|
|
|
|
|
|
|
সন্দীপ রায়ের নতুন ছবি |
ওই ভূত! বাপ্ রে |
ওই ঘরের মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে মরে কাঠ হয়ে আছেন, তাঁর চোখ চাওয়া, দৃষ্টি কড়িকাঠের দিকে। আর সেই দৃষ্টিতে ভয়ের যে নমুনা দেখলুম, তাতে ভূত ছাড়া আর কী ভাবব বলুন? গায়ে কোনও ক্ষতচিহ্ন নেই, বাঘের আঁচড় নেই, সাপের ছোবল নেই, কিচ্ছু নেই। আপনারাই বলুন এখন কী
|
সন্দেশ-এ আষাঢ়-শ্রাবণ ১৩৭৮ সংখ্যায়
বেরনোর সময় সত্যজিতের ইলাস্ট্রেশন |
বলবেন।... ‘অনাথবাবুর ভয়’ মনে পড়ছে? সত্যজিতের লেখা প্রথম ভূতের গল্প, সন্দেশ-এ বেরিয়েছিল অগ্রহায়ণ ১৩৬৯-এ। ভূত আছে কি নেই সে তর্ক থাক, কিন্তু ভূতের ভয় তো আছে... গভীর রাতে একটু বেশি জমাট বাঁধা অন্ধকারে, বা দিনদুপুরেও একলা নির্জনে কি গা-ছমছম করে ওঠে না, সে তো ওই ভূতের ভয়েই! ‘বাবা নেশাগ্রস্ত ছিলেন ভূতে বললে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। অসম্ভব ভাল কালেকশন ছিল তাঁর ঘোস্ট-স্টোরি’র। আমাদের রায় পরিবারে এক রকম চর্চাই আছে ভূতের। যদিও কখনও বাবার সঙ্গে আলাদা করে কথা হয়নি ভূত নিয়ে, কিন্তু যখনই কোনও ভূতের গল্পের থিম্ আসত তাঁর মাথায়, লেখার সময় দারুণ উত্তেজিত, তখন হয়তো কথা বলতেন মা-র সঙ্গে, এমনকী আমার সঙ্গেও।’ বলছিলেন সন্দীপ রায়, এই ভূত নিয়েই এ বারে ছবি করতে চলেছেন তিনি, ভেঙ্কটেশ ও সুরিন্দর ফিল্মস-এর প্রযোজনায়। না, ভয়ংকর বা বীভৎস ভূত নয়, আবার কচিকাঁচাদের জন্যে মিষ্টি ভূত, বা গুগাবাবা-র মতো রূপকথার ভূত, তাও নয়। ‘একটা গা-শিরশিরে ভাব থাকবে, চাপা সাসপেন্স থাকবে, কারওর বা কিছুর একটা আবছা উপস্থিতি থাকবে।
|
এক ডজন গপ্পো-য় গ্রন্থিত হওয়ার
সময় সত্যজিতের ইলাস্ট্রেশন |
ছবিতে ভূতের এই প্রেজেন্স’টাই আসল ব্যাপার। এখনও বাবার মণিহারা (তিনকন্যা) দেখলে যেমন চেয়ারের হাতল চেপে ধরতে হয়। এই ভূত সব বয়সের দর্শকের জন্য।’ সন্দীপের বাছাই-ভাবনায় আপাতত ‘অনাথবাবুর ভয়’-সহ সত্যজিতের আরও দু’টি ভূতের গল্প: ‘ব্রাউন সাহেবের বাড়ি’ আর ‘তারিণীখুড়ো ও লখ্নৌর ডুয়েল’। একটি ভূতের গল্প শুধু শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভূত-ভবিষ্যৎ’। চারটে গল্পকেই টানা একটা ছবিতে, একটা টাইটেল কার্ডে গাঁথবেন সন্দীপ, তারিণীখুড়োকে কথক বানিয়ে। প্রতি কাহিনিতে উপস্থিত থেকে তিনিই গপ্পোটা বলবেন। তারিণীখুড়োর চরিত্রে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদিন্দুর গল্পের নায়কের ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। আর গায়ে গলাবন্ধ কোট, পায়ে কালো বুট জুতোওয়ালা অনাথবাবু হবেন দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়। স্ক্রিপ্ট লেখা, লোকেশন দেখা ইত্যাদি সবই চলছে, শ্যুটিং শুরু হতেও দেরি নেই খুব। ভূতের ভবিষ্যৎ এখন সন্দীপের হাতে!
