বাংলা নতুন বছরের প্রথম পূর্ণিমার রাতে নৌকাবিহার করলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ মদনমোহন। প্রতি বছরই যেমনটা করে থাকেন। এটি বহু পুরনো রীতি। ১৮৯০-এ কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত, তখন থেকেই মদনমোহনের এই নৌকাবিহার উৎসব হয়ে আসছে। প্রাণের ঠাকুর শ্রীশ্রীমদনমোহনের এই নৌকাবিহার উৎসবটি হয় ইতিহাসের শহর কোচবিহারের প্রাণকেন্দ্র সাগরদিঘিতে। সেই সময় সাগরদিঘির পূর্বদিকের ঘাটে থাকেন বাণেশ্বর মন্দিরের চলন্ত মহাদেব, তুফানগঞ্জ নাককাটিগছের ষাণ্ডেশ্বর শিব, কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ি ডাঙ্গর আই মন্দিরের রাধাবিনোদ এবং রাজমাতা মন্দিরের রাধানাথ ও কানাইলাল বিগ্রহ। এঁরা সকলেই মদনমোহনের বন্ধু। নৌকাবিহার দেখতেই তাঁদের আগমন। এটিও অতি প্রাচীন প্রথা। বন্ধুদের উপস্থিতিতে শ্রীশ্রীমদনমোহন নৌকায় আরোহণ করেন। |
এর পূর্বে পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ করেন। সেই সঙ্গে পাঁঠার চামড়া দিয়ে তৈরি ভিস্তির জলে মদনমোহনকে প্রতীকী স্নান করান রাজপ্রতিনিধির মর্যাদাপ্রাপ্ত দুয়ারবক্সী অমিয়কুমার দেব বক্সী। পঞ্চফল জলে নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শ্রীশ্রীমদনমোহনকে শুদ্ধ করানো হয়। এতে মদনমোহনের প্রায়শ্চিত্ত ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানটিকে বলে ‘মোটের জল’ উৎসব। উৎসবটির পিছনে রয়েছে এক কিংবদন্তি। পূর্ণিমার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ মদনচতুর্দশী তিথিতে মদনকাম বা বাঁশপুজো উপলক্ষে মদনমোহন ভাঙের নাড়ু খেয়ে নেশাচ্ছন্ন অবস্থায় খাসির মাংস খেয়ে ফেলেন। বৈষ্ণব মদনমোহনের মাংস ভক্ষণ অপরাধ। উপরিল্লিখিত বন্ধুরা জানতে পেরে প্রায়শ্চিত্তের বিধান দেন। ‘মোটের জল’ উৎসবের মধ্যে দিয়ে শ্রীশ্রীমদনমোহন প্রায়শ্চিত্ত করে শুদ্ধ হন। রাজ আমল থেকে চলে আসা এই উৎসব আজও কৌতূহল উদ্রেক করে চলেছে। মদনমোহনের নৌকাবিহারের ছবি তুলেছেন দেবব্রত চাকী।
|
প্রাচীন কালে উত্তর দিনাজপুর জেলার বাহারাইল বরেন্দ্রভূমির অন্তর্গত ছিল। সেই সময় বরেন্দ্রভূমির অধিবাসীরা বিষ্ণু, গণেশ, সূর্য, শিব ও শক্তির উপাসনা করতেন। বাহারাইলে বর্তমানে পূজিত গণেশ মূর্তিটি সেই সময়ের। ওপার বাংলার পিরগঞ্জ থেকেও বহু মানুষ এসে এই গণেশকে পুজো দিতেন। স্থানীয় লোকদের কাছে ইনি ‘বাবা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
কিংবদন্তি, পঞ্চদশ শতাব্দীতে কালাপাহাড় এই মূর্তিটির হাত, কান, নাক ভেঙে দিয়ে এর পুজো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে যান। সকলে মিলে যুক্তি করে মূর্তিটি পুকুরের জলে ফেলে দেন। তখন তাঁদের মধ্যে অনেকে ‘বাবা হারাইল’, ‘বাবা হারাইল’ বলে হাহাকার করতেন। সম্ভবত সে কারণে গ্রামটি বাহারাইল বলে পরিচিত হয়। |
