লক্ষ্য বিশ্বব্যাঙ্কের অনুদান
ভাল পঞ্চায়েতের কাজ দেখছে ‘পিছিয়ে থাকা’রা
‘উন্নত’ পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে কী ভাবে কাজ হচ্ছে তা স্বচক্ষে দেখছেন ‘পিছিয়ে থাকা’ পঞ্চায়েতগুলির কর্তারা। গত সপ্তাহ থেকে বর্ধমান জেলায় চালু হয়েছে এই কর্মসূচি। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) তথা বর্ধমান জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক শিশির ঘোষ জানিয়েছেন, “প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পারস্পরিক আদানপ্রদান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের বিশেষ উদ্দেশ্যে আমাদের জেলার কয়েকটি পঞ্চায়েতকে শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রস্তাব অনুসারে এ রাজ্যের ৯টি জেলায় আইএসজিসি (ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেংদেনিং অফ গ্রাম পঞ্চায়েত) প্রকল্প চালু হয়েছে। ২০১০-এর ডিসেম্বর থেকে বর্ধমান জেলায় ওই প্রকল্প চলছে। এই জেলার ২৭৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৫টি ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পের এক আধিকারিক বলেন, “ফি-বছর ঠিক সময়ে পরিকল্পনা জমা দিলে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আর্থিক হিসেব দেখালে বিশ্বব্যাঙ্ক জনসংখ্যা অনুযায়ী অনুদান দেয় পঞ্চায়েতগুলিকে।”
শিক্ষামূলক ভ্রমণে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। কাটোয়ার খাজুরডিহিতে
তোলা ছবি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই প্রকল্পে জেলার কো-অর্ডিনেটর দেবযানী দাশগুপ্ত জানান, এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত পঞ্চায়েতগুলি ঠিক নিয়ম মানেনি বলে অনুদান পায়নি। তিনি বলেন, “যে সব পঞ্চায়েত বেশ পিছিয়ে রয়েছে, তারা যাতে ভবিষ্যতে ‘স্ব-শক্তি’ হতে পারে, সে জন্য শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কর্মসূচি পাঁচ বছর চলবে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছর জানুয়ারির মধ্যে আগামী আর্থিক বছরের পরিকল্পনা ও বাজেট ঠিক করে ফেলতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে আর্থিক বছরের (তৃতীয় ত্রৈমাসিক) ৬০ শতাংশ টাকা খরচ করতে হবে। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পঞ্চায়েতের আর্থিক হিসেবে ইন্টারনেটে ‘আপলোড’ করতে হবে। অডিটেও পঞ্চায়েত নিয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য থাকা চলবে না। দেবযানীদেবী বলেন, “সমস্ত নিয়ম ঠিক ভাবে রূপায়িত হলে বিশ্বব্যাঙ্ক অনুদান দেয়।”
জেলায় গলসি-১ ব্লকের উচ্চগ্রাম, কাটোয়া-১ ব্লকের খাজুরডিহি, সালানপুর ব্লকের রূপনারায়ণপুর, পূর্বস্থলী-১ ব্লকের কালেখাঁতলা-১ পঞ্চায়েত পরিকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে আর্থিক অনুদান পেয়েছে। ওই সব পঞ্চায়েতের উন্নয়ন দেখার জন্য জেলায় ‘পিছিয়ে পড়া’ পঞ্চায়েতগুলির শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছিল জেলা প্রশাসন। গত বুধবার রানিগঞ্জের রতিবাটি ও তিরাট পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা যান উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েতে। সে দিনই খাজুরডিহিতে গিয়েছিল পূর্বস্থলী-১ ব্লকের মেড়তলা ও ভাতার পঞ্চায়েত। বৃহস্পতিবার রূপনারায়ণপুরে যান পাণ্ডবশ্বেরের বৈদ্যনাথপুর ও নবগ্রামের পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। কালেখাঁতলা-১ পঞ্চায়েতের উন্নয়ন দেখে যান নিরোল ও কেতুগ্রামের লোকজন। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, অনেক পঞ্চায়েত ১০০ দিনের কাজ ভাল করছে, অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন খাতে যে টাকা আসছে তার খরচ নিয়ে পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে ‘সমস্যা’ দেখা দেয়। এ রকম ভ্রমণের ফলে ওই সব সমস্যা কেটে যাবে বলে জেলা পরিষদ কর্তাদের ধারণা।
কাটোয়া-১ ব্লকের খাজুরডিহি পঞ্চায়েত ওই কর্মসূচি থেকে দু’দফায় প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা পেয়েছে। এই পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের গীতা দেবনাথ বলেন, “ওই টাকা দিয়ে আমরা পঞ্চায়েতের পরিকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন করেছি।” তিনি জানান, রাস্তা, নর্দমা তৈরির পাশাপাশি ১০টি সৌরবিদ্যুৎ চালিত ময়লা ফেলার গাড়ি কেনা হয়েছে। পঞ্চায়েতের নির্বাহী আধিকারিক তরুণ ভট্টাচার্য জানান, অনুদানের টাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর তৈরি করা হয়েছে। বুধবার খাজুরাডিহির ‘উন্নয়ন’ দেখার পরে ভাতারের পঞ্চায়েত প্রধান ঝর্না কোঁয়ার বলেন, “আমরা ওই কর্মসূচির আওতায় থাকলেও অনুদান পাইনি। এখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিয়ে গেলাম।” মেড়তলার সিপিএম প্রধান বাসনা সরকার ও বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রাজকুমার মুখোপাধ্যায়েরা এক সঙ্গে উন্নয়নের কাজ দেখতে এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, “সঠিক পরিকল্পনা করে কী ভাবে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা দেখতে এলাম।” তেমনই কালেখাঁতলা-১ পঞ্চায়েতের ‘উন্নয়ন’ দেখে কেতুগ্রামের প্রধান তৈবুর রহমান বলেন, “আগামী আর্থিক বছরে আমরাও যাতে অনুদান পাই, তার জন্য চেষ্টা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.