|
ফিরে দেখা |
জীবনে কোনও দিন তিনি মদ্যপান করেননি, অথচ রাস্তায় তাঁকে দেখলে কেউ কেউ বলতেন, ‘ওই দ্যাখ, বিকাশ রায় কেমন মাতালের মতন হাঁটছেন’। তাঁর মৃত্যুর পরে লিখেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ জন সেবাব্রত গুপ্ত। কিংবা প্রবীণ সিনেমারসিকের স্মৃতিতে আছে, হেমেন গুপ্তের ’৪২-এ বিকাশের অভিনয় দেখে কেউ কেউ জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন। কিন্তু ’৪২-এর পরে বিকাশ রায় যেন বাংলা ছবির এক দাগী খলনায়ক হিসেবেই পরিচিত হয়ে রইলেন। অথচ তাঁর মধ্যে ছিল এক অপূর্ব একা, বহু বিচিত্র চরিত্রে তাঁর অভিনয়ের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় তাকে। বিজয় বসুর ‘আরোগ্য নিকেতন’, অসিত সেনের ‘উত্তর ফাল্গুনী’, চিত্ত বসুর ‘ছেলে কার’, রাজেন তরফদারের ‘জীবনকাহিনি’ কিংবা তাঁর নিজেরই পরিচালিত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ তার সাক্ষ্য দেবে। ১৯১৬-তে এ শহরের ভবানীপুরে জন্ম, কর্মজীবনের শুরু অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র নাটক বিভাগে। জ্যোতির্ময় রায়ের ‘অভিযাত্রী’তে প্রথম চলচ্চিত্র-অভিনয়। তার পরে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে। পাশাপাশি চলেছে আবৃত্তি, পাঠ ও শ্রুতিনাটক। এ বার বিকাশ রায়ের একটি রেট্রোস্পেক্টিভের আয়োজন করেছে নন্দন, ১৭-১৯ মে।
|
|
অন্য মানুষ |
১০ বছরের জন্য সেঞ্চুরি হল না। ৯১ বছরেই মৃত্যু এসে জীবনের উইকেট থেকে সরিয়ে দিল পূর্ণেন্দুনারায়ণ রায়কে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর তাঁর হাত ধরেই জাপানের বিখ্যাত ‘আসাহি’ সংস্থার অন্য দেশে ব্যবসা শুরু। আর, তার ফলেই ১৯৫৬-য় ভারতে গড়ে উঠেছিল ‘ইন্দো আসাহি গ্লাস কোম্পানি’। প্রেসিডেন্সি-র এই প্রাক্তনীই তার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। উদ্যোগপতি হিসাবে তাঁর কৃতিত্ব সর্বজনবিদিত, কিন্তু অন্য পরিচয়ও ছিল যে! ছাত্রাবস্থা থেকে হিন্দু মহাসভার সদস্য, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সচিবও ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে এক জাপানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি হয়ে চলে গেলেন উত্তর বনাম দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধ ‘কাভার’ করতে। যুদ্ধশেষে টোকিওয় ইন্দো-আসাহি সংস্থার সঙ্গে পরিচয়। শুরু হল উদ্যোগপতির জীবন। অকৃতদার মানুষটি খেতে, খাওয়াতে ভালবাসতেন। ভালবাসতেন কবিতা লিখতে। কিন্তু সেই সব কবিতা তালাবন্ধই থেকে গেল, জীবনেও প্রকাশের চেষ্টা করলেন না। বরং যাবতীয় উৎসাহ ঢেলে দিলেন বড়িশায় দৈহিক প্রতিবন্ধীদের জন্য এক হাসপাতাল তৈরির কাজে। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর বিভিন্ন বন্ধুরা এখনও শোকে মোহ্যমান। কলকাতায় লা ওপালা সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ সি চক্রবর্তী, কিংবা সুদূর অক্সফোর্ডে ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী... কেউই সেই বন্ধুশোকের ব্যতিক্রম নন।
|
সবার জন্য |
মেহগনির মঞ্চ জুড়ি পঞ্চ হাজার গ্রন্থের দরজা খুলে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে ১৯৬১-তে। ওই বছর সাহিত্য অকাদেমির দিল্লির গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়া হয়েছিল সাধারণের জন্য। আর রবীন্দ্রনাথের এই জন্মসার্ধশতবর্ষে অকাদেমির কলকাতার গ্রন্থাগারটির লেন্ডিং বিভাগটি খুলে দেওয়া হল সাধারণ পড়ুয়ার জন্য। সম্প্রতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সূচনা করলেন এই নতুন পরিষেবার। অকাদেমির আঞ্চলিক সচিব রামকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন, নব্বই দশকের মাঝামাঝি অকাদেমির কলকাতার গ্রন্থাগারটি সমৃদ্ধ হতে শুরু করে, এখন মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের জন্মসার্ধশতবর্ষে নানা ভাবে রবীন্দ্র-উদ্যাপন করল অকাদেমি। রবীন্দ্রবিষয়ক বইয়ের মেলা, নানা আলোচনাচক্রের পাশাপাশি ছিল ভারতীয় সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নিয়ে দু’দিনের এক আলোচনাচক্রও।
