|
|
|
|
পরিহাসের জবাব চান কামরুন |
৬ বছর পর নিখরচায় পড়ার অনুমতি |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
ছ’বছর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন মেধাবী মেয়েটি। পরিবারের দারিদ্রের কথা জানিয়ে কারিগরি শিক্ষা দফতরের কাছে নিখরচায় পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। সেই অনুমতি এল ছ’বছর বাদে, এই ২০১২-র মার্চে! ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন ইতিমধ্যেই ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। পরিবারকে বাঁচাতে এখন যা হোক একটা চাকরির জন্যই প্রাণপণ লড়াই চালাচ্ছেন কেশপুরের কামরুন নেহা।
সেই ২০০৬-এ জলপাইগুড়ি গভনর্র্মেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। তখনই সরকারের কাছে নিখরচায় পড়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ছ’বছর বাদে সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা দফতরের ডিরেক্টরের কাছ থেকে সেই অনুমতিপত্র পেয়ে যারপরনাই ক্ষুব্ধ বছর সাতাশের মেয়েটি। কামরুনের কথায়, “এ তো পরিহাস! যখন পড়ার স্বপ্ন ছিল, তখন সরকার সাহায্যের হাত বাড়াল না। পরিবারকে বাঁচাতে এখন আমার চাকরির দরকার। পড়ার আর সুযোগ নেই। তখনই কি না এল অনুমতি! গরিবদেরই কি এমন হয়?” কামরুনের প্রশ্ন, “কারিগরি শিক্ষা দফতর, শিক্ষামন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী--সকলের কাছেই আবেদন করেছিলাম। তাঁরা তো বোঝেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুযোগ পাওয়া কতটা কঠিন। সুযোগ পেয়েও পড়তে পারলাম না সরকারি উদাসীনতায়। ছ’বছর আগে অনুমতি মিললে জীবনটা অন্য রকমও হতে পারত।” |
 |
কামরুন নেহা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
কেশপুরের মুগবসান গ্রামের কামরুন বরাবরই মেধাবী ছাত্রী হিসাবে পরিচিত। মাধ্যমিকে ৭৫.৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। উচ্চ-মাধ্যমিকে পড়াশোনা বিজ্ঞান বিভাগে। পলিটেকনিকের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও কৃতকার্য হয়েছিলেন। কলকাতার উমেন্স পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটর সায়েন্স বিভাগে ২০০৬ সালে পাশ করেছিলেন ৮০.৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে। ওই বছরই ‘জিলেট’ (JELET) প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৯১ তম স্থান পান। চোখে তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবারের দারিদ্র। বাবা শেখ আলাউদ্দিনের ছোট একটি জুতোর দোকান রয়েছে মুগবসান বাজারে। তিন মেয়ে আর দুই ছেলেকে দু’বেলা মু’মুঠো জোগানোই প্রায় দুঃসাধ্য। কামরুনকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ দেবেন কী ভাবে! ভর্তি হতেই সে সময়ে লাগত ৮ হাজার ২৭৫ টাকা। টাকা জোগাড় হয়নি। ফলে ভর্তিও আর হওয়া হয়নি কামরুনের। শেষ চেষ্টা হিসাবে সরকারি-স্তরে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছিলেন। তা-ও মেলেনি।
অনুমতি যখন এল তখন কামরুনের বয়স ২৭। চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে বেরোনোর সময়ে বয়স ৩১ হয়ে যাবে। তখন আবার চাকরি মিলবে কি না, সন্দেহ। কামরুনের কথায়, “নিখরচায় পড়ার যে অনুমতি এত দিন পর এল, তাতে কলেজে শুধু খরচ লাগবে না। কিন্তু থাকা-খাওয়ারও তো খরচ আছে। তা কে দেবে? আর এখন, এই বয়সে পড়তে গেলে সংসার চলবে কী করে?” ভাই-বোনেদের পড়ানো নিয়েও এখন সংশয়। জীবন-যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য, ভাই-বোনেদের পড়ানোর জন্য একটা চাকরি এখন খুব দরকার কামরুনের। |
|
|
 |
|
|