এর বহু পরে ডালিমগাঁয়ের এক মাড়োয়ারি ভদ্রলোক স্বপ্নাদেশ পান। তিনি ওই গণেশ মূর্তিটি হাতিডোবা পুকুর থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা পান। স্থানীয় লোকজন কিছুতেই মূর্তিটি নিয়ে যেতে দেবেন না। অনেক বাক্বিতণ্ডার পরে ঠিক হয় মূর্তিটিকে বাহারাইল দুর্গামন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই মতো কাজ হয়। স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা, গণেশ সকল কার্যের সিদ্ধিদাতা। তাঁকে মনেপ্রাণে ডাকলে মনোবাসনা পূর্ণ হবে। তাই গ্রামবাসীদের উদ্যোগে প্রতি বছর দুর্গোৎসব ও মাঘ মাসের বরদা চতুর্থীতে এই গণেশের পুজো মহা ধুমধামের সঙ্গে করা হয়।
|
বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া নববর্ষের সকালে জলপাইগুড়িবাসী উপহার পেলেন এক অভিনব বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সৌজন্যে ‘রবীন্দ্রবীথি’র সদস্যরা। শহরের প্রান্তে জুবিলি পার্কের পঞ্চবটি ধামে স্তোত্র পাঠে স্বাগত সকাল। তার পর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি নৌকা ভেসে পড়ল তিস্তার বুকে। সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে। কেউ কাব্যকথায় নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন, কেউ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ফেলে আসা নববর্ষের অভিজ্ঞতা বিনিময় করলেন। সমবেত নৃত্য ও নানাবিধ গানের মূর্চ্ছণা ছড়িয়ে পড়ল আকাশে-বাতাসে, তীরে অপেক্ষমান উৎসুক জনতার কাছে। চেনা ব্যস্ততার পথে ফিরে যাওয়ার আগে তিস্তাচরবাসীদের জানিয়ে গেলেন শুভেচ্ছা বার্তা, শহরের প্রান্তিক মানুষদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্যই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন। আড্ডার হাত ধরে সংস্কৃতি-সাহিত্য চর্চার যুগ শেষ নয়। ‘দধীচি’ ও ‘প্রত্যুষ’ পত্রিকার যৌথ আয়োজনে নববর্ষ উদ্যাপন আরও এক বার সে কথা প্রমাণ করল।
|
এ যেন চাঁদের হাট। বালুরঘাট মন্মথ নাট্যচর্চা কেন্দ্রে নববর্ষের প্রথম আলো গায়ে মাখল কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, নাট্যকার, বাচিকশিল্পী, এমনকী শুধু আড্ডার টানেই আসা মানুষজন। ছোট্টবেলার নববর্ষ, হালখাতা, দোকানে দোকানে ঘোরা, তুলসিতলায় ঘট, আমপাতার শেকল আড্ডায় উঠে এল নস্টালজিয়ার চিরকালীন ঘ্রাণ। হাস্যরসের অমোঘ উপস্থিতিতে নতুন বছরের সকালটা হয়ে উঠল আলোময়। ফাঁকে ফাঁকে ছিল কবিতা, গান, নাচ। ব্যস্ত সময় আমাদের যান্ত্রিক করে দিক না কেন আড্ডা এবং বাঙালির অবিচ্ছেদ্যতা যে কখনওই হারাবার নয়, বৈঠকী আড্ডায় ফিরে ফিরে আসবে নস্টালজিয়া, সে কথাই ধ্বনিত হল বারবার।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে
পুরো নাম ও ঠিকানা দেবেন।
উত্তরের কড়চা
এবিপি প্রাঃ লিমিটেড ১৩৬/৮৯
চার্চ রোড শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|