|
পার্বণ |
পঁচিশে বৈশাখকে গ্রন্থপার্বণ হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। রবীন্দ্রনাথের জন্মসার্ধশতবর্ষে সেই প্রস্তাব কি মেনে নিলেন গ্রন্থজন? মোহরকুঞ্জে এখন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের উদ্যোগে সরকারি রবিমেলা উপলক্ষে চলছে বইমেলা, ২৪ মে পর্যন্ত। সেখানে রবীন্দ্রনাথই মুখ্য। পাশাপাশি থাকছে অন্যান্য। থাকাই উচিত, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে! পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্যাসেট-সিডি এবং শান্তিনিকেতনের হস্তশিল্পও থাকছে। অর্থাৎ সেই কলকাতা বইমেলাই, অবশ্য ছোট করে। তবে কি না স্মৃতি যাঁদের প্রখর সেই সহনাগরিকদের মনে পড়ে যাচ্ছে বহু যুগের ও পারের কথা, যখন এই মাঠেই বইমেলা হত।
|
শিলুদা |
পোশাকি নাম তাঁর একটা ছিল। কিন্তু সেটা তিনি কখনও ব্যবহার করেছেন বলে শোনা যায়নি। আসলে, পোশাকি সব কিছুই তিনি অপছন্দ করতেন। সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ ছিলেন প্রাণখোলা আড্ডায়। আই আই এমের কৃতী ছাত্র, বিখ্যাত মার্কেট রিসার্চ সংস্থার কর্ণধার, বিপণনের ব্যাপারে স্বীকৃত পণ্ডিত, এ সব কোনও পরিচয়েই তাঁকে চেনা যাবে না। কারণ, এই মানুষটি বুকের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন একেবারেই একটা নিজস্ব সত্তা। তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনাও যেন কখন হয়ে উঠত পাড়ার আড্ডার মতো অসংকোচ আর অসাবধানী, যার ফলে সেই আলোচনা থেকে উঠে আসতে একেবারে অন্য রকমের সম্ভাবনার সন্ধান। শিলুদার আর একটা পরিচয় ছিল আপাদমস্তক বাঙালি। কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার মিছিলে তিনি যোগ দেননি। কলকাতার কারণ-অকারণ নিন্দাতে তাঁর কোনও রুচি ছিল না। আজীবন আশাবাদী মানুষটি মনে করতেন, বাঙালির ওপরে বিশ্বাস হারানো পাপ। তাই ঘনিষ্ঠরা ফোন পেতেন, দেখলে নাকি ভূতের ভবিষ্যৎ কিংবা কিং লিয়র। কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের মৃত্যু খুব অন্যায়, কারণ একটা গোষ্ঠীর অনেকটা প্রাণ যেন হারিয়ে যায়, শিলুদা ছিলেন তেমন একজন মানুষ।
|
গবেষক |
এক্ষণ সম্পাদককে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় একবার লিখলেন ‘যদি কাঞ্চন সম্পূর্ণ এডিটিং-এর ভার নেয়, তবেই আপনারা নতুন প্রবন্ধ ছাপবার কথা ভাববেন’। ছাত্রের মেধা ও পাণ্ডিত্যে এতটাই আস্থা ছিল শিক্ষকের। কাঞ্চন চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৩০-এ, বারুইপুরের কাছে লাঙ্গলবেড়িয়া গ্রামে। কৈশোরেই হারান বাবা-মা’কে। অতঃপর নিকট আত্মীয়দের সাহায্যে পড়াশোনা। বঙ্গবাসী কলেজের পাঠ শেষ করে চলে যান কলাভবনে। আমেরিকায় শিল্পকলার ইতিহাস পড়ার পর ১৯৬৯-এ শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন শিল্প ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে। পরে কলাভবনের অধ্যক্ষ হন। অন্তর্মুখী মানুষটির বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে নানা পত্র-পত্রিকায়। বিদ্যাচর্চা নিয়েই ছিলেন কল্যাণীতে। হঠাৎই চলে গেলেন। ‘বাবার অগ্রন্থিত কাজগুলি একসঙ্গে করে তোলাই আমার কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ বলছিলেন মেয়ে অন্তরা।
|
সম্মান |
