সঙ্কটে স্বনির্ভরতা
থমকে উদ্যোগ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে’।
সেই উদ্যোগও নিয়ে ছিল বাম আমলে রুগ্ন হয়ে পড়া হাওড়ার একটি সরকার অধীনস্থ উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা নির্দেশে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে ওই সংস্থার ‘স্বনির্ভর’ হওয়ার উদ্যোগ। আর এই নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে অফিসার ও কর্মীদের মধ্যে।
সংস্থাটির নাম হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (এইচআইটি) বা হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা।
ওই সংস্থা সূত্রে খবর, গত ১০ বছর ধরে বড় কোনও প্রকল্পের কাজ না পেয়ে কার্যত রুগ্ন হয়ে পড়ছিল সংস্থার অর্থনৈতিক অবস্থা। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে কয়েক বছর আগে নিজেদের জমিতে আবাসন প্রকল্প তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থা। এ জন্য কামারডাঙার আড়ুপাড়ায় সংস্থার ৫০ একর জমিতে কাজও শুরু হয়েছিল। পরিকল্পনা মাফিক জমির আশপাশের ৬০ ফুট রাস্তা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজও চলছিল জোর কদমে। এর মধ্যেই খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকা। কিন্তু এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ওই জমিতে কলকাতা পুলিশ অ্যাকাডেমি ও পুলিশ হাসপাতাল তৈরি হবে। এই ঘোষণার পরেই কার্যত মাথায় হাত পড়ে যায় সংস্থার কর্তা ব্যক্তিদের। সংস্থার ভবিষৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন কর্মচারীরা। বাম কর্মচারী সংগঠনের পাশাপাশি তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনও সরকারের কাছে জমির দাম আদায়ের জন্য দাবি তোলেন।
এইচআইটি-র বামপন্থী কর্মচারী সংগ্রাম সমিতির সম্পাদক দীপায়ন মণ্ডল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কিছু দিন আগে বলেছিলেন সরকার অধীনস্থ সংস্থাগুলিকে নিজেদের উদ্যোগে আয় বাড়িয়ে স্বাবলম্বী হতে হবে। কিন্তু সেই মুখ্যমন্ত্রী কী করে এমনই এক সংস্থার ঘুরে দাঁড়াবার পথ রুদ্ধ করলেন?” তিনি জানান, সংস্থার ভবিষতের কথা ভেবে জমির বতর্মান বাজার দর অনুযায়ী সরকার টাকা না দিলে আন্দোলন শুরু হবে। তৃণমূল প্রভাবিত হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক গৌতম বসু বলেন, “আমরা চাই এই সংস্থার স্বার্থে সরকার জমির ন্যায্য মূল্য দিক। আমাদের ধারণা সরকার এ ব্যাপারে ঠিক পদক্ষেপ করবে। ” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আসলে ওই জমির দাম বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা।” কর্মচারীদের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার হাওড়া ডুমুরজলা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে পাঁচিল দেওয়ার জন্য যেখানে ১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা দিতে পারছে না তখন এই টাকা মিলবে কী?
হাওড়ার শহরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তৈরি এই সংস্থাটির জন্ম ১৯৫৭ সালে। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর এ্যাপ্রোচ রোড (ফ্লাইওভার) তৈরির কাজ ছাড়াও হাওড়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভার, রাস্তাঘাট ও আবাসন তৈরির কাজ করেছিল ওই সংস্থাটি। কিন্তু ওই সংস্থা সূত্রে খবর, ১৯৯৫-এর পরে শুধুমাত্র সাংসদ তহবিলের টাকায় কিছু উন্নয়নের কাজ ছাড়া আর বড় কাজ পায়নি সংস্থাটি।
সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকার বর্তমান ৩৫০ কর্মীর বেতন দিলেও প্রায় ৬৫০ জন প্রাক্তন কর্মী-অফিসারের পেনশন সংস্থাকেই দিতে হয়। এ ছাড়া গাড়ি-সহ অন্যান্য খরচ ও অফিসের রক্ষণাবেক্ষণের করতেই হিমসিম খেতে হয়।”
কিন্তু আড়ুপাড়ার ওই জমির দাম দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও সবুজ সংকেত পাওয়া গিয়েছে কি?
হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে খবর, রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। তবে সংস্থার কর্মীরা ক্ষোভ জানার পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে ওই জমির বর্তমান বাজারদর জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এটি সরকারি প্রস্তাব। কে কাজ করবে তা সরকারই ঠিক করবে। টাকাও সরকার বরাদ্দ করবে। সমস্ত ব্যাপারটি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.