নিউ ইয়র্কে হিলারির মুখে মমতা-কাহিনি
নারীর মঞ্চে নারীর মুখে নারীর কথা।
এক জন পৃথিবীর বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অন্য জন পৃথিবীর বৃহত্তম প্রেসিডেন্ট-শাসিত গণতন্ত্রের বিদেশসচিব। ‘টাইম’ পত্রিকার ১০০ নারীর তালিকায় আছেন দু’জনেই। প্রথম জনকে দেখতে ক’দিন আগেই ছুটে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় জন। সেই ‘স্মরণীয়’ অভিজ্ঞতার কথা তিনি এ বার ভাগ করে নিলেন স্বদেশের মঞ্চে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সদ্য কলকাতা-ফেরত হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন! নিউ ইয়র্কের একটি মহিলা সংগঠনের অনুষ্ঠানে।
দুই নারীর সূত্রে বাঁধা পড়ল দুই শহর, নিউ ইয়র্ক আর কলকাতা। এক সুতোয় গাঁথা হয়ে গেল দুই শহরের আরও সব লড়াকু মেয়ের কাহিনি, অনেকখানি সাহস আর মনোবল সঞ্চয় করে যারা অন্ধকার থেকে পা রেখেছে আলোর জগতে।
মহাকরণে সে দিন।
নিউ ইয়র্ক উইমেনস ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে গত কাল কৃতী নারী হিসেবে পুরস্কৃত হলেন হিলারি। হিলারির বক্তৃতায় অনেকখানি জায়গা জুড়ে থেকে গেল তাঁর সাম্প্রতিক কলকাতা সফরের কাহিনি। আর এক কৃতী নারীর উত্থানের গল্প। হিলারির নিজেরই কথায়, “যিনি নিজের হাতে একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করেছেন, অনেক বছর ধরে সেই দল চালাচ্ছেন এবং সবেমাত্র তিন দশকের কমিউনিস্ট শাসনকে সফল ভাবে উৎখাত করেছেন। এবং এখন যিনি ন’কোটির সেই রাজ্যে সুশাসন আনার চেষ্টা করছেন।”
‘চেষ্টা’র ফল ভবিষ্যত জানবে। বর্তমানটা হল, এক জন আটপৌরে মহিলাই ভেঙে দিয়েছেন ৩৪ বছরের বাম দুর্গ! অথচ হিলারি নিজেই স্বীকার করেছেন, “ভোটের লড়াইয়ে কোনও মহিলার নির্বাচিত হওয়া কত কঠিন, আমি জানি!” জানেন বটে! আমেরিকা তো এখনও মহিলা প্রেসিডেন্ট পায়নি! প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে হিলারি নিজেই হেরে গিয়েছিলেন বারাক ওবামার কাছে! নিজে যদি না-ও পারেন, হিলারি কলকাতায় বলে গিয়েছেন, “জীবদ্দশায় অবশ্যই কোনও মহিলাকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চাই।” এ রাজ্যও এই প্রথম এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখছে। তাঁকে দেখতেই তো গত সোমবার এই প্রথম কোনও মার্কিন বিদেশসচিব মহাকরণে এলেন। দরাজ প্রশংসায় বলে গেলেন, ‘‘উনি (মমতা) অনেকগুলো কাচের দেয়াল ভাঙতে পেরেছেন!” হিলারির কথাগুলো যে নিছক কথার কথা ছিল না, নিউ ইয়র্কের অনুষ্ঠান কিন্তু সেটাই প্রমাণ করে ছাড়ল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা, অক্লান্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া মেয়েদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে হিলারি তাঁর কলকাতা-সফরের কাহিনি নিয়ে রীতিমতো আপ্লুত হয়ে পড়লেন।
সাহসী কন্যাকে ভোলেননি হিলারি।
একা মমতা নন, হিলারি তাঁর বক্তৃতায় তুলে আনলেন কলকাতার সেই মেয়েদের কথাও, পাচার-চক্রের হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে যারা নতুন করে বাঁচার অর্থ খুঁজে পেয়েছে। গত রবিবার কলকাতায় আইসিসিআর ভবনে এক অনুষ্ঠানে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে তেমনই এক ঝাঁক কিশোরী-তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল হিলারির। কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে দেখা করারও আগে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ওই অনুষ্ঠানেই গিয়েছিলেন হিলারি। রাষ্ট্রের ভূমিকায় যখন সীমাবদ্ধতা থাকে, তখন এই জাতীয় সংগঠনের কাজকর্মের পরিধি অনেক বেড়ে যায় বলে মনে করেন অনেকে। গত কাল কলকাতার সেই অভিজ্ঞতার কথা নিউ ইয়র্কের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মঞ্চ থেকেই সকলকে শোনালেন হিলারি। বললেন, “আজ এখানে মেয়েদের (নিউ ইয়র্কের ওই মহিলা সংগঠনের) লড়াইয়ের যে সব আখ্যান শুনলাম, কলকাতায় শোনা গল্পগুলোর সঙ্গে তাদের অদ্ভুত মিল!” হিলারি বলতে লাগলেন আরারিয়ার সেই মেয়েটির কথা যে তাঁকে ক্যারাটের প্রকরণ দেখিয়ে মুগ্ধ করেছিল!
“কতই বা বয়স হবে মেয়েটার? বছর দশেক! ক্যারাটের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে। ওর মা আর ওকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক নিষিদ্ধপল্লি থেকে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি আমার ক্যারাটে দেখতে চাও?” “অবশ্যই চাই”, বললাম আমি। ও এগিয়ে গিয়ে দেখাতে লাগল ওর শেখা ক্যারাটের কসরত। আমি কিন্তু যত না ক্যারাটে দেখছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি দেখছিলাম ওর সোজা হয়ে দাঁড়ানোটা। আমার চোখে চোখ রেখে ওর সেই প্রত্যয় আর সাফল্য-ভরা দৃষ্টি!”
আলোয় ফেরা মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে কলকাতায় হিলারি বলে গিয়েছিলেন, ‘‘তোমরা একা নও। এই লড়াইয়ে আরও বহু চিয়ারলিডার অলক্ষে তোমাদের পাশে দাঁড়িয়ে!’’ অলক্ষে নয়, সবর্সমক্ষেই এ দিন নিউ ইয়র্কের মেয়েদের কাছে কলকাতার গল্পকে পৌঁছে দিলেন হিলারি। নারীশক্তির চিয়ারলিডার!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.