|
|
|
|
কালবৈশাখীর এই দাপট মনে পড়াচ্ছে আয়লাকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
মঙ্গলবারও কালবৈশাখী। তবে তার দাপট সোমবারের তুলনায় সামান্য কিছুটা কম।
গত সপ্তাহে বুধ ও বৃহস্পতিবার কালবৈশাখীর মেঘ ভেঙে পড়েছিল কলকাতার উপরে। দু’টি ঝড়ের গতিবেগ ছিল যথাক্রমে ঘণ্টায় ৯৬ এবং ৭০ কিলোমিটার। বিরল সেই ঘটনাটা ঘটল এ সপ্তাহের গোড়াতেও। সোমবারের ঝড় ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের। আর মঙ্গলবার তা ছিল ঘণ্টায় ৮৬ কিলোমিটার। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ব্যাখ্যা, ঝাড়খণ্ডের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।
পরপর এই কালবৈশাখীতে কলকাতা, বিধাননগর, রাজারহাট এবং হাওড়া মিলিয়ে প্রায় ৫০০ গাছ উপড়েছে। ডাল ভেঙেছে আরও অন্তত হাজারখানেক গাছের। কয়েক বছর আগের আয়লাতেও এত গাছ পড়েনি কলকাতা এবং তার লাগোয়া এলাকায়। গাছ পড়ে বন্ধ হয়েছে ট্রেন ও যান চলাচল। সোমবারের ঝড় বিমানবন্দরের রানওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিমানের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। মঙ্গলবারের ঝড়ে উড়ে গেল একটি হ্যাঙ্গারের টিনের চাল। ১৬ নম্বর ওই হ্যাঙ্গারের ভিতরে রাখা ছিল দু’টি এটিআর বিমান। সেগুলির যন্ত্রাংশ বাঁচাতে ছাউনি চাপা দেওয়া হয়। ঝড়ের দাপটে কলকাতায় নামতে না পেরে ঘুরে যায় তিনটি বিমান। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল কার্যত স্তব্ধ থাকে। ৪৫ মিনিট ধরে শহরের মাথার উপরে চক্কর কাটে পাঁচটি বিমান। শুধু বিমানই নয়, ওভারহেড তারে গাছ পড়ে মঙ্গলবার রাতে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিভিন্ন রাস্তায় উপড়ে যাওয়া গাছ কাটতে হিমশিম খেয়ে যান পুরসভার কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকা দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকে। |
|
সোমবার সন্ধ্যার কালবৈশাখী ঝড়ে রাজারহাটের নারায়ণপুর-বটতলায় বিমানবন্দরের অগ্নি-নির্বাপণ
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গায়ে ভেঙে পড়ে শতাব্দী-প্রাচীন এই বটগাছ। ছবি: আর্যভট্ট খান। |
তীব্র গতির কালবৈশাখী ঝড় কেড়ে নিয়েছে মানুষের প্রাণও। সোমবার রাতের ঝড়ে দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুর ও বিষ্ণুপুরে দু’জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, বারুইপুরের শঙ্করপুর এলাকার বাসিন্দা শঙ্কর মণ্ডল (৬৩) ঝড়ের সময়ে বাড়ির আমবাগানে গিয়েছিলেন। আম গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে তিনি মারা যান। অন্য ঘটনায় বিষ্ণুপুরের নেপালগঞ্জে অটোচালক অসিত দলুই (৪৮) অটো চালিয়ে ঝড়ের সময়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তার ধারের একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে তাঁর গাড়ির উপরে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান অসিতবাবু। গত সপ্তাহের কালবৈশাখীতে দেওয়াল চাপা পড়ে কলকাতায় মারা গিয়েছিলেন দু’জন।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানান, সোমবারের ঝড়ে কলকাতায় প্রায় ৮০টি গাছ ভেঙে পড়ে। দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা, বাঁশদ্রোণী, যোধপুর পার্ক, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, শরৎ বসু রোড, কেয়াতলা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে যান চলাচল বেশ কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত হয়েছিল। এ দিন নাকতলায় ঝড়ে একটি বাড়ির ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। দেবাশিসবাবু বলেন, “আজকের ঝড়ে দক্ষিণ কলকাতা ও দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকা বিপর্যস্ত হলেও মধ্য এবং উত্তর কলকাতায় ঝড়ের প্রকোপ সে ভাবে পড়েনি।” বিধাননগরে এ দিন অন্তত ২০টি গাছ পড়েছে বলে জানান বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা। গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায় বেলেঘাটা সংলগ্ন ইএম বাইপাসও।
ঝড়ে গাছ উপড়ে এবং বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ শহরতলির বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সোমবারের ঝড়ের পরে বাঁশদ্রোণী, নাকতলা এবং টালিগঞ্জের বহু জায়গা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল। স্থানীয়েরা সিইএসসি-র বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করলেও সংস্থার কর্তারা জানান, সোমবার রাত থেকেই ওই সব এলাকায় তাঁদের কর্মীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ শুরু করেছেন। তবে, কালবৈশাখী থেকে এখনই কলকাতা রেহাই পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলেছেন, বিহার-ঝাড়খণ্ডের উপর থেকে ঘূর্ণাবর্ত সরে না গেলে পরিস্থিতির কোনও বদল হবে না। |
|
|
|
|
|