|
|
|
|
টাকা আদায়ে ব্লকস্তরে ক্যাম্প করার নির্দেশ প্রশাসনের |
স্বনির্ভর প্রকল্পের ঋণ শোধে আগ্রহ নেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করে তুলতে ‘বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প’ (বিএসকেপি), ‘প্রধানমন্ত্রী কর্মসৃজন প্রকল্প’ (পিএমইজিপি) রয়েছে সরকারের। কিন্তু, এই দুই ক্ষেত্রেই ঋণ-শোধের ব্যাপারে ঋণ-গ্রহীতাদের একটা বড় অংশ তেমন ‘তৎপরতা’ দেখাচ্ছেন না বলে প্রশাসনিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, বিএসকেপি-র ক্ষেত্রে মাত্র ২৮ শতাংশ ঋণ-শোধ হয়েছে। পিএমইজিপি-র ক্ষেত্রে এই হার মোটে ৩১ শতাংশ। ঋণ-শোধের এই ‘হাল’ দেখেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও বেকার যুবক-যুবতীদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।
পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন প্রশাসন ঋণের টাকা আদায়ে এ বার কড়া পদক্ষেপের কথাই ভাবছে। ঋণের টাকা আদায়ে ব্লকস্তরে ক্যাম্প করার কথাও ভাবা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) উত্তম পাত্রের বক্তব্য, “ঋণ-শোধের হার খুব কম। অনেকে এই দুই প্রকল্পে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। ব্যবসা ভালই চলছে। কিন্তু, ঋণ-শোধ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঋণ নিয়েও দীর্ঘ দিন শোধ করেননি, প্রতিটি ব্যাঙ্ক-কে এমন ৫ জনের নামের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। ব্লকস্তরে ক্যাম্প করে ঋণ-গ্রহীতাদের ঋণ-শোধ করার কথা বলা হবে। ইতিমধ্যে মহকুমাশাসক ও বিডিওদের এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানোও হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী কী কী কাজ হল, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সে সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জেলায় পাঠানোর কথাও জানানো হয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরও বক্তব্য, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তৎপরতা বাড়লে ঋণ-শোধের হারও বাড়বে।
বেকার যুবক-যুবতীদের মধ্যে যতজন এই দুই প্রকল্পে ঋণের জন্য আবেদন করেন, তাঁদের মধ্যে অল্প ক’জনই ঋণ পান। বিএসকেপি প্রকল্পে ব্যাক্তিগত ভাবে সর্বাধিক ১০ লক্ষ এবং যৌথ ভাবে সর্বাধিক ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। ঋণের ২০ শতাংশ অনুদান দেয় সরকার। কী ভাবে এই ঋণ মেলে? প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রের কার্ড ও ভোটার কার্ড থাকতে হবে। তিনি কী ধরনের ব্যবসা করতে চান, সে জন্য কত টাকা প্রয়োজন, কোথায় ব্যবসা করবেন--এমন কিছু তথ্য-সহ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে ব্লক বা মহকুমাস্তরে। প্রশাসন আবেদনপত্রটি খতিয়ে দেখার পর সেটি ব্যাঙ্কের কাছে পাঠিয়ে দেবে। ব্যাঙ্ক ফের আবেদনপত্রটি খতিয়ে দেখে যদি যোগ্য বিবেচনা করে তা হলে প্রকল্পটির অনুমোদন দেবে। এর পর সেই অনুমোদনপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে রাজ্যের কাছে। রাজ্য অনুদানের টাকা বরাদ্দ করার পর ফের আবেদনপত্র ব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো হবে। তার পরেই ব্যাঙ্ক আবেদনকারীকে ঋণের টাকা দেবে।
প্রশাসনের বক্তব্য, ঋণ-শোধের হার কম বলেই ঝুঁকি নিয়ে আরও বেশি সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীকে ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না। এই দুই প্রকল্পে ঋণ নেওয়ার সময়ে গ্রহীতারা আশ্বাস দেন, সময়ের মধ্যেই ঋণ শোধ করবেন। কিন্তু, পরে ব্যবসা বাড়লেও ঋণ-গ্রহীতাদের অনেকে ঋণ-শোধ করেন না বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরে পিএমইজিপি প্রকল্পে ঋণের জন্য আবেদন করেছিলেন ১ হাজার ৭০০ জন। ঋণ পেয়েছিলেন ৭৭৭ জন। কিন্তু ঋণ-শোধের ক্ষেত্রে অল্প সংখ্যক গ্রহীতাই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিএসকেপি-র ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ।
এমনিতেই ঋণ চেয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান। কিন্তু যাঁরা পান তাঁরা ঋণ-শোধে তৎপর না-হওয়ায় ব্যাঙ্ক আরও বেশি করেই আবেদনকারীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৭-০৮ বর্ষে বিএসকেপি-র ক্ষেত্রে ১ হাজার ২৭৯টি আবেদন মঞ্জুর করেছিল প্রশাসন। তার মধ্যে ব্যাঙ্ক অনুমোদন করে ১৯৩টি আবেদন। ওই আবেদনের সবগুলির অনুদানের অর্থ ব্যাঙ্ককে দিয়ে দেয় সরকার। ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ পান ১৫২ জন। ’০৮-০৯ বর্ষে ২ হাজার ৮৬৯টি আবেদন মঞ্জুর হয়। ব্যাঙ্ক অনুমোদন করে ৭১২টি আবেদন। ঋণ পান ৩৫৮ জন। ’০৯-১০ বর্ষে প্রশাসন মঞ্জুর করেছে ২ হাজার ৬৭৮টি আবেদন। ব্যাঙ্ক অনুমোদন করে ১ হাজার ১২০টি আবেদন। সরকার ৬০০টি আবেদনের ক্ষেত্রে অনুদান মঞ্জুর করে। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান অবশ্য ৩০৩ জন। দেখা যাচ্ছে, আবেদনকারীদের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে মাত্র ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বেকার যুবক-যুবতী প্রকল্পের সুফল পান। কিন্তু ঋণ-শোধের হার না বাড়লে আবেদন মঞ্জুরের হারও যে বিশেষ বাড়বে না, তা পরিষ্কার। প্রকল্প দু’টিই তা হলে মুখ থুবড়ে পড়বে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে প্রশাসনের। জানা গিয়েছে, ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেটিভ কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, ঋণের অর্থ আদায়ে ব্লকস্তরে ক্যাম্প করা হবে। |
|
|
 |
|
|