|
|
|
|
রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতিই |
তরাই-ডুয়ার্সে পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ চাইল আরএসপি |
অনুপরতন মোহান্ত • তপন (দক্ষিণ দিনাজপুর) |
গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনে (জিটিএ) তরাই-ডুয়ার্সের এলাকা অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার বিরোধিতা করল আরএসপি-ও। তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার দাবিতে আন্দোলনের ডাকও দিল তারা। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের রবীন্দ্র ভবনে শুক্রবার দলের নতুন রাজ্য সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পরে ক্ষিতি গোস্বামী তাঁদের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
ক্ষিতিবাবু বলেন, “শুধু পাহাড়ের তিনটি মহকুমা নিয়েই জিটিএ হোক। তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়তে হবে। যাতে ওই এলাকার জনজাতির সার্বিক উন্নয়ন ঘটে। ইতিমধ্যেই আমরা শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”
তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার দাবিতে তাঁরা ধারাবাহিক আন্দোলন করবেন বলেও জানান ক্ষিতিবাবু। তবে আন্দোলনের রূপরেখা এখনও ঠিক করেনি আরএসপি। দলীয় সূত্রের খবর, কী ভাবে আন্দোলন
হবে, তা ঠিক করতে শীঘ্রই তরাই-ডুয়ার্সে যাবেন ক্ষিতিবাবু। প্রসঙ্গত, বয়সজনিত কারণে দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ায় কার্যনির্বাহী রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতিবাবু এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য সম্পাদকের
পূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন।
জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার বিরোধিতায় জোরদার আন্দোলনে নেমেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। পরিষদ সূত্রের খবর, তরাই-ডুয়ার্সকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার দাবিতে তারা আন্দোলনের কথা ভাবছে। সিপিএম, কংগ্রেসও
জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির বিরোধী। পাশাপাশি, পরিষদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটিকে নানা ভাবে সাহায্য করছে আইএনটিইউসি-ও।
এই অবস্থায় তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার দাবিতে আন্দোলনের ডাকে ‘স্বস্তি’ পেয়েছেন আরএসপি-র স্থানীয় নেতাদের অনেকেই। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এক সময়ে তরাই-ডুয়ার্সের চা-বলয়ে আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন জোরদার ছিল। গত ৫ বছরে অনেক এলাকায় তা দুর্বল হয়েছে। তবে ডুয়ার্সের বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনও আরএসপি-র শক্তপোক্ত সংগঠন রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার আসনটি দখলে রেখেছিল আরএসপি। বিধানসভায় অবশ্য তাদের ফল ভাল হয়নি। আলিপুরদুয়ারে হারতে হয়েছে স্বয়ং ক্ষিতিবাবুকেই। তার উপরে জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার বিরোধিতায় দল রাস্তায় না-নামায় আদিবাসী-সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছে গিয়েও স্থানীয় নেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল। আলিপুরদুয়ারের আরএসপি-র এক প্রবীণ চা শ্রমিক নেতা জানান, তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে আলাদা
উন্নয়ন পর্ষদের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করলে ফের আদিবাসী-সহ সব সম্প্রদায়ের সিংহ ভাগ মানুষকে পাশে পাওয়া যাবে। আন্দোলন দানা বাঁধলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা দলকে বাড়তি ‘অক্সিজেন’ জোগাবে বলেও নেতা-কর্মীদের বড় অংশের আশা।
ক্ষিতিবাবু অবশ্য দাবি করেন, তরাই-ডুয়ার্স উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবির পিছনে ওই এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনাই তাঁদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, “আমরা বরাবরই গোর্খাল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মার্ক্সবাদেও স্বীকৃত। তরাই-ডুয়ার্স এলাকার বিভিন্ন জনজাতি ও তাদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে সেখানে এক জটিল অবস্থা রয়েছে। সেখানেও স্বশাসন দিয়ে শান্তি ফেরানো হোক। কোনও ভাবেই এ রাজ্যকে খণ্ডিত করা চলবে না।”
রাজ্য সম্মেলনে পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে দলের ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র লক্ষ্যে বেশ কিছু আন্দোলনের কর্মসূচিও নিয়েছেন আরএসপি নেতৃত্ব। ক্ষিতিবাবু বলেন, “প্রতিটি ঘরে দলের কর্মীরা বেশ কিছু প্রশ্ন নিয়ে হাজির হবেন। তা থেকে মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের পাশাপাশি মনোভাবের আদানপ্রদানের মাধ্যমে দলের দুর্বলতা সংশোধনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। প্রশ্নগুলি কী হবে, তা পরে ঠিক করা হবে।”
এ প্রসঙ্গে সম্মেলনের সাংগঠনিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘকাল সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতার ‘আংশিক অধিকারী’ হওয়ার ফলে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে ‘ম্যানেজার’ সুলভ মানসিকতা বাসা বেঁধেছে। এই ধরনের নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের রাজ্য সম্মেলন থেকে ৫১ জনের নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হয়েছে। বয়সের ভারে অব্যাহতি চাওয়ায় দেবব্রতবাবু, অমর চৌধুরী, গীতা সেনগুপ্তদের পাশাপাশি মোট ১৬ জনকে এ বারের রাজ্য কমিটিতে রাখা হয়নি। নতুন মুখ ১৬ জন। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডির বিধায়ক নর্মদা রায় এ বারে রাজ্য কমিটিতে ঢুকেছেন। |
|
|
|
|
|