বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দিচ্ছিলেন দেওর-জা। সেই রাগে দেওরের চার বছরের ছেলেকে শ্বাসরোধ করে মারার অভিযোগে এক মহিলাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
শনিবার দুপুরে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে উত্তর রামপুর গ্রামে একটি পুকুরপাড়ে লালু মহালদার নামে ওই শিশুর দেহ মেলে। এর পরেই ক্ষিপ্ত জনতা তার জেঠিমা টুবো মহালদারকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে মারধর করেন। গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও হয়। তবে গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “শিশুর জেঠিমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে বাধা পেয়েই এই খুন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, টুবোর স্বামী কৃষ্ণ মহালদার রাজস্থানের জয়পুরে শ্রমিকের কাজ করেন। বেশির ভাগ সময়েই তিনি গ্রামে থাকেন না। সেই সুযোগে গ্রামেরই মনোজ মহালদারের সঙ্গে টুবোর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সংসার পৃথক হলেও একই বাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন কৃষ্ণর ভাই রাধু ও তাঁর স্ত্রী সাগরী। রাধুবাবু কখনও মাছ ধরে, কখনও দিনমজুরি করে সংসার চালান। |
মনোজের সঙ্গে টুবোর সম্পর্ক তাঁরা মানতে না পারায় মাঝে-মধ্যেই অশান্তি হত। টুবো ও মনোজ মহালদারের নামে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রাধু। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশ মনোজকে ধরতে পারেনি।
রাধু জানান, দুপুরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই চাষের কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের ছ’বছরের মেয়ে লক্ষ্মী গিয়েছিল স্কুলে। সাগরী বলেন, “দুপুরে মাঠে যাওয়ার সময় লালু আমার পিছু নিয়েছিল। আমিই ওকে বারণ করি, যেন রোদে বার না-হয়।” ঘণ্টা দেড়-দুয়েক বাদে ফিরে এসে তাঁরা দেখেন, ছেলে বাড়িতে নেই। খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে গ্রামেরই একটি পুকুর পাড়ে তার দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর কিছু ক্ষণ আগেই টুবোকে পুকুরের দিক থেকে বড় বস্তা হাতে ফিরতে দেখেছিলেন বলে কয়েক জন গ্রামবাসী পুলিশকে জানিয়েছেন।
রাধুর দাবি, “শুক্রবার রাতে বৌদির ঘরে মনোজকে ঢুকতে দেখে আমি জানালায় উঁকি মারি। শুনি, কাউকে খুন করার ব্যাপারে কথা হচ্ছে। তখন বুঝিনি, আমার ছেলেকেই খুনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।” ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই জয়পুর থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন কৃষ্ণ। শুক্রবার রাতে তিনি ঘরেই ছিলেন। কিন্তু তাঁর দাবি, “আমি এ সবের কিছুই জানি না। ক্লান্ত থাকায় আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।” তাঁর কথায়, “আর কারও সম্পর্কের কথা টুবো কখনই স্বীকার করত না। ও যে ভাইপোকে খুন করতে পারে, এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।” মনোজের বাবা দুঃখু মহালদারও দাবি করেন, “আমার ছেলের নামে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
তৃণমূলের স্থানীয় কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রেজাউল হক বলেন, “ভাবতেই পারছি না যে কোনও জেঠিমা এমন করতে পারে।”
তৃণমূলের কুশিদা অঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রকাশ দাসেরও একই কথা। পুত্রহারা সাগরী সুধু বারবার বলে চলেছেন, “রোদের কথা না ভেবে যদি সঙ্গে নিয়ে যেতাম, ছেলেটাকে হারাতে হত না।” |