বিদ্বান্ সর্বত্রঃ পূজ্যতে। এই আপ্তবাক্যের অর্থ তো এই নয় যে, রাজা কিংবা প্রশাসক ছাড়া স্বদেশে আর কোনও মানুষ, এমনকি বিদ্বানেরও স্বীকৃতি নেই। অথচ, শীর্ষবিদুষী, বিশিষ্ট গবেষক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের ক্ষেত্রে এমনটাই তো ঘটেছে! বিশ্ব তাঁর গুণগান করলেও, ভারতে, নিজের নির্মাণের কলকাতাতেও তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি কই। এরই ব্যতিক্রম ঘটতে চলেছে এ বারে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ মে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস-সাক্ষী প্রাঙ্গণে এই বিদুষীকে সাম্মানিক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী বছরে এবং ৩৭তম সমাবর্তনে একই সঙ্গে এই সম্মান পাবেন সন্তুরের জাদুকর পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা এবং বাংলার সাহিত্য ও দর্শনকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করবার অন্যতম কাণ্ডারি ফ্রাঁস ভট্টাচার্য। একই মঞ্চে রাজ্য আকাদেমি ও হীরাচাঁদ দুগার পুরস্কার পাবেন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কৃতীরা। আর দীক্ষান্ত-ভাষণে মার্টিন কেম্পশেন।
|
জাদুঘর দিবস |
আধুনিক বিশ্বে সংগ্রহশালাকে আরও জনমুখী করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সংগ্রহশালাগুলির আন্তর্জাতিক মঞ্চ আইকম-এর উদ্যোগে ১৯৭৭ থেকে ফি বছর ১৮ মে পালিত হয় ‘জাদুঘর দিবস’। এ বারে বিষয় ‘মিউজিয়ামস ইন আ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড: নিউ চ্যালেঞ্জেস, নিউ ইন্সপিরেশনস’। এ শহরে ভারতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে ৪টেয় আর শিবকুমার বলবেন ‘টেগোর অ্যান্ড মডার্ন ইন্ডিয়ান আর্ট’ শীর্ষকে। ভার্চুয়াল গ্যালারি, শিশু বিভাগ এবং সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের সঙ্গে যোগস্থাপন করে জাদুঘরের নতুন ওয়েবসাইটটিরও উদ্বোধন হবে এ দিন, জানালেন অধিকর্তা অনুপ মতিলাল। ওদিকে আইকম-এর অনুষ্ঠানটি যৌথ ভাবে আয়োজিত হয়েছে গুরুসদয় সংগ্রহশালায়। আলোচনায় বিশিষ্টজন। লোকগানের মাধ্যমে সংগ্রহালয়ের জনপ্রিয়করণ নিয়ে বলবেন আর্য চৌধুরি। এ দিকে দীর্ঘ দিন ধরে রবীন্দ্রসৃষ্টি থেকে তাঁর পরিবেশচিন্তা অন্বেষণ করে চলেছেন অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সব উপাদান, চিত্র ও আলোকচিত্র একত্র করে আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী ‘রবীন্দ্রনাথের পরিবেশভাবনা’। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আয়োজনে, কলকাতা তথ্যকেন্দ্রে আজই শেষ (২-৮টা)। প্রকাশিত হয়েছে একটি পুস্তিকাও।
|
দুই পরিবার |
কলকাতার ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ভবানীপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারের সম্পর্ক দীর্ঘকালের। শিক্ষার নানা প্রসঙ্গে মত বিনিময় হত রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আশুতোষের। ১৯৩৬-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আশুতোষ-পুত্র শ্যামাপ্রসাদের আমন্ত্রণে দীক্ষান্ত ভাষণ দেন রবীন্দ্রনাথ। মুখোপাধ্যায় পরিবার থেকে প্রকাশিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘বঙ্গবাণী’র (১৯২২-২৬) বিভিন্ন সংখ্যায় লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। ঠাকুরবাড়ি ও মুখোপাধ্যায় পরিবারের সংযোগ নিয়ে সমুদ্র-হিমাদ্রির মহাসঙ্গমে (অঞ্জলি, ৫০০.০০) নামে একটি বই লিখেছেন আশুতোষের দৌহিত্রী রীণা ভাদুড়ি। সম্প্রতি এটির উদ্বোধন করেন ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য। রবীন্দ্রনাথের প্রায় ৩০টি চিঠি, দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র, ও দুই পরিবারের বহু তথ্য রয়েছে বইটিতে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মসার্ধশতবর্ষের প্রাক্কালে বইটি অবশ্যই উজ্জ্বল প্রাপ্তি। সঙ্গের ছবিতে আশুতোষের মূর্তির সঙ্গে ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী।
|
সাহসী |
কবিতাই ছিল শেষ কথা। সেই নেশাকে অবলম্বন করে প্রথম বই পোকাদের আত্মীয়স্বজন। কবিতা থেকে সিনেমা রাস্তাটা এলোমেলো। কেমন গুলিয়ে যায়। শুধু মনে পড়ে ‘সুবর্ণরেখা’র কথা। ঋত্বিক ঘটকের ছবিটিই বলে দিয়েছিল সিনেমা ছাড়া আর কিছু নয়। না, কোনও প্রথাগত ট্রেনিং নয়, মনে ধরেছিল মৃণাল সেনের কথা। বানাতে বানাতেই সিনেমা তৈরি শিখতে হয়। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুরু করলেন ছবি তৈরি। নির্দেশনা দিয়েছেন কলকাতার স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়ে একটি বাংলা সিরিয়ালের। নব্বইয়ের শেষ দিকে প্রথম ছবি ‘সম্প্রদান’-এর পর তাঁর নির্দেশনায় ‘শিল্পান্তর’, ‘কাল’ এবং ‘কাঁটাতার’ পেরিয়ে ‘হাউসফুল’-এর মতো মেনস্ট্রিম ছবি বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে ‘কাগজের বউ’। তৈরি করছেন জনজাতি সম্প্রদায়ের একটি মেয়ের বিক্রি হওয়ার সত্য ঘটনা নিয়ে হিন্দি ছবি ‘দেবকি’। এ বারের ছবি ‘এলা’কে নিয়ে। ‘রবীন্দ্রনাথের সব নারী চরিত্রই সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে। ১৯৩০-এ এলা যে সাহসিকতা দেখিয়েছিল, তা সত্যিই ভাবায়।’ রবীন্দ্র-সার্ধশতবার্ষিকীর অন্তিম লগ্নে মুক্তি পেল রবীন্দ্রনাথের শেষ উপন্যাস ‘চার অধ্যায়’ অবলম্বনে ‘এলার চার অধ্যায়’। চার অধ্যায় কেন? ‘নিন্দুক বাঙালি আত্মসমালোচনা জানে না। সেখানে দাঁড়িয়ে ছবিটি প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তা ছাড়া এর রাজনৈতিক প্রেক্ষিত আজও গুরুত্বপূর্ণ।’ |
|
|
|
শিল্পী |
গানের জীবন শুরু নজরুলগীতি দিয়ে। ১৯৩৩-এ জন্ম উত্তর কলকাতায়। বাবা ছিলেন বিদ্যাসাগর কলেজে দর্শনের শিক্ষক। ছোটবেলার কিছুটা কেটেছে উত্তর কলকাতাতেই। পরে চলে যান দক্ষিণ কলকাতার নতুন বাড়িতে। মায়ের কাছে শিখেছেন অতুলপ্রসাদ ও রবীন্দ্রনাথের গান। কী করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে শুরু করা? আশিতে পা দেওয়া শিল্পী বলছেন, “স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হলাম লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। সেখানে ইন্টার কলেজ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় নিয়ম ছিল সব রকম গানে যে প্রথম হবে সে-ই ট্রোফি পাবে। তখনই শিখলাম কীর্তন থেকে শুরু করে আধুনিক গান। এইচএমভি থেকে প্রথম রেকর্ড রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ, ১৯৬১-তে। কিন্তু না, রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, দুর্গা সেনের সুরে নজরুল ইসলামের গান।” ১৯৭০-এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান। তখন থেকেই জীবনে একমাত্র গান হয়ে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। এর প্রথাগত শিক্ষা সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রসাদ সেনের কাছে, ‘বৈতানিক’-এ। এগারোই মাঘ মাঘোৎসব উপলক্ষে জোড়াসাঁকোয় যে গানের অনুষ্ঠান হত সেখানে বৈতানিক-এর গান থাকত। অনেকের সঙ্গে গাইতেন সুমিত্রাও। পরে হয়ে ওঠা পুরোদস্তুর রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বেসিক রেকর্ড অনেক, পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন বহু বাংলা ছবিতে। সম্প্রতি পেয়েছেন সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। এখনও শহরের বাইরে গান গাইতে যান। রয়েছেন রবীন্দ্রসদন-সহ নানা সঙ্গীতবিষয়ক সরকারি কমিটিতেও। |
|
|
|
|
|
|
|