হাসিতে ফেটে পড়ছে দর্শক। মঞ্চে সংলাপ চলছে, “অ্যাই শালা ক্যালিবান, কোথায় লুকিয়ে আছিস?” কোরাস গাইছে, “বেশ বেশ বেশ!” হাততালি দিয়ে গলা মেলাচ্ছে দর্শক।
লন্ডনের খাস গ্লোব থিয়েটারে এমন দৃশ্য বিরলতম বললে কম বলা হয়। গ্লোব যেখানে শেক্সপিয়র নিজে তাঁর নাটক মঞ্চস্থ করতেন। শেক্সপিয়রের ৫০০ বছরের জন্মোৎসব উপলক্ষে টেমস নদীর ধারে সেই গ্লোবেই ৩৭টি ভাষায় তাঁর ৩৭টি নাটক অভিনীত হচ্ছে। সেখানে বাংলা ভাষার প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের নাট্যপরিচালক নাসিরুদ্দিন ইউসুফ। ‘কীর্তনখোলা’ বা ‘বিনোদিনী’র মতো সাড়া জাগানো নাটক বা ‘গেরিলা’র মতো হিট ছবির পরিচালক এ বার বিলিতি মঞ্চে শেক্সপিয়র নিয়ে উপস্থিত। “চল্লিশ বছর ধরে নাটক করছি। ঢাকার বালি রোডে একটা ছোট্ট দল নিয়ে শুরু করে আজ এখানে শেক্সপিয়র অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছি এটা বিরাট প্রাপ্তি আমাদের কাছে।” বললেন নাসিরুদ্দিন। ‘টেমপেস্ট’ নাটকটিকে তিনি বাংলা পাঁচালি আর মণিপুরী শৈলীর মিশ্রণে হাজির করেছেন। “বাংলাদেশ ঝড়জল-বন্যা নিয়েই বাঁচে। ‘টেমপেস্ট’ আমাদের পক্ষে
আদর্শ নাটক।” |
গ্লোব কর্তৃপক্ষ প্রথম যখন যোগাযোগ করেন, ইউসুফ বেশ খানিকটা ইতস্ততই করেছিলেন। ‘‘আমি ওঁদের বলেছিলাম, আমি শেক্সপিয়র সে ভাবে করিনি।” এর আগে ইউসুফ এক বারই ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’ করেছিলেন। কিন্তু প্রযোজনাটি ওঁর নিজেরই মনঃপূত হয়নি। “কিন্তু গ্লোব কর্তৃপক্ষ বললেন, আমি যেন আমার নিজস্ব স্টাইলেই নাটকটা করি। তখন ধ্রুপদী মণিপুরী নৃত্য আর বাদ্যের সঙ্গে একতারা মিশিয়ে একটা অন্য ধরনের শেক্সপিয়র করার কথা আমার মাথায় আসে।” প্রসপেরো, মিরান্দা, ফার্দিনান্দ, ক্যালিবানের মতো চরিত্ররা তখন বাংলাদেশের মাটির গন্ধ গায়ে মেখে নেয়। উপজাতি বিক্ষোভ, জমি দখলের মতো বিষয় এসে যাওয়ায় দর্শকও তার সঙ্গে নিজের স্থান-কালকে মিলিয়ে নিতে পারে, জানালেন ইউসুফ।
গত কাল বাংলা ‘টেমপেস্ট’ দেখতে দর্শকাসনে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা। নাটক শেষে কলাকুশলীদের এক জন মঞ্চে এসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নাড়ছেন তখন। রেহানা বললেন, “বাংলাদেশের জন্য এ এক দারুণ গর্বের মুহূর্ত।” |