মানব মস্তিষ্কের রোগ নিরাময়ে ‘সুপার কম্পিউটার’! আন্তর্জাতিক এক দল গবেষকের দাবি মেনে নিলে গবেষণা সফল হলে শীঘ্রই মানব মস্তিষ্কের সমকক্ষ হয়ে উঠতে চলেছে ওই সুপার কম্পিউটার।
গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি পরিণত মানব মস্তিষ্কে প্রায় ১০ হাজার কোটি নিউরোন থাকে। আর এরা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি নিউরোন প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশো কোটি ধরনের হিসেব করে থাকে। আর প্রতি মুহূর্তে মস্তিষ্কের সব ক’টি নিউরোনের সম্মিলিত কর্মকাণ্ড এখনও রহস্যে মোড়া। আর সেই রহস্য উন্মোচনেরই চেষ্টা চলছে জার্মানিতে।
কাজটা অবশ্য করছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা মিলে। তাঁদের দাবি, এমআরআইয়ের মাধ্যমে প্রথমে মানব মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা হয়েছে। এর পরে বিভিন্ন উদ্দীপনায় প্রতিটি নিউরোন ঠিক কী ভাবে সাড়া দেয়, সেই তথ্য জোগাড় করে একটি সুপার কম্পিউটারে তুলে রাখার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওই সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মধ্যে কী ভাবে সংযোগ রক্ষা করে তা-ও পরীক্ষা করে দেখছেন জার্মানির ডাসেলডর্ফের বিজ্ঞানীরা। দলের প্রধান গবেষক সুইৎজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী হেনরি মারক্রাম জানান, বছর বারোর মধ্যেই গবেষণা শেষ হয়ে যাবে বলে তাঁদের আশা।
মারক্রাম জানালেন, গবেষণা সফল হলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এমনকী, নিউরোনের বিভিন্ন ওষুধ মানব দেহের উপর পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে যে সব বিধিনিষেধ আছে তা-ও থাকবে না। কারণ, এই গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি করা যাবে রোবট, যার আচার আচরণ হবে একেবারে মানুষের মতো। ফলে এর উপরেই বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব পরীক্ষা করা যাবে। এর আগে মারক্রাম ও তাঁর নেতৃত্বে এক দল গবেষক ১৫ বছর ধরে ইঁদুরের মস্তিষ্কের উপর পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করা যে এর থেকে অনেক কঠিন তা মেনে নিয়েছেন মারক্রাম।
জার্মানির সংবাদমাধ্যম মজা করে ওই গবেষক দলের নাম দিয়েছে ‘টিম ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’। কারণ গবেষকদের দাবি এই গবেষণা সফল হয়ে মস্তিষ্কের কাজকর্ম নকল করে কম্পিউটাররা নিজে নিজেই চিন্তাভাবনা করতে পারবে। এই গবেষণার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে একশো কোটি ইউরো সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে প্রায় দু’শো কোটি মানুষ অ্যালঝাইমার্স, সিজোফ্রেনিয়া-সহ মস্তিষ্কের কোনও না কোনও রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু বেশির ভাগের রোগই সময় মতো চিহ্নিত হয় না। ফলে মস্তিষ্কের রোগের বিষয়টি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। আর তাই এই গবেষণার সাফল্যের উপরই হয়তো নির্ভর করছে কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ। তবে ওই সুপার কম্পিউটারের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ জোগাড় করাটাই এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
মারক্রামের সহকারী বিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াকার জানালেন, কাজ চালানোর জন্য মস্তিষ্ক-যন্ত্রটির বিদ্যুৎ লাগে নামমাত্র। আর তা কাজ করে চলে নব্বই-একশো বছর। অথচ সেই কাজ করতে সুপার কম্পিউটারের লেগে যাবে বিপুল পরিমাম বিদ্যুৎ। রিচার্ডের মতে, মস্তিষ্ক এত কম শক্তিতে কী করে কাজ চালাতে পারে তা যদি এক বার জানা যায়, তবে হয়তো পৃথিবীর শক্তির চাহিদা মেটানোর পথ খুলে যেতে পারে। |