অলঙ্কার সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান। |
কবি পূর্ণেন্দু পত্রী একবার লিখেছিলেন
‘প্রতিদিন প্রতিনিয়তই তাঁর সঙ্গে আমাদের চলাফেরা, মেলামেশা
আমাদের হাতের লেখা রবিঠাকুরের
আমাদের কথা বলার ভাষা রবিঠাকুরের।...
তাই প্রতিদিনই তাঁর জন্ম
কোনও দিনই মৃত্যু নেই।
...
কালের কালাপাহাড় এসে
ভারতবর্ষ থেকে কোনও দিন সমস্ত ঠাকুরের পুজোর প্রদীপ
নিভিয়ে দিয়ে যায় যদি,
তবু একটি ঠাকুরের বেদী চিরকাল থাকবে মাটির সঙ্গে গাঁথা
কোন্ ঠাকুর?
রবি ঠাকুর।’ |
সাঁইথিয়া উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন। |
বাস্তবিকই তাই। সারা বছর ধরে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালিত হয়। এই বছর ২৫ বৈশাখে সিউড়িতে অন্তত ৮টি অনুষ্ঠান হয়েছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা ওই সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। রামপুরহাট, বোলপুর, সাঁইথিয়া, নলহাটিতেও নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। পরের দিন দুবরাজপুরের ইয়ুথ কর্নার শান্তিনিকেতনের শিল্পীদের এনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করেছে। সব মিলিয়ে ২৫ শে বৈশাখ, জেলা ছিল আক্ষরিক অর্থেই রবীন্দ্রময়। |
মুরারইয়ের বিশ্বনাথ দত্ত-র বয়স এখন ৭২ বছর। কিন্তু বয়সের কথা জিজ্ঞেস করলেই তাঁর ঝটপট উত্তর “৪ বছর অন্তর অন্তর আমার জন্মদিন হয়। সেই কারণে আমার বয়স এখন ১৮!” কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে যেন হৃদয়ের মাঝেই রাখতে ভালবাসেন। ১৯৫৫ সাল থেকে নাটক করেছেন। প্রায় ৫০টি নাটকে নির্দেশনা ও অভিনয় করেছেন। প্রাক্তন রেলকর্মী এখন মশগুল কচিকাঁচাদের নাটক নিয়ে। সাক্ষাতকার নেওয়ার কৌতুক করে বললেন, “কী এমন কাজ করেছি যে ‘সেলিব্রিটি’ হয়ে গেলাম!” সাহিত্যের প্রতিও তাঁর সমান আগ্রহ। সাহিতের সভা বা আড্ডার কথা জানতে পারলেই তিনি হাজির হ’ন বিনা আমন্ত্রণেই। |
“শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী—
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে বসি কবিগণ
সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন।
সঁপিয়া তোমার পরে নূতন মহিমা
অমর করিছে শিল্পী তোমার প্রতিমা।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘মানসী’, “চৈতালি” |
বিশ্বকবির এই কবিতার সূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথের জীবন-চরিত, পূজারিনী, ভানুসিংহের পদাবলী, চণ্ডালিকা, চিত্রাঙ্গদা, কর্ণকুন্তি সংবাদ এবং স্ত্রীর পত্র থেকে খণ্ডাংশ নিয়ে কোলাজ করা হয়েছে ‘নহি সামান্য নারী’। ওই অসাধারণ কোলাজ কবিতা ও নৃত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললো ‘সংস্কার ভারতী’র সংস্থার সিউড়ি শাখা। অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হয়েছে গত শনিবার বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে। ১৯ জন শিল্পী মিলে সেদিন সন্ধ্যায় তৈরি হল ‘নহি সামান্য নারী’। মূল আয়োজক ছিল সংস্কার ভারতীর পশ্চিমবঙ্গ শাখা। এ ছাড়াও রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রকৃতি বন্দনাও ছিল। সব মিলিয়ে ৫৮ জন শিল্পী যোগ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন অংশ পর্দায় প্রক্ষেপণ করে ওই অনুষ্ঠান নতুন মাত্রা যোগ করেছে। |
• রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে পঁচিশে বৈশাখ বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। ওই দিন বিষ্ণুপুর মহকুমা সংশোধনাগার এবং বৈলাপাড়ায় রবীন্দ্র-মূর্তির পাদদেশে রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষ স্মরণে স্বতন্ত্র দু’টি অনুষ্ঠান হয়। প্রথমটির আয়োজক বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। দ্বিতীয়টি রবীন্দ্র-সংসদ। ওই দিন সংশোধনাগারে রবীন্দ্র গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবাসিকরা এবং রবীন্দ্র-মূর্তির পাদদেশে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান হয়। বিকনার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাপীঠে গত ৯ মে বিশ্বকবিকে নিয়ে একটি শ্রদ্ধা-স্মরণ অনুষ্ঠানে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং রবীন্দ্র কবিতা পরিবেশন করে। |
• বড়জোড়ার বান্ধব সমিতি গ্রন্থাগারের হলঘরে, রায় কলোনি, সন্মিলনী ক্লাব রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান করেছে। এ ছাড়া, মালিয়াড়া সন্তোষ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বাঁকুড়ার ‘ভারতীয় সংস্কৃতি চক্র’ বাঁকুড়ার ‘হিল হাউস’, বড়জোড়ার একটি প্রতিবন্ধী শিক্ষণ স্কুলে নানা অনুষ্ঠান হয়। এ ছাড়া, ওই দিন ট্যাবলো গাড়ি শহর পরিক্রমা করে, বিভিন্ন জায়গায় বসে আঁকো প্রতিযোগিতাও হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ও জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতর রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
•
বাঁকুড়ার পাশাপাশি পুরুলিয়াতেও সাড়ম্বরে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন হয়েছে। ওই দিন সাংস্কৃতিক সংস্থা প্রভাতীর উদ্যোগে পুরুলিয়া শহরে নেতাজি সুভাষ উদ্যানে ডাকঘর নাটকের নাট্যাংশ পরিবেশন করেন কথামালার শিশু শিল্পীরা। এ ছাড়া, বাঘমুণ্ডিতে প্রভাতফেরি, শহরের শক্তি সঙ্ঘ, নীলকুঠিডাঙা ক্লাব, মানবাজারের আজাদ হিন্দ ক্লাব অমরশঙ্কর স্মৃতি মঞ্চ, মানবাজার রাধামাধব হাইস্কুলের পক্ষ থেকেও কবিকে স্মরণ করা হয়। এমন কী সপ্তাহব্যাপী রবীন্দ্রজয়ন্তীর মূল সমাপ্তি অনুষ্ঠান হয়েছে পুঞ্চার লাখরা উপেন্দ্রনাথ হাইস্কুলে। সেখানে ছিলেন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সিধো কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শমিতা মান্না, জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ প্রমুখ। |
রবীন্দ্রনাথের জন্ম সার্ধশতবর্ষ সমাপ্তি অনুষ্ঠান হয়েছে রঘুনাথপুরে। এই উপলক্ষে গত ৮ও ৯ মে মহকুমার প্রতিটি ব্লকে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি হয়েছে রঘুনাথপুর শহরে। কবির মূর্তিতে মাল্যদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে রঘুনাথপুরের জি ডি ল্যাং হাইস্কুলে। সন্ধ্যায় উপ-সংশোধনাগারে হয়েছে আর একটি অনুষ্ঠান। সেখানে মহকুমা তথ্য সাংস্কৃতিক দফতরের সহায়তায় বিচারাধীন বন্দীদের সামনে নাচ, গান পরিবেশন করেন এলাকার শিল্পীরা। অন্য দিকে, রবীন্দ্রনাথ ও স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে ৮মে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে সাঁওতালডিহিতে। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরির সময়ে গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেছিলেন। পরে সন্ধ্যায় রিক্রিয়েশান ক্লাবের উদ্যোগে মুক্তাঙ্গনে হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভা। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুতকেন্দ্রের আধিকারিকরা ও পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী ভাস্করানন্দ ও শিক্ষক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া, আবৃত্তি পরিষদ, মুক্তদল ক্লাব, গণণাট্য সংস্থা রবীন্দ্র জন্মদিন পালন করেছে। |
শিউলি (ঝুমকোলতা) স্মৃতি গ্রন্থাগারের ষষ্ঠতম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে রঘুনাথপুর গার্লস হাইস্কুলে। গান,আবৃত্তিতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছিল।
|
সাঁওতালডিহিতে প্রভাতফেরি। |
|