কাকভোরে ট্র্যাফিক পুলিশবিহীন ‘অরক্ষিত’ রাজপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল দু’জনের। ফের বেআব্রু হয়ে গেল ‘ট্র্যাফিক আওয়ার্সের’ বাইরে পুলিশবিহীন শহরের রাস্তার বিপজ্জনক চেহারাটা।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সকাল ছ’টার একটু আগে উত্তর কলকাতার গৌরীবাড়িতে অরবিন্দ সরণি এবং রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের সংযোগস্থলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। অরবিন্দ সরণি ধরে উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজারের দিকে যাচ্ছিল অটোরিকশাটি। আর শ্যামবাজারের দিক থেকে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট ধরে মানিকতলার দিকে যাচ্ছিল একটি তেলের ট্যাঙ্কার। গৌরীবাড়ির কাছে ট্যাঙ্কারটি অটোর ডান দিকে ধাক্কা মারলে অটোর চালক ও তাঁর পাশে বসা এক যাত্রী রাস্তায় ছিটকে পড়েন। ট্যাঙ্কারটির পিছনের চাকা তাঁদের দু’জনকে পিষে দেয়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দু’জনকেই ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে দুপুর পর্যন্ত উল্টোডাঙা-শোভাবাজার রুটে অটো চলাচল বন্ধ ছিল।
মাসদু’য়েক আগে ভোররাতে রবীন্দ্র সরণি ও মহাত্মা গাঁধী রোডের সংযোগস্থলে একটি দুর্ঘটনায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছিল ছয় আরোহীর। সেক্ষেত্রেও রাস্তায় পুলিশ ছিল না। এমনকী, নজরদারির জন্য লাগানো সিসিটিভি কাজ না করায় পুলিশ জানতে পারেনি দুর্ঘটনার কারণ। এ দিনও, রাস্তায় পুলিশ না থাকায় কেন ধাক্কা লাগল তা ঠিকঠাক বলতে পারছে না পুলিশ। ওই মোড়ে সিসিটিভি না থাকায় ফুটেজ থেকে দোষীদের চিহ্নিত করার উপায়ও নেই। লালবাজারের এক ট্র্যাফিক কর্তার বক্তব্য, “অটো না ট্যাঙ্কার কার দোষ বেশি, বলা শক্ত। তবে খুব জোরে গাড়ি না-চালালে এবং সিগন্যাল না-ভাঙলে দুর্ঘটনা ঘটত না।” পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত অটো চালকের নাম গঙ্গানাথ ঝা (২৭)। মৃত যাত্রীর পরিচয় জানা যায়নি। ট্যাঙ্কারের চালক নারায়ণ ঝা গ্রেফতার হয়েছেন। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই খন্না সিনেমার পাশে মৃত অটো চালকের বাড়ি। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃতের ভাই দেবসুন্দর ঝা বলেন, “আমি বা দাদা পালা করে অটোটা চালাই। সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গিয়ে দেখি রাস্তায় পড়ে দাদার এক পাটি চটি। দাদার মোবাইলে ফোন করি। পুলিশ ফোন ধরে।” ভোর ছ’টা থেকে রাত ১০টা শহরে ‘ট্র্যাফিক আওয়ার্স’। সেই সময়টুকুই শহরের রাস্তায় থাকে পুলিশি প্রহরা। অথচ রাত দশটার পরই পণ্যবাহী, লরি-ট্রাক বা ট্যাঙ্কার কলকাতায় ঢোকার সময়। রাতভর পুলিশবিহীন রাস্তায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালু থাকলেও এই সময় রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের দরুণ প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তা পার হওয়াটাই দস্তুর। ‘ট্র্যাফিক আওয়ার্স’-এর পরে শহরে পরপর দুর্ঘটনা ঘটে চললেও কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “রাতে ট্র্যাফিক পুলিশ রাখতে গেলে আরও কর্মী থাকা দরকার। এখনই রাতে পুলিশ রাখার পরিকল্পনাও নেই।” এই পরিস্থিতিতে রাতে দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের ‘সচেতনতা’র উপরেই ভরসা রাখছেন পুলিশকর্তারা। |