‘স্টেইন গান’ সামলাতে নাইটদের বাজি সেই ঘূর্ণি পিচ
টিম হোটেলের কফিশপের টেবিলে রাত পৌনে ন’টায় দুই মূর্তি। আলুভাজায় কামড় দিতে দিতে গৌতম গম্ভীর এবং এই মুহূর্তে নাইট অধিনায়কের ‘ঘনিষ্ঠতম’ দোসর বিজয় দাহিয়া। নাইটদের ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’। আলোচনার বিষয়বস্তু আন্দাজ করা খুব কঠিন নয়। ইডেন থেকে আরও দু’পয়েন্ট ঘরে তোলার নীল-নকশা। টিম মালিক ভুবনেশ্বর থেকে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন বাইপাসের ধারের হোটেলে। কটকে জেতার পর সে ভাবে উৎসব হয়নি। আজ ইডেনে জিতলে রাতে হওয়ার কথা।
এই যদি নাইটদের সুখের সংসারের বহিরঙ্গ হয়, অন্তরঙ্গ ছবিটা খুব স্বস্তিদায়ক নয়। আড়ালে-আবডালে বলা শুরু হয়ে গিয়েছে, প্রথম এগারোয় ঢোকার জন্য পারফরম্যান্সই কি শেষ কথা হচ্ছে? মনবিন্দর বিসলা বা রজত ভাটিয়া কী ভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে যাচ্ছেন আর বাইরে বসে থাকছেন ফর্মে থাকা লক্ষ্মী বা ইকবাল আবদুল্লা, সেই প্রশ্ন শিবিরে ইতিউতি উড়ছে। নতুন দুর্ভোগ বলতে লক্ষ্মীপতি বালাজি। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট লেগেছে কটকে। রাতের খবর, আগামী ছ’দিন মাঠের বাইরে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। তীব্র ক্ষোভ ঘনীভূত ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে নিয়েও। ডেকানের বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচে তাঁর বসার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে চার বিদেশি সাকিব, কালিস, ব্রেট লি এবং সুনীল নারিন। বসবেন দুশখাতে, মর্গ্যান, ম্যাকালাম। ইউসুফ পাঠানের টানা সাত ম্যাচে রান নেই তবু ম্যানেজমেন্টের সহানুভূতি তাঁর দিকে। সিইও বেঙ্কি মাইসোর যেমন বললেন, “ইউসুফ টিমে থাকা মানে যে কোনও বিপক্ষ চাপে থাকে। ওর ফর্মে ফিরতে স্রেফ দশটা বল লাগবে।”
বান্ধবী শ্যামনের সঙ্গে জাক কালিস। সোমবার দমদম বিমানবন্দরে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
কবে যে সেই দশটা বল আসবে কেউ জানে না। অদ্ভুত ভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে লক্ষ্মীকে। ফিট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কটকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ইডেনে টানা চার দিন প্র্যাক্টিসের পরেও লক্ষ্মী জানেন না, আজ ইডেনে প্রথম এগারোয় তাঁর জায়গা আছে কি না। সে রকম কোনও ইঙ্গিতও নেই। বরং এটাই ঠিক হয়ে আছে চোট পাওয়া বালাজির জায়গায় খেলবেন বাঁ হাতি পেসার জয়দেব উনাদকট। যাঁকে কিংস ইলেভেন ম্যাচে ইডেনে খেলিয়ে কোনও লাভ হয়নি। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টিম আপাতত স্বস্তির নিরাপদ আশ্রয়ে। হয়তো আজও ইডেনে দু’পয়েন্ট আসবে। কিন্তু প্রথম এগারো নিয়ে নাইটদের চিরকালীন টালবাহানা আইপিএল ফাইভেও চলেছে। এই ‘ট্র্যাডিশন’-এ কোনও পরিবর্তন নেই।
ইডেনের উইকেট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত হল, এটা টি-টোয়েন্টির উইকেট নয়। স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের কলামে লিখেছেনও সেটা। দোষ পড়ছে কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের উপর। কেন বল যাচ্ছে না, কেন ১৩০-১৪০-এর বেশি উঠছে না, ইত্যাদি। আসল গল্পটা একেবারে অন্য রকম। যেখানে গম্ভীর যা চাইছেন তা-ই দেওয়া হচ্ছে। যেমন দাবি, তেমন উইকেট। স্লো উইকেট হলে নাকি নাইটরা ঘরের মাঠের সুবিধা পাবে। স্পিনার দিয়ে কাজ হাসিল হবে। তা হলে ইডেনে অন্তত ব্রেট লি-কে খেলানোর কোনও মানে হয় না। অনেক ভাল বাজি হতে পারতেন বাইরে থাকা ইকবাল আবদুল্লা। ক্রিকেটীয় স্ট্র্যাটেজির দিক দিয়ে হয়তো স্লো উইকেটের ভাবনা ঠিক। ‘স্টেইন’গানকে সামলাতে ঘূর্ণিই ভাল। সবুজ উইকেটে স্টেইনকে খেলা নিয়ে কে আর বিনিয়োগ করবে?
অগত্যা ডেকান-বধের মঞ্চটা হল, আগে সঙ্গকারার টিমকে ব্যাট করতে পাঠাও। ১২৫-১৩০ এর মধ্যে আটকে রাখো। তারপর কালিস-গম্ভীরকে দিয়ে ওপেন করিয়ে রানটা ১৮ বা ১৯ নম্বর ওভারে তুলে ফেলো। এই অঙ্ক মাথায় রেখেই আজ ইডেনে নামবে নাইটরা। প্রতিপক্ষ টানা পাঁচটা ম্যাচ হেরেছে। এমনিতেই টিমের মনোভাব তলানিতে। ধরে নেওয়া হচ্ছে, আরও ১১টা ম্যাচ বাকি থাকলেও এই ডেকানের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মেরুদণ্ড আর সোজা হবে না। অবশ্যই অন্য রকম ভাবছেন কুমার সঙ্গকারা। এখনও ডেকান অধিনায়কের মূলমন্ত্র, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’। সন্ধেয় টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে বললেন, “এই ফর্ম্যাটের মজাটাই হল একবার হারতে শুরু করলে আপনি হারতে পারেন টানা কয়েকটা ম্যাচ। কিন্তু মাত্র তিন ঘণ্টায় যখন-তখন বদলে দিতে পারেন অঙ্ক। ইডেনে একটা ম্যাচ জিতলেই আমাদের টিম ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেটা যে কালই হবে না, কী করে বুঝছেন?” জানাচ্ছেন, পাঁচটা ম্যাচে হারলেও অন্তত তিনটে ম্যাচে জেতার মতো অবস্থায় ছিল ডেকান। স্রেফ ভাল ফিনিশারের অভাবে মাচ বেরোয়নি।
ইডেনে বেরোবে বলেও কোনও গ্যারান্টি নেই। হেরো টিমকে কে আর মনে রাখে? জমা তো হয় বাতিলের খাতায়। ‘উল্টে দেখুন পাল্টে গেছে’ এক্ষেত্রেও হওয়ার সম্ভাবনা কম।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.