কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে খুনের চেষ্টা চোপড়ায়
প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এক কিশোরীকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে শনিবার দুপুরে তাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানারা কালাগছে। অভিযোগ, ওই কিশোরীকে খুনের চেষ্টাও হয়। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মানসিকভাবেও ছাত্রীটি ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত এলাকার প্রভাবশালী নেতা কংগ্রেসের মাঝদিয়া অঞ্চল সভাপতি নাসিরুদ্দিন হকের পুত্র-সহ ৮ জন। তাদের বেশিরভাগই ওই কংগ্রেস নেতার পুত্রের সহপাঠী ও বন্ধু। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে চোপড়ায় দলমত নির্বিশেষে ছাত্রছাত্রী, তরুণ-তরুণীরা রবিবার মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেছেন। নাসিরুদ্দিন হক অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর ছেলেকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাতেই তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে স্থানীয় একটি স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। নাসিরুদ্দিন হকের পুত্রও একই স্কুলের একই শ্রেণির ছাত্র। ওই কংগ্রেস নেতার স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে ধরতে পুলিশ গেলে তিনি প্রতিরোধ করায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। ইসলামপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুবিমল পাল বলেন, “ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তল্লাশিতে গেলে বাধা দেওয়ায় এক অভিযুক্তের মা’কেও গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দু’টি বাইক। দ্রুত সমস্ত অভিযুক্তকে ধরা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।” তবে একটি মোটরবাইক ও ওই গাড়িটির মালিক কে, তা পুলিশ এখনও জানতে পারেনি। অন্য মোটরবাইকটি নাসিরুদ্দিন হকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহ বলেছেন, “উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। আমি নিজেও খোঁজ খবর নিচ্ছি। দোষীরা কেউই পার পাবে না।”
ওই ছাত্রীর দাদা মেহেবুব আলমের অভিযোগ, “বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল মূল অভিযুক্ত। তাঁর বাবা এলাকার কংগ্রেস নেতা। বোন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই ছাত্র ওকে উত্ত্যক্ত করত। সে জন্য আমরা চেয়েছিলাম, বোনকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাব। তার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেল।” মেহেবুব জানান, ওই কংগ্রেস নেতার এক ভাই আমার অন্য এক ভাগ্নিকেও জোর করে বিয়ে করেছিল। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবার থেকে সেই বিয়েতে বাধা দেওয়ায় তাদের উপরেও রোষ রয়েছে ওই কংগ্রেস নেতার পরিবারের। ফোন করে আমাদেরও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।”
রবিবার দুপুরেও হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আতঙ্কে কেঁপে উঠছিল ওই কিশোরী। সে জানায়, ওই দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ রোজকার মতোই বাড়ি থেকে সাইকেলে করে বেরিয়েছিল। কালাগছে সাইকেল রেখে ভ্যানরিকশায় চেপে স্কুলে যাওয়ার সময় হঠাৎই একটি গাড়ি এসে সামনে দাঁড়ায়। ছিল দু’টি মোটরসাইকেলও। ওই কিশোরী জানায়, তাকে জোর করে ভ্যান রিকশা থেকে ওই গাড়িটিতে তোলা হয়। সেই সময়ে ভ্যানরিকশার অন্য যাত্রীরা ভয়ে বাধা দিতে পারেননি। তারপরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ১০ কিলোমিটার দূরের একটি চা বাগানে। তার অভিযোগ, “গাড়িতে তুলেই আমার চোখ মুখ বেঁধে দেয় ওরা। হাত দু’টো শরীর পিছনের দিকে বেঁধে দেয়। শুরু হয় বেধড়ক মার। হাতে আংটার মতো কিছু ছিল। তা দিয়ে পিঠে, পেটে, মুখে সারা শরীরে বেপরোয়া মারতে থাকলে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকি। আমাকে, আমার দিদিকে এবং ভাগ্নেকে একে একে মেরে ফেলবে বলে ওরা হুমকি দেয়।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরীকে চা বাগান লাগোয়া নির্জন জায়গায় একটি বড় নালার ধারে নিয়ে গিয়ে চোখ খুলে মারধর করা হয়। বিবস্ত্র করে গণধর্ষণের পর তাকে মাটিতে ফেলে এক দুষ্কৃতী তার গলার উপর দাঁড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। শ্বাসরোধ হতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। তখন সে মারা গিয়েছে ভেবে বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে নালার ধারেই ফেলে রেখে পালায় দুষ্কৃতীরা। জ্ঞান ফিরলে ছাত্রীটি উঠে চা বাগান ঘিরে রাখার নাইলনের জাল গায়ে জড়িয়ে ছুটতে থাকে। সেই সময়ে মহিলা চা শ্রমিকরা তাকে নিয়ে জামাকাপড় পরিয়ে বাড়িতে খবর দেয়। ছাত্রীটি জানিয়েছে, লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে পুলিশকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করে। পরে প্রধান শিক্ষিকা হাসপাতালে গেলে তাঁকে সব খুলে বলে ছাত্রীটি। এরপরেই তাকে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়।
নাসিরুদ্দিনের অবশ্য দাবি, “আমায় তৃণমূলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহুবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি তাতে রাজি না-হওয়ায় এ ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” চোপড়া ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি অশোক রায় অবশ্য বলেন, “খুবই নিন্দাজনক ঘটনা। দলের কোনও নেতার ছেলে এমন ঘটনায় জড়িত হলে তারও শাস্তি দাবি করব।” সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস থেকে বার হয়ে গিয়ে যারা সদ্য তৃণমূলে ঢুকেছে তারা আমাদের দলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে।” তৃণমূলের চোপড়া ব্লকের অন্যতম নেতা তাবিবুর রহমানের বক্তব্য, এই ঘটনায় পার্টির রং দেখে লাভ নেই। দোষী যেই হোক, শাস্তি পেতে হবে।”
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দও বলেন, “অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে জেলা পুলিশ কর্তাদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি।” তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ বলেন, “ধর্ষণের মতো নারকীয় অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে কোনও রং বিচার না করে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানাব।” জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পালের দাবি, অবিলম্বে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে বামফ্রন্ট জোরদার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। ওই ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা সাহা জানান, আজ, সোমবারই স্কুলে ছাত্রী এবং অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, “এলাকায় এর আগে এরকম ঘটনা কখনও ঘটেনি। সোমবার স্কুল খুললেই ছাত্রীদের বিষয়টি জানাব। অভিভাবকদেরও বিষয়টি জানানো দরকার। প্রয়োজনে ওই ছাত্রীর অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে পথে নামব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.