বহু কাল আগে জলপাইগুড়ি ছিল না। তখন ছিল বৈকুণ্ঠপুর। সেই বৈকুণ্ঠপুরের রাজা ফণীন্দ্রদেব রায়কত ১৮৯৬-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি আদালতের সাবজজ মি এ এফ স্টানবেরির কাছে একটি ইচ্ছেপত্র দাখিল করেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল তাঁর অনুপস্থিতিতে রাজার ব্রাহ্ম বিবাহিতা পত্নী রানি অমৃতেশ্বরীর একমাত্র পুত্র প্রসন্নদেব রায়কত বংশীয় কুলাচার মতে রায়কত গদি লাভ করবে। উইল প্রকাশের পর দিনই ফণীন্দ্রদেব মারা যান। নাবালক প্রসন্নর বয়স তখন আড়াই। উইলের তৃতীয় নির্দেশ অনুযায়ী রানিমাকে সাহায্য করতে থাকে একটি অছি পরিষদ। ১৯০৪-এর ২২ মার্চ রানির মৃত্যুর পর নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত হন জগদীন্দ্রদেব রায়কত। এই ভাবেই রায়কত রাজপরিবারে এক অনিশ্চিত হাতবদল ঘটে। |
১৯১৮-এর ১৮ অক্টোবর প্রসন্নদেব সাবালক হয়ে রাজাসনে বসেন। তিনি বত্রিশ বছর রাজত্বকালে জলপাইগুড়িতে নানা জনহিতকর কাজ করেন। ১৯৫৩-য় তাঁর মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘রাজ এস্টেট জমিদারি দখল আইন’ বলে রাজ এস্টেট দখল করে নেয়। জগদীন্দ্রদেব শুধু প্রসন্নদেবের অভিভাবক ছিলেন না, তিনি ১৯১৭-য় রানি অমৃতেশ্বরীর নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খোলেন। ১৯২১-এ তিনি জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস কমিটির প্রথম সভাপতি হন। ১৯৩৯-এ বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের মহাসম্মেলনে সুভাষ বোস বক্তৃতা করেন জগদীন্দ্রদেবের সৌজন্যে। তাঁর স্ত্রী সরলতা দেবী ছিলেন কেশবচন্দ্র সেনের আত্মীয়া। এই দম্পতির পুত্র সরোজেন্দ্রদেবের ধ্যানজ্ঞান ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। গাঁধীজি জলপাইগুড়িতে সভা করতে এলে সরোজেন্দ্রদেব উর্দু ভাষায় একটি ভজন গান। মহাত্মা তাঁর গানে মুগ্ধ হন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর গানে।
|
গঙ্গা-পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র এই দুই নদীর পলি দ্বারা গঠিত বাংলার বদ্বীপ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বদ্বীপ। উবর্র্র কৃষিক্ষেত্রের জন্য প্রাচীন কাল পশ্চিমের বহু জনজাতি এই ভূখণ্ডে বসতি গড়েছে। ফলে বাংলার সমাজ-অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্ন-নগরী বাণগড়ের খননকালে একটি বাণিজ্যিক সিলমোহরের আবিষ্কার বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ইতিহাসে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। খননকার্যে পাওয়া উক্ত সিলমোহরটিতে পাঁচটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ সিলমোহরটি এক সঙ্গে পাঁচটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রত্ন-ইতিহাসে এই ধরনের সিলমোহর বিরল। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলমোহরটিকে বরেন্দ্রভূমি তথা উত্তরবঙ্গ তথা বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রামাণ্য দলিল বলা যেতে পারে। নদীকেন্দ্রিক প্রাচীন সভ্যতাগুলি যে নৌ-পথে ব্যবসায় সমৃদ্ধ ছিল, পুনর্ভবা নদীর তীরে গড়ে ওঠা বাণগড় নগরীর গর্ভে পাওয়া এই সিলমোহরটি সেই কথাই প্রমাণ করে। যদিও সেই বরেন্দ্রভূমি অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ আজ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া একটি দরিদ্রতম অঞ্চল। এই সিলমোহরটি যেন বর্তমান বাঙালিদের সেই দারিদ্রকেই ব্যঙ্গ করছে।
|
বাংলা সাহিত্য জগতের বাইরে থেকেও এই সাহিত্যকে তিনি জানবার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে অনুবাদকর্ম। বেশ কিছু সাহিত্য বাংলা থেকে নেপালিতে এসেছে তাঁর হাত ধরেই। নেপালি পাঠক পরিচিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত, শরৎচন্দ্র, প্রতিভা বসুর সঙ্গে। তিনি নেপালি ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক কর্ণ থামি। ছাত্র জীবন থেকেই সাহিত্যে মনোনিবেশ। কবিতা, ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। |
নির্বাচিত পঞ্চাশটি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কবিতা সংকলন ধূপ জ্বল রহেছো। লিখেছেন মৌলিক নাটক আঁধি। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পঁচিশটি কবিতার নেপালি অনুবাদ সুকান্ত কো কবিতা হরু। এ ছাড়াও একুশ জন বাঙালি সাহিত্যিকের একুশটি ছোটগল্প নেপালি ভাষায় অনূদিত করে লিখেছেন বাংলা কো শ্রেষ্ঠ কথা। তাঁর কলমে নেপালি অনুবাদে ধরা পড়েছে নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টি। দার্জিলিংবাসী এই সাহিত্যিক সম্প্রতি পেলেন আকাদেমি পুরস্কার।
|
তপন ব্লকের বাঁধশনকইর গ্রামের বাসিন্দা চৈতন্য মহন্ত -তুলি মহন্ত। ওঁরা কোনও স্বাস্থ্য প্রশাসন কিংবা বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু নিজেদের সচেতন মন নিয়ে কাজের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন স্বাস্থ্য-সচেতনতার বাণী। বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের বকুলতলায় এমনই দৃশ্য চোখে পড়বে। ওঁদের ঝালমুড়ির দোকান। হাসপাতাল চত্বরের দোকান। তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে নিজের সাইকেল দোকানেই চৈতন্য টাঙিয়ে নেন মশারি। যার ফলে হাওয়ায় ভাসতে থাকা জীবাণু, নর্দমার দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস, মশা, মাছির উৎপাত ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। না হলে যে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যসম্মত ঝালমুড়ি খাওয়ানো যাবে না। ক্রেতারাও এই উদ্যোগে দারুণ উৎসাহী। সকাল সাতটা থেকে শুরু করে সন্ধে সাতটা বারো ঘণ্টার দোকানে চৈতন্য-তুলি হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে খাবার তৈরি করেন। দৈনিক ৩০০ টাকা আয়। দোকানের মাঝেই তাঁরা ভাবতে থাকেন কী ভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার বাণী চার দিকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। ঝালমুড়ির সংসারই যেন তাঁদের ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ এর অমোঘ বার্তা।
|
সংশোধন |
|
গত সপ্তাহে (২/৫) প্রকাশিত ‘উত্তরের কড়চা’ বিভাগে ‘বৈঠকী আড্ডা’
শিরোনামে উপরের ছবিটির পরিবর্তে ভুলবশত ২৫/৪ কড়চায় প্রকাশিত
অন্য একটি ছবি ছাপা হয়েছিল। এর জন্য আমরা দুঃখিত। |
|