কৃপাসিন্ধু-খুনে অভিযুক্তেরা অধরা
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই ‘বনধ’ তৃণমূলের
তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহা খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তেরা এখনও অধরা। তাঁকে গ্রেফতার ও ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে নিহত নেতারা অনুগামীরা বন্ধ পালন করলেন কেতুগ্রামের কান্দরায়।
বন্ধকে কেন্দ্র করে কেতুগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এ দিন ফের প্রকাশ্যে এসেছে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের বক্তব্য, “ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে বলেছি আমরা। পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা করছে। এখন কেউ কেউ আন্দোলনকারীদের উস্কানি দিয়ে বিপথগামী করছে।” আবার এ দিনই কেতুগ্রামে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত তথা দলের ব্লক সভাপতি রত্নাকর সাহা আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “কৃপাসিন্ধুর খুনিদের ধরানোর নামে কেউ কেউ রাজনীতি করলেন। এখন কেষ্টদা (অনুব্রত) বিষয়টি দেখছেন। এ বার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে যাবে। অভিযুক্তেরা ধরা পড়বে।”
বেঞ্চ পেতে অবরোধ।
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর কেতুগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কৃপাসিন্ধু সাহার গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে স্থানীয় মালগ্রামের কাছে সেচখালের পাশে। খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারাশঙ্কর পণ্ডিত কেতুগ্রাম থানায় তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি হারা শেখ, দলের কর্মী আশাদুল্লা শেখ ও চাঁদ শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত তিন জনকে ধরার দাবিতে নিহত নেতার অনুগামীরা বারবার আন্দোলন করেছেন। রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী-সহ প্রশাসনের নানা স্তরে চিঠিও দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ চাঁদ শেখ ও খুনের চক্রান্তকারী সন্দেহে আমগোড়িয়ার বাসিন্দা ইসলাম শেখকে গ্রেফতার করে।
১২ মার্চ কৃপাসিন্ধু সাহার অনুগামীরা ফের আন্দোলনে নামেন। ওই দিন ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ঘটনার সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়। ঘটনার সাড়ে তিন মাস পরেও মূল অভিযুক্তেরা ধরা না পড়ায় শুক্রবার কান্দরায় বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন নিহত নেতার অনুগামীরা। কাটোয়া-বোলপুর রাস্তায় বেঞ্চ পেতে অবরোধ করা হয়। এ ছাড়াও দোকানপাট, স্কুল, নানা অফিসও বন্ধ করে দেন বন্ধ সমর্থকেরা। দিনভর বন্ধ পালন হলেও তা তুলতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেতুগ্রাম থানার পুলিশ।
বন্ধ বাজার-দোকান।
এ দিন বন্ধে কোনও দলীয় পতাকা না থাকলেও ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় কিছু কংগ্রেস কর্মীকেও আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা যায়। এ দিনের বন্ধে অবশ্য বিরক্ত এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন ব্যবসায়ী বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য কান্দরা ও আশপাশের এলাকা অশান্তিতে ভুগছে। এমনিতেই ব্যবসার হাল বিশেষ ভাল নয়। এমন অবস্থায় বন্ধের জন্য এ দিন ক্ষতি হল। বন্ধ তোলার জন্য নানা জায়গায় বলা হলেও ফল হয়নি।” তাঁরা আরও বলেন, “অভিযুক্তেরা ধরা পড়ুক, আমরাও চাই। কিন্তু বন্ধ না করে অন্য ভাবে প্রতিবাদ করতে পারত।”
বন্ধ সমর্থক উজ্জ্বল মণ্ডল, আলাউদ্দিন শেখরা অবশ্য বলেন, “কান্দরা গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি হতাশা থেকে এই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।” নিহত নেতার অনুগামীরা প্রায় সাতশো জনের সই সম্বলিত একটি অভিযোগপত্রে কেতুগ্রাম ১ বিডিও-কে জানিয়েছেন, অনির্দিষ্ট কালের জন্য এই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। কৃপাসিন্ধু সাহার অনুগামীদের অভিযোগ, খুনে অভিযুক্তেরা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে ক্রমাগত ‘হুমকি’ দিচ্ছে। প্রশাসন ইচ্ছে করে খুনিদের আড়াল করছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, কৃপাসিন্ধু ছিলেন দলের স্থানীয় বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের অনুগামী। অন্য দিকে, অভিযুক্ত হারা শেখ দলের ব্লক সভাপতি রত্নাকরবাবুর ‘কাছের লোক’। খুনের ঘটনার পরে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিধায়কের অনুগামীরা। সেই সময়ে ব্লক সভাপতির সঙ্গে খুনিদের ‘যোগাযোগ’ রয়েছে অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে কান্দরায় রাস্তায় ফ্লেক্সও টাঙানো হয়েছিল। সেই রত্নাকরবাবুই এ দিন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান। উল্টো দিকে, কেউ কেউ আন্দোলনকারীদের ‘বিপথগামী’ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিধায়ক। তৃণমূলের কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রতবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, এই আন্দোলনের পিছনে দলের কোনও হাত নেই।
পুলিশ জানায়, এই খুনের ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-কে দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশের তরফে ইতিমধ্যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.