বিক্ষোভ প্রতিবাদে মুখর ছাত্র-শিক্ষক-বিশিষ্টজনেরা
-মেলে ‘সরকার-বিরোধী’ আপাত-নিরীহ রসিকতা বন্ধুদের পাঠানোর ‘দায়ে’ এক অধ্যাপক গ্রেফতার হয়েছেন। শিক্ষাজগত তো প্রতিবাদে সরব হবেই। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রতিবাদের ঢেউ উঠল সমাজের বিভিন্ন স্তরে। এবং তার বেশির ভাগই, ঘটনাচক্রে আছড়ে পড়ল সেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দেওয়ালেই।
শুক্রবার দিনভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মিছিল, স্লোগান, অবস্থান-বিক্ষোভ হয়েছে। নেটওয়ার্কিং সাইটে সকাল থেকেই প্রতিবাদে মুখর লোকজন। আর মুখর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা ‘পরিবর্তন-পন্থী’ সঙ্গীরা। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন তৃণমূলের ‘বিতর্কত’ সাংসদ কবীর সুমন, তেমনই রয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন। দিনের শেষে ধৃত অধ্যাপক জামিনে মুক্তি পেলেও তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলা নিঃশর্তে প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী দিনের জন্য কর্মসূচিও ঘোষণা করে রেখেছে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সংগঠনগুলির একাংশ। তারা অবশ্য কেউই ‘তৃণমূল-প্রভাবিত’ নয়। ‘তৃণমূল-পন্থী’ অধ্যাপকেরা বরং এ দিন মন্তব্য করেছেন, অম্বিকেশবাবু অন্যায় করেছেন এবং তাঁর কাজকর্মে অধ্যাপক সমাজের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে যাচ্ছে! নিজাম প্যালেসে সাংবাদিক সন্মেলন ডেকে তাঁরা জানিয়ে দেন, ‘কুৎসা ও অপপ্রচার’ করতেই ওই কাজ করা হয়েছিল। এটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
একজোট

সহকর্মীদের সঙ্গে পা মেলালেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি ‘সোনার কেল্লা’র যে সংলাপ ব্যবহার করে ওই ‘কার্টুন’ (মতান্তরে ‘কোলাজ’) বানানো হয়েছে, তা তাবৎ বাঙালির পরিচিত। সকলেই সেটিকে বরাবর ‘উইট’ বা বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা বলেই জেনে এসেছেন। তার যে এই পরিণতি হবে, সেটা কেউই ভাবেননি। তা থেকেই যাবতীয় প্রতিবাদের সূত্রপাত। কৌশিক বলেছেন, “এই প্রবণতা বিপজ্জনক। আমরা শঙ্কিত হচ্ছি।” তেমনই ‘মগজে কারফিউ’ গানের রচয়িতা সাংসদ সুমন বলেছেন, “এটা তো ভাবতেই পারছি না! মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী না-হয় ব্রিগেডে একটা সমাবেশ করে বলে দিন, রাজ্যবাসী কী কী করতে পারবেন আর কী কী করতে পারবেন না! সেগুলো আগে থেকে জানা থাকলে নিজেদের আচরণ ঠিক করে নেওয়া যাবে।” অধ্যাপক অভিরূপ সরকারের কথায়, “কার্টুনের একটা দিক হল প্রতিবাদ। কিন্তু প্রতিবাদের দিকটাকে কোনও ভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। যদি প্রতিবাদের ওপর সরকারি তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়, তা হলে সেটাকে স্বৈরতন্ত্র বলতেই হবে!” শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যালের বক্তব্য, “মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ‘নষ্ট দল’ সিপিএম-কে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা পরিষ্কার করছেন। গণতন্ত্রের জায়গায় স্বৈরতন্ত্রকেই স্থাপন করা হচ্ছে।” সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “এসব খবর শুনে শিহরিত হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় আছে? ভেবে আশঙ্কা হচ্ছে, দেশটা শেষ পর্যন্ত কি স্বৈরাচারী শাসকদের হাতে চলে যাবে? মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা বলে কি কিছু থাকবে না?”
যাঁর সৃষ্টি নিয়ে এই বিতর্ক, সেই সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় অবশ্য নিজে ‘সৃষ্টি’টি দেখেননি। সেই কারণেই তিনি সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আনন্দবাজারকে সত্যজিৎ-পুত্র বলেছেন, “আজকাল তো ফেসবুক, ইউ-টিউবে অনেক কিছুই দেখা যায়। এগুলো বন্ধ করার তো কোনও উপায় নেই! সেটা করতে গেলে তো সারাদিন সেটাই করতে হয়। যাঁদের নিয়ে এগুলো হয়, তাঁরাই বা কী করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন!” তাঁর কথায়, “এটা গণতন্ত্রের উপর বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ কিনা, তা নিয়ে মন্তব্য না-করাই ভাল। আমি নিজে ব্যাপারটা দেখিনি। না-দেখে মন্তব্য করা উচিতও নয়।”
এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সদস্যেরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিবাদ-মিছিল বার করেন। প্রতিবাদ জানায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংগঠন ‘ডিএসএফ’। সংগঠন সদস্যরা গণতন্ত্রের পক্ষে এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোস্টার লিখে রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হন। ঘটনার নিন্দা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারদের সংগঠনও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষ অবশ্য বলেছেন, “আইন আইনের পথে চলবে।” সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটে অবস্থান-বিক্ষোভ করে। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০-৫০ জন ছাত্রছাত্রী মশাল মিছিল করেন। মিছিলে স্লোগান ওঠে, ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করা হল কেন? রাজ্য সরকার জবাব দাও’, ‘তৃণমূল সরকার, ফ্যাসিস্ত সরকার’। ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের বাইরেও মিছিল করেন।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও সরকার-বিরোধী পোস্টার লেখেন। ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ, রাজাবাজার ও আলিপুর ক্যাম্পাসে এসএফআই সমর্থিত ছাত্রছাত্রীরা মিছিল ও অবস্থান বিক্ষোভ দেখান। এসএফআইয়ের কলকাতা জেলা সম্পাদক সাগ্নিক সেনগুপ্ত বলেন, “তৃণমূল এখন আমাদের অনেক ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয় না। যেখানে যেখানে পেরেছি, সেখানে প্রতিবাদ করেছি।” এসএফআই জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার কলকাতার ১৩টি জায়গায় তারা অবস্থান বিক্ষোভ করবে। অধ্যাপককে গ্রেফতারের ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিবাদ-কর্মসূচি নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’। ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে দায়ের-করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, আগামী, বুধবার, ১৮ এপ্রিল ক্যাম্পাসের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী এবং ক্যাম্পাসের বাইরের সাধারণ মানুষকে নিয়ে মিছিল বার করা হবে। শিক্ষকদের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রতিবাদ-কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে। অধ্যাপক অম্বিকেশবাবুকে ‘নিগ্রহে’র ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’। পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও (ওয়েবকুটা) এই ঘটনার নিন্দা করেছে এবং অম্বিকেশবাবুর বিরুদ্ধে দায়ের-করা যাবতীয় মামলা নিঃশর্তে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.