পথ যেন না শেষ হয়, প্রার্থনা গ্রামের
তারকারা ভক্তদের ক’জনকেই বা চেনেন?
কোন ছোট্ট গ্রামে, কোনও খড়ের চালের বাড়িতে বসে কে তাঁর নাম জপে চলেছে, তার খোঁজ রাখেন কি তারকা? রাখা সম্ভব?
কিন্তু তা বলে ভক্তেরাই বা মনের মানুষটিকে ভোলে কী করে? কত বছর তো পেরিয়ে গেল। ভুলতে পেরেছে কি মণ্ডল গ্রাম? সুচিত্রাকে?
মালম্বা থেকে মেমারি যাওয়ার রাস্তার ধারে ছোট্ট গ্রাম মণ্ডল। দীর্ঘ দিন জনতা যাঁকে এক বারও চোখের দেখা দেখেনি, শুক্রবার সারা দিন টিভি যাঁর রুপোলি স্মৃতি আঁকড়ে থেকেছে, মণ্ডল গ্রামও মজে রইল তাতেই। তবে টিভির পর্দায় চোখ রেখে নয়। একেবারে নিজেদের মতো করে নায়িকার ৮২তম জন্মদিন পালন করল গোটা গ্রাম।
এই কিন্তু প্রথম নয়। কমবেশি বিশ বছর ধরে অভিনেত্রীর প্রতিটি জন্মদিনই পালন করে আসছে স্থানীয় উত্তম-সুচিত্রা ফ্যান ক্লাব। সেই ক্লাবের সম্পাদক শরৎ কোঙার আদতে পরিবহণ ব্যবসায়ী। বর্ধমান-মেমারি রুটে চলে তাঁর বাস বিশ্ববন্দিতা। বাসে সুচিত্রার ছবি। সেই বাসে বেজে ওঠে সুচিত্রা-অভিনীত ছবির গান। আর বাসে উঠলেই যাত্রীদের হাতে মিষ্টির প্যাকেট। শেষে মেমারি বাসস্ট্যান্ডে জন্মদিন পালন।
নিজস্ব চিত্র।
এমনটাই হয়ে এসেছে এত দিন। কিন্তু এ বারই প্রথম ‘গ্রামবাসীদের চাপে’ এই অনুষ্ঠান হল মণ্ডল গ্রামে। মেমারি বাসস্ট্যান্ডে বাস থেমেছে। তার পরে সেখান থেকে সোজা মণ্ডল গ্রাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই এ সব জানা গেল শরৎবাবুর কথায়।
গুড ফ্রাইডের সকালে, গ্রামের জলকাদা ভরা সভাস্থলে পৌঁছতেই দেখা গেল, তখনও সকলের ছবি মঞ্চে তোলা হয়নি। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ে ভরে গিয়েছে সেই জায়গা। একে একে সুচিত্রা, উত্তমের ছবি মঞ্চে বসানো হল। বসানো হল গ্রামের জামাই, খ্যাতনামা নাট্যকার প্রয়াত ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিও।
এর পরেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে সুচিত্রার ছবিতে ফুল দিতে বলা হল। সে কী হুড়োহুড়ি! নিমেষে ঢাকা পড়ে গেল সুচিত্রার ছবি। বারে বারে ফুল সরিয়ে সামনে আনতে হয়েছে চিরদিনের সেই হাসিমুখ।
অনুষ্ঠানে ছিলেন উত্তমকুমার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী সংসদের বর্তমান সম্পাদক, অভিনেতা সাধন বাগচি। তিনি বলেন, “প্রতি বছরই এই অনুষ্ঠানে আমি যোগ দিতে আসি সব কাজ ফেলে। না হলে যেন মনে হয়, কী আনন্দ হারালাম। আজও সুচিত্রা সেনের জন্মদিন পালনের এই উন্মাদনা দেখে আমার মনে হচ্ছে, আমরা যেন সেই অতীতেই বাস করছি। নিয়মিত রিলিজ করছে উত্তম-সুচিত্রা অমর জুটির ছবি। আর মানুষ দলে দলে সে সব দেখছেন দিনের পর দিন।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে একে একে স্মরণ করা হয়েছে উত্তমকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায় থেকে বিকাশ রায়, তরুণকুমার, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রেমাংশু বসুদের। সাধনবাবু বলেন, “টিভিতে যখন আমরা সে কালের ওই ছবিগুলি দেখি তখনই বুৃুঝতে পারি, ওঁরা কত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন।” সভায় শরৎবাবু একটি চিঠি পড়েন। উত্তম-সুচিত্রা ফ্যান ক্লাবের তরফে সেটি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা। এই চিঠিতে ফ্যান ক্লাবের সম্পাদকের দাবি, উত্তম-সুচিত্রার জুটিতে মোট ৩০টি ছবি হয়েছিল। সুচিত্রা সেন আরও ৩০টি ছবিতে অন্যান্য অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। অবিলম্বে সেই ৬০টি ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে, তার ডিভিডি সংস্করণ প্রকাশে উদ্যোগী হোক সরকার। সমরবাবুর কথায়, “৬০টি ছবির মধ্যে অনেকগুলিই হারিয়ে গিয়েছে। অন্যগুলো বাঁচাতে পারে রাজ্য সরকার।”
অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে এসেছে ভৈরববাবুর কথাও। স্থানীয় মূলগ্রামের বাসিন্দা ভৈরববাবু থাকতেন মণ্ডলগ্রামে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে। সেই বাড়ির বৈঠকখানায় বসে তিনি কত পালা লিখেছেন তার হিসেব নেই। ওই পালাগুলিকে প্রথমে গ্রামের অভিনেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নিজে অভিনয় করতেন। পরে সেগুলিকে আরও ঘষে-মেজে দিতেন কলকাতার বিভিন্ন যাত্রা সংস্থাকে। মঞ্চে এ সব জানিয়েছেন গ্রামেরই এক প্রবীণ অভিনেতা গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
সন্ধ্যায় পর্দা টাঙিয়ে দেখানো হচ্ছে সুচিত্রার দীপ জ্বেলে যাই, হারানো সুর, সপ্তপদী। চলবে রাতভর।
এই পথ যেন না শেষ হয়...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.