কলকাতায় যাচ্ছেন বলে শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন হাওড়ার এক ব্যবসায়ী। মাঝপথে এক পরিচিতের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। কিন্তু তার পর থেকে প্রায় ৪০ ঘণ্টা কেটে গেলেও ওই ব্যবসায়ীর কোনও খোঁজ মেলেনি। রহস্যজনক এই ‘অর্ন্তধানের’ তদন্তে নেমে শনিবার রাত পর্যন্ত কার্যত অন্ধকারেই রয়েছে হাওড়া জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বয়স পঁয়ত্রিশের ওই ব্যবসায়ীর নাম তাপস পাল। বাড়ি হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পাতিয়াল গ্রামে।
 |
নিখোঁজ তাপস পাল |
তাঁর বাড়িতে স্ত্রী ও তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। পাতিয়াল বাসস্ট্যান্ডের কাছেই তাপসবাবুর সোনার দোকান। গয়নার কারবার ছাড়া সেখানে গয়নার বাক্সও তৈরি হয়। তাপসবাবুর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, গয়নার বাক্সের জন্য কলকাতার বড়বাজার থেকে নিয়মিত বরাত পান ওই ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে তিনি প্রায়ই কলকাতায় যেতেন। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে লাখখানেক টাকাও ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাপসবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর, ৯টা ২৫ মিনিটে পাতিয়াল স্টেশন থেকে হাওড়া যাওয়ার ট্রেন ধরেন তিনি। বেলা ১১টা নাগাদ তাপসবাবুর সঙ্গে তাঁর এক কর্মচারীর কথা হয়েছিল।
দুপুরে বাড়ির লোক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মোবাইল বন্ধ পান। শুক্রবার রাতেই জগৎবল্লভপুর থানায় ওই ব্যবসায়ীর তরফে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। হাওড়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার হাওড়া সিটি পুলিশ, কলকাতা পুলিশ ও ভবানী ভবনে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের মিসিং পার্সনস স্কোয়াড-এও তাঁরা খবর দিয়েছেন।
তাপসবাবুর বড় শ্যালক অমিত মারিক বলেন, “বেলা এগারোটা নাগাদ তাপস হাওড়া স্টেশন থেকে বড়বাজার যাওয়ার জন্য বাস ধরতে যাচ্ছে বলে জানায়। এর পর থেকে ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।” তাপসবাবুর ‘নিখোঁজ-রহস্য’ নিয়ে ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারীরাও। হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “ওই ব্যবসায়ী কেন নিখোঁজ তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। কলকাতা পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তাঁর খোঁজ চলছে।”
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাপসবাবুর মোবাইলের কললিস্ট অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৭ টা ২৩ মিনিটে তিনি একটি নম্বরে ফোন করেছিলেন। এর পরে বেলা ১১টায় তাঁর মোবাইলে ওই কর্মচারীর ফোন আসে। পুলিশ সূত্রের খবর, মোবাইলের ‘টাওয়ার’-এর অবস্থান দেখে ওই রহস্যের সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। এক পুলিশকর্তা বলেন, “কখন, কোথায় মোবাইলটি বন্ধ করা হয়েছিল, সেটাই খোঁজার চেষ্টা চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত পর্যন্ত ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে কোনও ফোন আসেনি। তবুও, অপহরণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাপসবাবুর সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |