে পুলিশ করলটা কী? আবেদনকারিণীর আইনজীবী জানান, লরির কাছ থেকে তোলা আদায় করে পুলিশ ফিরে যায় থানায়। থানার পিছনে লুকিয়ে রাখে যতীনের দেহ। কিন্তু গ্রামের এলাকার কয়েক জন বিষয়টি দেখে ফেলেন। খবর ছড়িয়ে পড়ে। যতীনের বাবা ও স্ত্রী এফআইআর করতে থানায় যান। রহমান আলি নামে এক ব্যক্তি থানায় জল দেন। পুলিশ এফআইআর লেখায় সেই রহমানকে দিয়ে। লেখা হয়, পুলিশ দেখতে পায়, একটি লরি এক ভদ্রলোককে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তখন হাসপাতালে পাঠাবে বলে আহতকে থানায় নিয়ে যায়!
লরি নয়, পুলিশের জিপই যে যতীনকে চাপা দিয়েছিল, তার কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে বলে নমিতাদেবীর অভিযোগ। তাঁর কৌঁসুলি কল্লোলবাবু আদালতে বলেন, পুলিশের জিপে পিষেই যে যতীনের মৃত্যু হয়েছে, এই সত্যটাকে চাপা দেওয়ার জন্য দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। নমিতাদেবী নিম্ন আদালত-সহ সর্বত্র আবেদন জানিয়ে বলেছেন, যারা তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছে, তারা কিছুতেই সুবিচার দিতে পারে না।
বিচারপতি এই ব্যাপারে সরকার পক্ষের আইনজীবী সুমন সেনগুপ্তের মতামত জানতে চান। সুমনবাবু জানিয়ে দেন, সত্য প্রকাশের প্রয়োজনে সিআইডি তদন্ত হলে সরকার পক্ষের কোনও আপত্তি নেই। তার পরেই তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয় সিআইডি-র হাতে। গত কয়েক মাসে বর্ধমানের প্রদীপ তা হত্যা-সহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব জেলা পুলিশের হাত থেকে তুলে নিয়ে সিআইডি-কে দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীদের বক্তব্য, জেলা পুলিশের উপরে এ ভাবে আস্থা কমে যাওয়াটা প্রশাসনের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। |
|
|
|
|
|