|
|
|
|
ধরমপুর সিআরপি ক্যাম্প |
তৃণমূল নেতাকে ‘মারধর’, সরতে হল ৫ জওয়ানকে |
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
দলের স্থানীয় এক নেতাকে ‘মারধর’ করেছেন ‘সিপিএম-ঘনিষ্ঠ’ জওয়ানেরা এই অভিযোগে লালগড়ের ধরমপুর সিআরপি ক্যাম্প অন্যত্র সরানোর দাবি তুলেছিল শাসক তৃণমূল। ক্যাম্প না সরালেও ঘটনার জেরে ৫ জন সিআরপি জওয়ানকে তড়িঘড়ি সরিয়ে দেওয়া হল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিলীপ মাহাতো নামে ওই প্রাক্তন মাওবাদী এবং অধুনা তৃণমূল নেতা নিজে ক্যাম্পে গিয়ে ‘অভিযুক্ত’ ৫ জওয়ানকে ‘শনাক্ত’ করেন। তার পরই
সরিয়ে দেওয়া হয় ৫০ নম্বর ব্যাটালিয়নের ওই জওয়ানদের। ওই জওয়ানদের কেউই বাঙালি নন। সিআরপি-র
এক পদস্থ কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, এটা কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়।
দিলীপবাবু ছিলেন জনগণের কমিটির প্রথম সারির নেতা। রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, হামলা, নাশকতা ও অপহরণের একাধিক মামলায় ২০১০ সালে গ্রেফতারও হন তিনি। তবে গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সব ক’টি মামলায় তিনি জামিন পেয়ে যান। তার পরই তাঁকে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি করা হয়।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূলের তরফে লালগড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুকুমার হাঁসদার বক্তব্য, “দিলীপবাবু আমাদের স্থানীয় নেতা। সেটা জেনেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের একাংশ তাঁর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছে, তা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। ঘটনার পরেই ৫ জন জওয়ানকে সরানো হয়েছে বলে শুনেছি। ওই ক্যাম্পের সব জওয়ানকে যাতে বদলে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বলেছি।” |
|
ধরমপুরের তৃণমূল নেতা দিলীপ মাহাতো। — নিজস্ব চিত্র |
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ধরমপুরের বাসিন্দাদের একাংশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু নালিশ জানিয়েছেন। সিআরপি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” ৫ জন জওয়ানকে সরানোর কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও সিআরপি’র ৫০ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট শঙ্করলাল সেনগুপ্তের বক্তব্য, “গোলমালের খবর শুনেছি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার ধরমপুর অঞ্চলের হদহদি গ্রামে একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর কাটা নিয়ে স্থানীয় সিপিএম সমর্থক গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় তৃণমূলের ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি দিলীপবাবু ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের। গ্রামবাসীদের একাংশের হাতে ‘নিগৃহীত’ হয়ে ঘটনার ‘বিহিত’ করতে ভুলাগাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে ওই দিন বিকেলে ‘সালিশি সভা’ ডাকেন দিলীপবাবুরাই। কাছেই ধরমপুর ক্যাম্প। সেখানে খবর পৌঁছয় মাওবাদীরা স্কুলে বৈঠক করছে। জঙ্গলঘেরা ভুলাগাড়া গ্রাম একটা সময় মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল। মাওবাদী বৈঠকের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি স্কুলে পৌঁছন কয়েকজন সশস্ত্র জওয়ান। দিলীপবাবুদের বেধড়ক মারধর হয় বলে অভিযোগ। দিলীপবাবু-সহ তৃণমূলের ৫ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। দিলীপবাবুর অভিযোগ, “ধরমপুর ক্যাম্পের জওয়ানদের সঙ্গে সিপিএমের ‘সুসম্পর্ক’ সকলেই জানেন। সিপিএমের প্ররোচনাতেই সিআরপি জওয়ানেরা আমাদের বৈঠক ভণ্ডুল করতে গিয়েছিল। আমাদের বেধড়ক পেটায় জওয়ানেরা। কোমরে দড়ি বেঁধে প্রথমে ক্যাম্পে ও পরে লালগড় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।” ঘটনা ঘিরে তৃণমূলের অভ্যন্তরে তুমুল ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার লালগড়ে যান পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা দলের তরফে লালগড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুকুমার হাঁসদা। সুকুমারবাবুর কাছে ‘অভিযুক্ত’ সিআরপি জওয়ানদের শাস্তি-সহ ক্যাম্প সরানোর দাবি জানান স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সিআরপি’র ৫০ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট শঙ্করলাল সেনগুপ্ত ‘সিপিএম-ঘনিষ্ঠ’ বলে অভিযোগ তুলে তাঁরও অপসারণ দাবি করা হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, এর পরই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর নির্দেশে লালগড় থানার আইসি এবং জেলার ভারপ্রাপ্ত ডিএসপি (অপারেশন)-এর উপস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধরমপুর ক্যাম্পে গিয়ে ‘অভিযুক্ত’ জওয়ানদের শনাক্ত করেন দিলীপবাবু। এর পর রাতেই ওই ৫ জওয়ানকে ক্যাম্প থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয় বলে সিআরপি সূত্রের খবর। এতদিন ধরমপুর ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক সিআরপি অফিসার। মঙ্গলবার রাত থেকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিককে।
তৃণমূলের লালগড় ব্লক-সভাপতি বনবিহারী রায় বলেন, “বাম জমানায় ধরমপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনটি দখল করে পুলিশ-শিবির করা হয়। সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডেদের নিরাপত্তা দিতেই পরে সেটি সিআরপি ক্যাম্প হয়। ক্যাম্পের পাশেই সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির অফিস। এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছে সিপিএম। আমরা ওই শিবির গোটানোর দাবি করেছি।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিনয় পাণ্ডের বক্তব্য, “তৃণমূলের অভিযোগ হাস্যকর, পাগলের প্রলাপও বটে।” |
|
|
|
|
|