অভিযোগ অডিট রিপোর্টে
এইচআইভি-র সাড়ে তিন লক্ষ ওষুধ নষ্ট পড়ে থেকেই
রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের গুদামে পড়ে থেকে এইচআইভি চিকিৎসার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ওষুধ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারে ওই এক-একটি ওষুধের দাম কমবেশি দশ টাকা। ‘জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ বা ন্যাকোর নির্দেশে করা একটি অডিট রিপোর্টে এই তথ্য ধরা পড়েছে।
অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই নষ্ট হওয়া ওষুধের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত মাদকাসক্তদের ওষুধ রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ। আর এইচআইভি-আক্রান্ত শিশুদের ওষুধ রয়েছে প্রায় দুই লক্ষ। রাজ্য এডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (স্যাক্স)-র হিসেব অনুযায়ী, ওই ওষুধ কিনে সরবরাহ করেছিল ‘জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ বা ন্যাকো।
স্যাক্স কর্তারাই স্বীকার করেছেন, কোনও হাসপাতালে ওই ওষুধ এত মজুত করা হয়েছিল, যা দিয়ে ১৫১ মাস বা প্রায় বারো বছর কাজ চালানো যেতে পারে। আবার কোনও হাসপাতালে সেই ওষুধেরই প্রায় তিন বছরের ‘স্টক’ মজুত করা হয়েছিল। স্যাক্স থেকেই স্বীকার করা হয়েছে, ওই বিপুল ‘স্টক’-এর পুরোটারই যে মেয়াদ প্রায় উত্তীর্ণ হতে চলেছে, সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কেউ তা খেয়াল করারই প্রয়োজন বোধ করেননি।
স্যাক্স-এ কেনাকাটা নিয়ে প্রচুর অর্থ নয়ছয় হচ্ছে বলে খবর পেয়ে ২০১০-এর এপ্রিলে একটি অডিট সংস্থাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয় ন্যাকো। সম্প্রতি ওই অডিট সংস্থার চূড়ান্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়েছে। তাতে অভিযোগ, প্রয়োজনের কথা না-ভেবে অতিরিক্ত ওষুধ কেনায় ওই বিপুল পরিমাণ ওষুধ নষ্ট হয়েছে।

কত ওষুধ নষ্ট

এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের
হাসপাতাল নষ্ট ওষুধের পরিমাণ*
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ দেড় লক্ষ
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ২০ হাজার
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ২২ হাজার
মাদকাসক্ত এইচআইভি রোগীদের
স্যাক্সের স্টোর দেড় লক্ষের বেশি
* ট্যাবলেট
কী ভাবে, কেন প্রয়োজন ছাড়া এত ওষুধ কেনা হল? স্যাক্স সূত্রেই খবর, দক্ষিণ কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ‘ফি’ দিয়ে সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলেন স্যাক্সের কিছু শীর্ষকর্তা। সংস্থার কাজ ছিল, রাজ্যে বিভিন্ন বয়সের এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নির্ণয় করা। তারা যে পরিসংখ্যান দিয়েছিল সেটি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ন্যাকোকে জানিয়েছিল। সেইমতো ন্যাকো ওষুধ পাঠায়। পরে ধরা পড়ে, ওই সংস্থা মনগড়া তথ্য দিয়েছে। ন্যাকোর কর্তাদের অভিযোগ, রাজ্যে যত এইচআইভি-আক্রান্ত আছেন তা তিন গুণ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। এর পিছনে স্যাক্স-এর কিছু কর্তা এবং কয়েকটি ওষুধ সংস্থার মদত ছিল বলে অভিযোগ।
অডিট সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের নভেম্বরে তদন্তকারীরা দেখেন, স্যাক্স-এর ভাঁড়ারে রাখা ১ লাখ ৬০ হাজার ‘ওরাল সাবস্টিটিউশন থেরাপি ড্রাগ’ (০.২ মিলিগ্রাম)-এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার মুখে। ওই বিপুল পরিমাণ ওষুধের শেষ পর্যন্ত কী হল, তা ন্যাকোর তদন্ত করে দেখা উচিত বলে সুপারিশ করেছেন অডিট কর্তারা। তাঁদের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘রিজিওন্যাল পেডিয়াট্রিক সেন্টার’, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মতো জায়গায় এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের বিপুল ওষুধ স্টক করা হয়েছিল। সব ওষুধেরই মেয়াদ ছিল ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
স্যাক্স-কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, ফেব্রুয়ারিতে পুরো ‘স্টক’ নষ্ট হয়ে যাবে দেখে কিছু ওষুধ বিভিন্ন জায়গায় বিলি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথায়, কত ওষুধ, কবে বিলি করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এখনও অডিট সংস্থাকে দেখাতে পারেননি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় ওষুধ পড়ে আছে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে বসেছে বলে ন্যাকোকে বার বার জানানো সত্ত্বেও তারা ওষুধগুলো অন্য জায়গায় পাঠিয়ে ব্যবহার করার কোনও চেষ্টাই করেনি। উল্টে মণিপুর থেকে আরও কিছু প্রায় মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধ এ রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এ ব্যাপারে, ন্যাকোর জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) ভারতভূষণ রেওয়ারির পাল্টা অভিযোগ, “মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে স্যাক্স আমাদের এর মধ্যে কোনও তথ্য জানায়নি।” তাঁর আরও প্রশ্ন, “৬ মাসের বেশি ওষুধের স্টক তো এক সঙ্গে নেওয়ারই কথা নয়। স্যাক্স-এর অফিসারেরা বারো বছর বা তিন বছরের স্টক নেন কী করে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.