দমদম
‘ভুলের’ শাস্তি, বেধড়ক মার ন’বছরের পরিচারিকাকে
রাতে সদর দরজায় তালা দিতে ভুলে গিয়েছিল ন’বছরের পরিচারিকা নিফা খাতুন। সেই ‘অপরাধে’ তাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল মনিব আফরোজা বিবির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার, দমদমের খলিশাকোটার ঘটনা।
জখম নিফা খাতুন।
নিজস্ব চিত্র
অভিযোগ, শুধু বুধবার রাতে সদর দরজা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়াই নয়, যে কোনও ‘ভুল’ করলেই নিফাকে মারধর করতেন আফরোজা। এত দিন সব মারধর মুখ বুজে সহ্য করলেও বৃহস্পতিবার নিফা আর থাকতে পারেনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়শিদের নজরে পড়ে যায় সে। নিফাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরাই। গুরুতর জখম অবস্থায় নিফাকে দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ছেড়ে দেওয়া হলে তাকে এ দিন রাতেই নিয়ে আসা হয় দমদম থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, আফরোজার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মারাত্মক ভাবে জখম করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আফরোজা খলিশাকোটার বাড়িতে ফেরেননি। তাঁর মোবাইলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আফরোজার বাপের বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিফার বাড়ির লোকেদের খবর দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত মাস আগে নিফা আফরোজাদের বাড়িতে কাজে যোগ দেয়। বারাসত থানা এলাকার বেলিয়াঘাটা হাইস্কুলের প্যারা-টিচার আফরোজা। তিনি দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খলিশাকোটার বাড়িতে থাকেন। তাঁর স্বামী লুথফর রহমান ইংরেজির শিক্ষক। তিনি গত কয়েক মাস ধরে ওই বাড়িতে থাকেন না। আফরোজার বারো বছরের ছেলে ও আট বছরের মেয়েকে দেখাশোনা ও বাড়ির ফাইফরমাস খাটত নিফা। অভিযোগ, কাজে ঢোকার পর থেকেই তাকে মারধর করতেন আফরোজা। বুধবার রাতে মার খাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার সকালে নিফা পালাতে যায়। তখন তাকে দেখে ফেলেন বিজয় চৌধুরী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা। বিজয়বাবু বলেন, “আফরোজার ছেলে ও মেয়ে রোজ সাড়ে বারোটা নাগাদ স্কুলের গাড়ি করে বাড়ি ফিরত। তাদের পাড়ার মোড় থেকে আনতে যেত নিফা।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ দেখি, নিফা পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে নিফা বলে, ও গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে। না হলে পিসি আবার মারবে। নিফার একটা চোখ এতই ফোলা ছিল যে চোখ খুলতে পারছিল না। তার পরে ও সব খুলে বলে।”
পড়শিরা জানিয়েছেন, নিফাকে মাঝেমধ্যে মারধর করা হলেও সে কোনও দিনই তাদের কাছে ‘পিসি’ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ করেনি। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলেও সে কিছু বলত না। যদিও বৃহস্পতিবার রাতে দমদম থানায় বসে পুলিশের সামনে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছে নিফা। নিফা বলে, “বুধবার রাতে সদর দরজায় তালা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। সে জন্য দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিয়ে কাঠ দিয়ে মাথায় মেরেছে পিসি। এর আগেও খাটের তলা ঝাঁট দিতে ভুলে যাওয়ায় পিসি মেরেছিল। এমনকী, পিসির বাচ্চাদের খাবার দিতে ভুলে গেলেও মার খেতে হয়েছে।” সে আরও জানিয়েছে, তার ভাগ্যে দুপুরে জুটত পান্তাভাত, রাতে ডাল-ভাত। এক দিন রাতে ডাল-ভাত খেতে চায়নি বলেও মার খেতে হয়েছে তাকে।
নিফার বাড়ি হাড়োয়ায়। তার বাবা পেশায় দিনমজুর। নিফা বলে, “বাড়ি যেতে চাইলে পিসি বলত তোর কোথাও যাওয়া হবে না। বাড়ি গেলে খাবি কী? তোকে এখানেই থাকতে হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.